ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
অবৈধভাবে ইউরোপে মরণযাত্রা-১৯

টুরিস্ট ভিসায় প্রতারিত হয়ে দেনার দায় পাগল বহু যুবক

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ/ আবুল হাসান সোহেল ফরিদপুর অঞ্চল

১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিদেশ যাওয়ার সোনার হরিণের নাম ভিসা! ঐ কাঙ্খিত ভিসাটি হাতে পেয়ে কেউ আনন্দের বন্যায় ভাসেন। আবার কেউ কান্নার সাগরে বা সয়োরে ভাসেন। কাঙ্খিত লোক বা যুবকরা এই বিদেশ নামের সোনার হরিণটি হাতে পেয়ে পাশের লোক বা স্বজনদের সাথেও ভিসার কথাটি শেয়ার করেন, না। শুধু মাত্র বিদায়ের দিন অথবা এয়ারপোর্টে গিয়ে অথবা কেউ বিদেশে পৌঁছে আনন্দে আত্মহারা হয়ে মোবাইলের ইমুতে অথবা ফোনের নম্বর কল দিয়ে বন্ধু অথবা স্বজনদের সারপ্রাইজ দেন।

ততোক্ষণে যে, তার কপাল সর্বনাশ হওয়ার কাজ শেষ হয়ে গেছে, সে বিষয়টি একবার ভাবেননি। ভিসাটি হাতে পেয়ে নিজে অথবা কাউকে একবার দেখানও না ভিসাটি বৈধ নাকি অবৈধ। এটা কোন দেশের ভিসা। এটা ঠিক আছে কিনা। কত বছর বা কত দিনের জন্য। বেতন কত কোন দেশে যাবেন। কোম্পানির নাম কি? বেতন কত লেখা বা ধরা আছে কিনা। এসব কোন কিছু শতকরা ৯০% লোক না দেখেই বিদেশ পাড়ি জমায়। পাশাপাশি যে সকল দালাল বা আদমবেপারির মাধ্যমে বিদেশ নেন তারাও ঐ সকল অজ্ঞান লোকের বোকামি টাকে পুঁজি করে খুব সহজে প্রতারণা করা সুযোগ পান। বলছিলাম ফরিদপুর সদর থানা ও শিবচরের ১২ যুবকের কথা তারা বিদেশের নামে কিভাবে প্রতারিত হলো। জানুন সেই অভিনব প্রতারণার কৌশল।

এই দুই প্রতিবেদক সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে জানতে পারেন ফরিদপুর সদর উপজেলা ও শিবচর উপজেলার ১২ যুবক বিদেশে যাওয়ার নাটকে জনৈক মহিলা আদম ব্যবসায়ীর মিষ্টি মধুর কথা প্যাচে পড়ে সর্বশান্ত হলো কিভাবে? ঐ নারীর কথার ফুলঝুরিতে ভুলে গিয়ে এখন পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বহু যুবক। প্রবাসী ব্যাংক থেকে নেয়া প্রায় দুই লাখ টাকা এবং এনজিও থেকে নেয়া সুদের টাকা গুনতে গুনতে এখন সংসার সন্তানও হারাতে বসছে।

এই বিষয়ের খবর পেয়ে এই দুই প্রতিবেদক কথা বলেন, প্রতারিত হওয়া যুবক মো. নাঈম সেখ (২৭) পিতা মো. পান্না শেখ। ফরিদপুর সদর থানার হাজীশরীয়তুল্লা বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী পান্নাই এই যুবকের বাবা। পান্না ইনকিলাবকে বলেন, স্যার আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নাই এখন। নিরূপায় হয়ে একটি দোকানো চা-পানি দেয়ার একটি কাজ নিছি আমি। মাসে মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেতন হয়তো দিতে পারে মালিক। চুক্তিতে চাকরি নেইনি। বেকারত্বের অভিশাপ গুচাতে কাজটি নিলাম। মালিক সাহেব দয়া করে যা বেতন দিবেন তাতেই আপতত রাজি। শুধুই বাঁচার চেষ্টা করছি। বিস্তারিত আলোচনাকালে তিনি বলেন, ৫ মাস আগে ফরিদপুর সদর থানার আলীয়াবাদ ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন দেলো মিয়ার বউয়ের মাধ্যমে আমি সউদী আরব যাই। আমার সাথে আরো এক যুবক যায় তার নাম মো. সেলিম, বাবার নাম মো. ইসমাইল। তার বাবাও একজন ছোট ব্যবসায়ী। আমাদেরকে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতনে সউদী আরব পাঠান। মোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই চুক্তিতে আমি প্রথম ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেই। পরে ওখানে গিয়ে বাকি টাকা দিতে হবে। বিদেশে যাওয়ার পর আমি ও আমার পরিবার প্রবাসের কোম্পানির লোককে বলি আমাদের দ্রুত কাজ যোগদান করান এবং আকামা করে দেন। আমাদের বাইরে বের হতে দেন না কেন? বেতন আদি দেন। বাড়ীর লোক টেনশনে আছে ব্যাংকের টাকা এবং এনজিওর টাকা পরিশোধ করতে হবে। মা-বাবা, বউ-বাচ্চারা তিন বেলা খেতে পারতেছে না। কিস্তির লোক ব্যাংকের লোক বাড়ি গিয়ে খুব জ্বালাতাপ করছেন। সময় মতো টাকা না দিলে তারা মামলা করবেন। এই কথা সউদী দালালদের জানাই এবং দেশে দালালকেও জানাই। শেষ পর্যন্ত মিথ্যা কথা বলে তথা চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে কর্মস্থলে নেয়ার কথা বলে আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে, ওদের পূর্ব থেকে সেট করা এবং ওঁৎপেতে থাকা সউদী পুলিশের লোকেরা গাড়ি থামিয়ে আমাদের কাজপাতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে গেলে কারোরই কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি দালালরা বা আমরা। পুলিশ আমাদের নিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে আটকিয়ে রাখেন। সেখানে প্রচন্ড ভয়ঙ্কর জায়গা। পাশাপাশি দুটি কক্ষ। একটি কক্ষে খুব গরম এবং একটি কক্ষে প্রচন্ড ঠান্ডা। এই দুটি কক্ষই পুলিশ রিমান্ডে নেয়া আসামি রাখার মতো। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমারা জীবন ভিক্ষা চেয়ে জান বাঁচাই। তারপর আমাদের সকলকে ওখানকার কারাগারে পাঠিয়ে অবৈধ প্রবাসী হিসাবে জেলে আটকিয়ে দেয়। ১০/১৫ দিন পর সেখানে কোর্টের আদেশ নিয়ে সরকারিভাবে অবৈধ বন্দিদের সরকারি খরচে সোজা এয়ারপোর্টে নিয়ে এসে প্লেনে উঠিয়ে দিলে আমরা দেশে চলে আসি শূন্য হাতে।
আসলে ভিসা ছিল তিন মাসের টুরিস্ট ভিসা। কোনো চাকরির বা কোম্পানির নয়। বিস্তারিত পড়ুন আগামীকাল ২০ পর্বে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান