ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
ভারত-চীন-রাশিয়ার মতো বিদেশি শক্তির ওপর ভর করে নির্বাচন হচ্ছে

নির্বাচন বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত হয় দিল্লিতে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

১০ বছরের মাথায় সরকার ২০২৪ সালে এসে ২০১৪ সালের নির্বাচনী মডেলের নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এটা নির্বাচন নয়, ভোটের খেলা। ওই সময় ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। এবার ‘ডামি প্রার্থী’ দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। এই নির্বাচন ঠেকাতে সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ হচ্ছে। দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই পাতানো নির্বাচন। নির্বাচনের পর দেশ পরাশক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। গতকাল শনিবার ‘ভোট ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সংলাপে দেশের বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে ‘লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংবাদিক’ ব্যানারে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

বিশিষ্টজনেররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দিল্লিতে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের সার্বভৌমত্বকেও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। এ সরকার দেশের জনগণের ওপর ভর করছে না। সরকার ভর করছে বিজ্ঞাপনী সংস্থা, হামলা-মামলা, ধনিক গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী আমলা ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণি এবং ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো বিদেশি শক্তির ওপর।

বিশিষ্ট আলোচকরা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বেশির ভাগ সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সরকার এবার যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তা ২০১৪ সালের নির্বাচনী মডেলের সম্প্রসারণ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এবারের মডেলে যেটা সম্প্রসারণ করা হয়েছে সেটা হলো বিদেশীদের দেখাতে ভোটারদের উপস্থিত করতে হবে। আগে সরকারের বিবেচনায় এটা ছিল না। এবার ভোটারদের উপস্থিত করার জন্য স্বতন্ত্র, ডামি প্রার্থী দিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার খেলা তৈরি করেছে। বলা হচ্ছে, যারা ভোট দিতে যাবে না, তারা হচ্ছে গণতন্ত্রবিরোধী, নির্বাচনবিরোধী। তিনি আরো বলেন, সরকার দেশের জনগণের ওপর ভর করছে না। সরকার ভর করছে বিজ্ঞাপনী সংস্থা, হামলা-মামলা, ধনিক গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী আমলা ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণি এবং ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো বিদেশি শক্তির ওপর।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা সুস্পষ্ট, ভোটের ট্রেন ট্র্যাকে (পথ) উঠে গেছে। আমাদের সরকার এতে চেপে বসেছে। কিন্তু এর গন্তব্য কোথায়? আমি তো মনে করি, আমরা একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছি। কারণ হলো ভোটের খেলা হচ্ছে, কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যে দলই ক্ষমতায় আসে, তারা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। তবে আওয়ামী লীগের মতো এত নির্মম নির্যাতন, এত মরিয়াভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা অতীতে কেউ করেনি। তিনি আরো বলেন, বিএনপি আন্দোলন সফল করতে পারল না, এটা সত্যি। সবচেয়ে বড় সত্যি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ ভুয়া নির্বাচন ঠেকাতে পারছে না। সিপিবি পারছে না, বাসদ পারছে না, অধ্যাপক তানজিম পারছে না, আনু ভাই পারছেন না, আমি পারছি না। আমরা সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ হচ্ছি। আর এই ভুয়া নির্বাচন যারা প্রতিষ্ঠা করছে, তারা জিতে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, আমাদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দিল্লিতে। বাংলাদেশে ভোট সিদ্ধান্ত দিল্লিতে এটা খুবই আশঙ্কাজনক। একটা রাষ্ট্র কোন অবস্থায় পৌঁছালে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের সার্বভৌমত্বকেও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, দেশের ভেতরে ও বাইরের দুষ্ট শক্তি বিবেচনায় আমাদের সংকটের গভীরতা অনেক বেশি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার পরিকল্পনা করে ট্রেনে আগুন দিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে ‘তামাশার’ নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এটা মানুষ ধরে ফেলেছে।
নারীনেত্রী শিরীন হক বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমাদের অসহায়ত্ব আরও বাড়বে। আমরা গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলবো।

লেখক ও সংগঠক বাকি বিল্লাহর সঞ্চালনায় সংলাপে আরো বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার আলী আর রাজী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার, নারীনেত্রী সীমা দত্ত, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি শামসুজ্জামান হীরা, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ কাইয়ুম, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, আবু সাঈদ খান প্রমুখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান