জোট শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারবো না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমারও বিজয়ের গ্যারান্টি নেই। আমাকেও চার জনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ জিতে যায়, আমাকে মানতে হবে। এখানে হার-জিতের প্রশ্ন হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নিয়মিত বিফ্রিংয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠানিকভাবে আসন ভাগাভাগি হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের। নির্বাচনে শরিকদের আপাতত ৭টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাশীনরা। বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। দলীয় ও জোট সূত্রে জানা গেছে, আপাতত জাসদকে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে তিনটি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছেড়েছি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও সাতক্ষীরা-১ আসনে মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান। জাসদকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে রেজাউল করিম তানসেন ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন। পিরোজপুর-২ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীরা প্রত্যাহারের শেষ দিন অর্থ্যাৎ আগামীকালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া আসন সংখ্যা বাড়তেও পারে।
গতকাল দলের নিয়মিত বিফ্রিংয়ে আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন শরিক দলের যত নেতা আছেন, তাদের সবার এবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে। তারা যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কারও ব্যাপারে কোনও বাধা নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবে। ১৪ দলে কিছু নৌকা দেবো। এরই মধ্যে আমি ১৪ দলের সমন্বয়ককে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন তারা সবাই করুক, তাদের দলের প্রতীক নিয়ে, সাতটা নির্বাচনি এলাকায় আমরা নৌকার ছাড় দিতে পারবো। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকালই (বুধবার) আমরা জানিয়ে দিয়েছি। তিনি তো গণমাধ্যমকেও বলে দিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। সবাই শুধু বিভিন্ন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলেন। এই সময়টাকে, আমাদের এই অ্যালায়েন্সটাকে আমরা যতটা রাজনৈতিক মূল্য দিচ্ছি, আসনের ব্যাপারটা কম।
বিফ্রিংয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির ব্যাপক সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ সময় টিআইবি’কে বিএনপির শাখা সংগঠন বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে সন্ত্রাস সহিংসতা হচ্ছে, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর গুজবের ডালপালা বিস্তার করা হচ্ছে। মানবাধিকারের প্রবক্তা টিআইবি বিএনপির ভাবাদর্শের প্রবক্তা হয়ে চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে আছে। টিআইবি বিএনপির শাখা সংগঠন হয়ে গেছে।
টিআইবির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দেশে এখন যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন বলে দাবি করেন, যারা মানবাধিকারের প্রবক্তা, যেমন টিআইবি... ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারপরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কেন হবে না, এ প্রশ্নের উত্তর টিআইবির কাছে পাওয়া যাবে না। তারা জেনেশুনেই এটা করছে। আমরা টিআইবির কাছে জানতে চাই, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে কী বুঝায়? ২৮টি নিবন্ধিত দল অংশ নিচ্ছে, বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, এর অর্থটা কী? টিআইবি বিএনপির শাখা-সংগঠন। তারা একই সুরে কথা বলে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি ও তার দোসরদের একদিকে সন্ত্রাস-সহিংসতা, অন্যদিকে গুজব ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।
বিএনপি নেতা মঈন খানের ‘ভাগাভাগি নির্বাচন’ এমন বক্তব্যের জবাবে ওবাদুল কাদের বলেন, কিসের ভাগাভাগি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কোনো মূল্যে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে, একটা রেকর্ড আমরা দেখাতে চাই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ, কাজে নির্বাচন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করায় আমাদেরও দায়িত্ব আছে।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রাণ। সরকারি দল হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। যে কোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করে রেকর্ড করতে চায় আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের আচরণবিধি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলোকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। আমাদের যেসব প্রার্থী প্রার্থিতা হারিয়েছে, আমরা কারও ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার কোনো চেষ্টা করিনি এবং করব না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে নির্বাচন কমিশনের নেওয়া ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সমর্থন করেছে। নির্বাচন কমিশনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করছে না আওয়ামী লীগ।
বিজয় দিবসের কর্মসূচির বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে। ১৭ ডিসেম্বর আলোচনা সভা হবে। ১৮ ডিসেম্বর বিজয় শোভাযাত্রা করা হবে। সে দিন একযোগে সারা দেশে বিজয় শোভাযাত্রা করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।