বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। পৌষের প্রথম দিনেই দেশের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। গতকাল সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির বা তার চেয়ে কিছু বেশি থাকলেও ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি অনেকটা বেশি হচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
ঋতুবৈচিত্রের হিসাব অনুযায়ী প্রকৃতিতে গতকাল থেকে শীতকাল শুরু হয়েছে। যদিও আরও মাস খানেক আগেই প্রকৃতিতে শিশির সিক্ত শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। তবে গত দু’তিনদিন ধরে তীব্র শীতে জনজীবন জবুথবু। সবচেয়ে কষ্টে আছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। প্রচণ্ড শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে এ ধরনের রোগী ভর্তি শুরু হয়ে গেছে অনেক হাসপাতালে। নেত্রকোনায় গত বুধবার বিকেল থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সেখানে শীতের প্রকোপ অসহনীয় হয়ে উঠছে। গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে। গ্রামের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
গতকাল সকাল থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তেমন দেখা মেলেনি। কনকনে ঠান্ডায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শহরে লোকজনের চলাচল অনেক কমে গেছে। নেত্রকোনা সদর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আবুল মিয়া বলেন, সপ্তাহখানেক ধরেই এখানকার মানুষ তীব্র শীত অনুভব করছে। তবে বুধবার থেকে হঠাৎ শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষক। অনেক পরিবার দরিদ্র হওয়ায় শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পর্যন্ত কিনতে পারছে না। সরকারিভাবেও কোনো শীতবস্ত্র দেওয়া হচ্ছে না। তাদের শীতবস্ত্র খুবই প্রয়োজন।
কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, শীতে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন দিনমজুর শ্রমিকেরা। প্রচণ্ড ঠান্ডায় তারা কাজে যেতে পারেননি। শীত নিবারণে বাড়ি বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে সময় পার চলছে। সদরের নির্মাণশ্রমিক কাশেম বলেন, ‘শীতের লাইগ্গ্যা বাড়ি থাইক্ক্যা বাইর ওয়াই কঠিন। এই শীতে কাম করবাম কেমনে। কনকইন্ন্যা শীতে বেকার অইয়া বইয়া রইছি।
হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীর পুরানহাটি গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, হাড়কাঁপানো শীত। সবাই কষ্টে আছে। অনেকে খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এখন শুরু হচ্ছে বোরো মৌসুম। শীত বেড়ে যাওয়ায় বীজতলা প্রস্তুত ও জমি চাষবাদ করতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের।
এদিকে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। এসব জেলায় মৃদু শৈতপ্রবাহ অনুভ’ত হচ্ছে। পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় গতকাল ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গতকাল এ জেলায় ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল। এ সময় দূরপাল্লার যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলাচল করে। দুপুর পর্যন্ত শহরের অনেক দোকান বন্ধ। বিজয় দিবসেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।
রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সকাল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বইছে উত্তরের হাওয়া। যা ঠান্ডার অনুভূতি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় জুড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বা এর চেয়ে নিচে নামলে বলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ মুহম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। বিচ্ছিন্নভাবে একটি স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও আমরা সেটাকে শৈত্যপ্রবাহ বলি না। ১০-ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা কমপক্ষে তিনদিন থাকতে হয়। পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে কিনা সেই সম্ভাবনাও থাকতে হয়। তবে আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমবে। তখন হয়তো শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। তবে শৈত্যপ্রবাহ না বইলেও বেশ ঠান্ডা পড়ছে। তাপমাত্রা যাই থাকুক শীতের অনুভূতি প্রবল।
কলাপাড়ায় ঘন কুয়াশার সাথে বেড়েছে শীতের প্রকোপ
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘন কুয়াশার সাথে বেড়েই চলছে শীতের প্রকোপ। তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষগুলো। বেলা বাড়লেও প্রচন্ড শীত ও হিমেল হাওয়ায় মিলছে না গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলো। তীব্র শীতে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া ও টাইফয়েডসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী