ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

থামছেই না সীমান্ত হত্যা প্রতিশ্রুতি মুখে মুখেই

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

গত শনিবার ১৬ ডিসেম্বর রাতে বাড়াদি এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৮২ নম্বর প্রধান খুঁটির কাছাকাছি বিজয়পুর সীমান্তে দুই বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাড়াদি সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-দামুড়হুদা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে সাজেদুর রহমান (২৭) ও শরীয়তউল্লাহর ছেলে খাজা মইনুদ্দীন (৩০)।

পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলম জানান, শনিবার রাতে বাড়াদি সীমান্ত দিয়ে গরু আনতে যান বেশ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। এসময় ভারতের অভ্যন্তরে বিজয়পুর সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে গোবিন্দপুর ৩২ নম্বর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাজেদুর রহমান ও খাজা মইনুদ্দীন।

দর্শনা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, নিহত দুজনের পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে গেলে বিএসএফ তাদের গুলি করে হত্যা করে। বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে আলোচনা ও আইনগত প্রক্রিয়া মেনে নিহত ব্যক্তিদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

গত ৫ জুন লালমনিরহাটের কালীরহাট সীমান্তের মেসেরডাঙ্গা এলাকায় ৮৫৭ নম্বর মেইন পিলারের কাছে বিএসএফের গুলিতে ইউসুফ আলী নামে এক যুবক নিহত হন। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত অতিক্রমের সময় দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন সাহাবুল হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আরিফুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি যুবক। এ ঘটনার ১৭ দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের শ্যামকুড় চেয়ারম্যান ঘাট সীমান্ত দিয়ে ওই যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে চিঠি চালাচালি, শ্যামকুড় সীমান্ত এলাকায় পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তারপর মেলে লাশ। নিহত আরিফুল ইসলাম মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মৃত আফিজ উদ্দিনের ছেলে।

কোনোভাবেই থামছে না সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনসহ নানা সময়ে সীমান্ত-হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। এ ছাড়া সীমান্তে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত হয় দফায় দফায়। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই কাজে আসছে না। থামছে না সীমান্তে প্রাণহানি। সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৯০ শতাংশই সংঘটিত হয় গুলিতে। পিটিয়ে বা নির্যাতন করে এবং পানিতে ডুবিয়ে মারার ঘটনাও ঘটছে সীমান্তে। অথচ হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

অবশ্য বিজিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আমাদের নাগরিকদের গুলি করে হত্যার বিষয়টি অনাকাঙ্খিত। আমরা প্রতিটি সভাতেই হত্যাকাণ্ড বন্ধের কথা বলি আর বিএসএফ প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চলতি বছর ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ১৭ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১৪ জন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫৭ বাংলাদেশি নাগরিক। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ১২৭ জন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলোকে চিহ্নিত না করে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। নীতিগত সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁকফোকর থেকে যায়। যার ফলে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটছেই। হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্যে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষয়টি জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক দরবারে আনতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এর সমাধান খুঁজতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন বলেন, বিগত দিনে সীমান্ত হত্যা নিয়ে শুধু বিএসএফ-বিজিবির ঊর্ধ্বতনদের মধ্যেই বৈঠক হয়নি, দুই দেশের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হতে দেখেছি। তখনও শুনেছি সীমান্ত-হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে, সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু তারপরও দেখছি আগের মতোই হত্যাকাণ্ড-নির্যাতন চলছেই। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমান্ত-হত্যা নির্যাতন ইস্যুটির সমাধান হচ্ছে না। তাই আমি মনে করি, বিষয়টি জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক দরবারে আনতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এর সমাধান করতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স

ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স