ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
নির্বাচনে থাকবে সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্টের সম্মতি

প্রতীক বরাদ্দ শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল প্রত্যাখ্যান করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মিত্ররা নির্বাচনী তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে শুরু করেছে।

বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়েই ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত দিনে মনোনয়ন গ্রহণ শেষ করা হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা গতকাল শেষ হয়েছে। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছেন মনোনয়ন বৈধ ও চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়েই নির্বাচনি ডামাঢোল অলি গলি আর মাঠে গড়াবে। যদিও এর আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম তোলা ও জমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অনানুষ্ঠানিক প্রচারনায় রয়েছেন। সভা-সমাবেশ ও মিটিং মিছিল করে যাচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শোকজও খেয়েছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিসহ প্রভাবশালী অনেক প্রার্থী। গতকালও কয়েকজনকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ২৬টি ও ১৪ দলের শরিকদের জন্য ছয়টি মোট ৩২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আজ প্রতীক বরাদ্দ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হচ্ছে। নির্বাচনের ব্যালট পেপার ব্যতিত সব উপকরণ পাঠানো সম্পন্ন করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করে অতি শিগগিরই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। গতকাল রোববার গনভবনে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে স্বাক্ষাত শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে সকাল ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইস) কাজী হাবিবুর আউয়াল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে ইসি সচিব বলেন, সকাল ১১টায় মহামান্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি মহোদয়। সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কমিশন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মহামান্য প্রেসিডেন্টর কাছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সামরিক বাহিনী নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

সচিব জানান, মহামান্য প্রেসিডেন্ট বিষয়টি শুনেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করে অতি শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। তিনি নীতিগতভাবে সামরিক বাহিনী প্রদানে সম্মত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মূলত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে পৃথক পত্র প্রেরণ করবো। তার আলোকে সেখানে সময়, কখন, কীভাবে তা নির্ধারণ হবে। সেটা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে পত্রালাপের মাধ্যমে চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। পিএসও ১৩ দিনের কথা বলেছেন উল্লেখ করলে তিনি বলেন, সেটা একটা আলোচনা ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে নিয়োজিত থাকবে, তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে তারা যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই জন্য তিনি কথাটা বলেছেন।

নির্বাচন কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা হয়। মনোনয়নপত্র বাছাই চলে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা ৭৩১ জনের বাতিল ও ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ৫৬০টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। গত রবিবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার শেষ হয় এসব আপিল শুনানি। শুনানিতে মোট ২৮০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। বাতিল করা হয়েছে বৈধ হওয়া ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন। আর ২৭৫ জন প্রার্থীর আবেদন নামঞ্জুর করেছে কমিশন। আপিল না মঞ্জুর হওয়া প্রার্থীরা চাইলে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। যেভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৬ অনুচ্ছেদ বলা আছে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থী নিজে বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত লিখিত নোটিশের মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বেলাতেও একই বিধান। আর দলের ক্ষমতা হচ্ছে দল থেকে বা জোট থেকে যদি একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন বা তার আগে একজনকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন। সে ক্ষেত্রে অন্যদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।

ব্যালট ছাড়া ভোটের সব উপকরণ মাঠে: নির্বাচনের ব্যালট পেপার ব্যতিত সব উপকরণ পাঠানো সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সব ধরনের উপকরণ পাঠানো মধ্যে দিয়ে এ কাজটি সম্পন্ন হলো বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অমোচনীয় কালী, বিভিন্ন ধরনের ফরম ও প্যাকেট, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র এবং গাড়ির স্টিকার পাঠানো হয়েছে। এগুলো ছাড়াও ভোটগ্রহণের জন্য ১৩ ধরনের উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ও লক, বিভিন্ন ধরনের সিল, স্ট্যাম্প, সিল, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কাগজ, প্যাড, রশি প্রভৃতি। এগুলো গত নভেম্বরে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। মাঠে থাকবেন সাড়ে ৭লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য: এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে সাত লাখ সদস্য। এর মধ্যে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ (র‌্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫৫ জন এবং বিজিবির সদস্য ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন নিয়োজিত থাকবেন। আর নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। তবে কতজন সদস্য মোতায়েন থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ইতিমধ্যেই দুইজন পুলিশ কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও এসআইসহ সারাদেশে পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল করেছে নির্বাচন কমিশন।
##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স

ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স