আসন ভাগাভাগিতে অসন্তুষ্ট, বাড়িয়ে চায় ১৪ দলের শরিকরা
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
১৪ দলের আসন ভাগাভাগির পর এখন এ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। এখন জোটের কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতা এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। জোট সূত্র জানিয়েছে, আসন ভাগাভাগিতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না জোট শরিকরা। আসন বন্টন নিয়ে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে জোটের নেতাদের মধ্যে। আসন বন্টন নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলে অনেকে আসন বাড়িয়েও চাচ্ছেন। গত ৪ ডিসেম্বর জোট নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আসন বন্টর নিয়ে বৈঠকের পর দফায় দফায় জোটের সমন্বয়কের সঙ্গে বৈঠক করেন জোটের শরিকরা। সেখানেও তারা আসন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ জোটের আসন নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না শরিকরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠানিকভাবে আসন ভাগাভাগি হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের। নির্বাচনে শরিকদের আপাতত ৭টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ। ১৪ দলীয় জোট থেকে মাত্র তিন দল নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পাচ্ছে বলে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। দলীয় ও জোট সূত্রে জানা গেছে, আপাতত জাসদকে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে তিনটি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছেড়েছি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও সাতক্ষীরা-১ আসনে মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান। জাসদকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে রেজাউল করিম তানসেন ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন। পিরোজপুর-২ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীরা প্রত্যাহারের শেষ দিন অর্থ্যাৎ আগামীকালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া আসন সংখ্যা বাড়তেও পারে।
তবে গত দুই মেয়াদে সংসদে চট্টগ্রাম-২ আসনে জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশন থেকে সংসদ সদস্য থাকলেও এবার ওই আসনে এখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয় নি। তবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের শরিক দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন যে, ওই আসনটিতে তাদের দলকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ওই আসনে ছাড় দিয়ে গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁকে ফোন করেছেন। এ বিষয়ে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাকে আজকে দুপুরে ফোন করে চট্টগ্রাম-২ আসনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই চট্টগ্রাম-২ আসন ঠিক আছে।’ তিনি বলেন, ‘গত ৪ঠা ডিসেম্বরই তো আমার আসন নিশ্চিত করা হয়।’ এখন আসন বাড়ানোর পর আর কোন চাওয়া-পাওয়া রয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় আর একটি আসন চাচ্ছি।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনি তার দলের কোন আপত্তি নেই বলে ইনকিলাবকে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরাও বলছি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা বলেছি, এটা থাকা দরকার।’
১৪ দলীয় জোট সূত্র জানিয়েছে, মোট-৮টি আসনে ছাড় দেওয়ার পরও আরো আসন বাড়িয়ে চায় জোটের শরিক দলগুলো। এর মধ্যে- জেপি একটি আসনে ছাড় চায়, এ ছাড়াও তরিকত ফেডারেশসহ আরো কয়েকটি শরিক দল আসনে ছাড় চান। জোট সূত্র জানিয়েছে, জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি না করেই গত ২৬ নভেম্বরে ২টি বাদে ২৯৮টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাশীন দলটি। সে সময় দুই আসনের মধ্যে কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী দেয় নি দলটি। উপরন্তু বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনে ‘ভোটার নিশ্চিত’ ও ‘প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ’ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। যা নিয়ে শুরু থেকেই জোটের বেশ কয়েকটি শরিক দলের আপত্তি ছিল। এ ছাড়া জোট শকিরদের না বলে প্রার্থী ঘোষণা ক্ষুদ্ধ হন জোটের শরিকরা। পরে গত ৪ঠা ডিসেম্বর জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হওয়া গণভবনের বৈঠকে আসন বন্টন নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেও আসন বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জোটের অনেক শরিকরা। একই সঙ্গে কয়েকজন জোটের শরিক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু জোট নেত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার না করার পক্ষে মত দেন। এতে বিপাকে পরে যান জোটের কেউ কেউ। জোট নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জোটের সমন্বক ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর সঙ্গে টানা কয়েকবার বৈঠক করেও আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এক মত হতে পারেন নি জোটের নেতারা। এর পর সর্বশেষ গতকালও জোটের কয়েকজন শরিক আসন বাড়ানোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
জাসদের সভাপতি হানানুল হক ইনুর আসন কুষ্টিয়া-২ এ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। তিনি এবার নির্বাচন করতে মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আওয়ামী স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, জোটের এই আসনে ছাড় পেলেও এখনও আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী নিয়ে বেশ বিপাকের মধ্যে রয়েছে জোটের শরিক দল জাসদ। আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুলের পক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে গত মাসে কামারুল আরেফিনের সঙ্গে কথা বলে ইনকিলাব। তখন তিনি বলেছিলেন, তাঁর পক্ষে সেখানে জোয়ার রয়েছে। দলের শীর্ষ জায়গা থেকে বসতে না বললে তিনি বসবেন না বলেও জানান। তাঁর ভাষ্য ছিল, সারা বাংলাদেশের সব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রত্যাহার করতে বললে আমিও প্রত্যাহার করবো। না হলে নয়। তিনি সে সময় দাবি করেছিলেন, ইনু (হাসানুল হক ইনু) সাহেব যে প্রতিক নিয়েই নির্বাচন করুন উনার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, ইনশাল্লাহ।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণআজাদী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে গণমাধ্যমের, আমরা বিনয়ের সঙ্গে আসন পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি। আমরা বলেছি, যে সাতটি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটা আরেকটু বাড়ানো দরকার এবং জোটের প্রার্থীর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছি। নির্বাচনী আসনের চূড়ান্ত তালিকা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঘোষণা করার আহ্বানও জানান তিনি। জোটের শরিকদের জন্য বেশি আসনে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয় বলে গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলে কিছু আসনে নৌকা মার্কা আমরা দেবো। জোট শরিকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, আমরা কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারবো না। জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু আরও কিছু আসনে ছাড় চেয়েছেন। এ বিষয়টি জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আরও অনেক শরিক দল আছে। তাদেরকে তো বোঝাতে হবে। কিন্তু যা হওয়ার হয়েছে। এর বাইরে আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
একটিও আসন না পেয়ে জোটের এক শরিক ইনকিলাবকে বলেন, আসন শুরু থেকেই জোটের সঙ্গে আছি। কিন্তু একটিও আসন দেওয়া হয় নি। একটুকু বলতে পারি, সে আসন দিয়েছে, তাতে এই জোটকে সম্মানিত করা হয় নি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চবি ছাত্রদলের প্রীতিভোজে হামলার অভিযোগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
ব্রাহ্মণপাড়ায় এইচএমপিভি সচেতনতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রচারণা
জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ভালুকা উপজেলা
গৌরনদীতে দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে শিশু খুনের ঘটনায় ২ নারীসহ গ্রেফতার ৪
কম্বোডিয়ার পরিবর্তে অনৈতিক কাজে সউদী পাঠানোর প্রস্তাব পাসপোর্ট আটকে রেখে টাকা দাবি
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় আবু সাঈদকে নিয়ে প্রশ্ন
কুষ্টিয়ায় দুষ্কৃতকারীদের হুমকিতে গড়াই খননকাজ বন্ধ,থানায় অভিযোগ
কাপ্তাই জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়ন সিবিএ কর্তৃক শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ
মুক্তা বাতাসে বাবরের জুমার নামাজ আদায়
তারুণ্যের উৎসবে আনন্দের ঢেউ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ
বিরলে ৫ দিন ব্যাপি চতুর্থ উপজেলা কাব ক্যাম্পুরীর শুভ উদ্বোধন
আটঘরিয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট
আ.লীগকে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মত নিষিদ্ধ করতে হবে: রাশেদ খাঁন
কুমিল্লা নগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদার গ্রেফতার
ঝিনাইদহে ১৬ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু
সরিষাবাড়ীতে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে নিহত ১ আহত ১০
চকরিয়াতে পৃথক ঘটনায় ৩ জন নিহত, আহত ৫
কালীগঞ্জে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ক্রিকেট টুনামেন্ট উদ্বোধন
ঈশ্বরগঞ্জে সার ও ভাউচারের গড়মিলে ২ ডিলারকে জরিমানা