আ.লীগের সঙ্গে তলে তলে সম্পর্ক রাখতেন শাহজাহান ওমর
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
বিএনপি ছেড়ে এক লাফে নৌকায় চড়ে বসা হালের আলোচিত এমপি প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের সঙ্গে সরকারের তলে তলে খাতির ছিল আগে থেকেই। গত দেড় দশকে অনেক বিএনপি নেতা শত শত মামলার আসামি হয়েছেন। কিন্তু শাহজাহান ওমরকে দেয়া হয়েছে দায়মুক্তি। অন্য বিএনপি নেতারা একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেও স্পর্শ করা হয়নি শাহজাহান ওমরকে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা-মামলা এবং পল্টনে বিস্ফোরক আইনে পৃথক ২টি মামলা হয়। যা থেকে তিনি গত ২৯ নভেম্বর নাটকীয়ভাবে জামিনে মুক্তি পান। পরদিনই যোগ দেন আওয়ামী লীগে। মনোনয়ন লাভ করেন নৌকা প্রতীকে। এ ২টি ছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্যও উল্লেখ করেননি। বিএনপির নেতা-কর্মী বলতেই যেমন একাধিক মামলার আসামি বোঝায়, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর তেমনটি ছিলেন না। যা থেকে অনেকেই সন্দেহ করতেনÑ আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার একটি নিবিড় যোগাযোগ ছিল। সম্পর্ক লালনের ফলেই সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো ধরনের রাজনৈতিক জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা ও আঘাত আসেনি। বিএনপি নেতা হলেও গত দেড় দশকে বিএনপির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তিনি থেকেছেন নির্লিপ্ত। তার আচরণও ছিল ভারসাম্যমূলক। সরকার বিরোধী জোটের নিবেদিত নেতাদের অনেকেই মনে করেন, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর ছিলেন বিএনপিতে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের স্পাই। বাহ্যত বিএনপি করলেও ভেতরে যোগাযোগ ও স্বার্থ রক্ষা করতেন আওয়ামী লীগের। তার মুনাফেকি চরিত্র বেশ আগে থেকে অনেকে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সাংগঠনিক শৃঙ্খলার স্বার্থে মুখ ফুটে কেউ সেটা বলেননি।
ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের আওয়ামীপ্রীতির বড় সাক্ষ্য-স্মারক হচ্ছে দুদকের মামলা। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকার আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থা রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। আইনত স্বশাসিত স্বাধীন সংস্থা হওয়ায় দুদকের মামলাগুলো সরকার সরাসরি প্রত্যাহার করতে পারেনি। সেই ক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কমিটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য দুদকে সুপারিশ পাঠায়। মামলা সরাসরি প্রত্যাহারের সংস্থাটির আইনত কোনো সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে দুদক আশ্রয় নেয় কৌশলের। কোনোটির তদন্ত প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। কারো কারো মামলায় ‘অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি’ মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দেয়। বিচারাধীন মামলাগুলোতে দুদক নমনীয়তা দেখায়। এ কারণে বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কোনো পর্যায়ের কোনো নেতার মামলা প্রত্যাহার কিংবা এফআরটি হয়নি। বরং ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে দায়েরকৃত মামলাগুলোকে সরকারবিরোধী দমনের হাতিয়ারে পরিণত করে।
এসব ঘটনার একমাত্র ব্যতিক্রম বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। তার এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দুদক দায়মুক্তি দেয়। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ-১-এর উপ-পরিচালক ঋত্বিক সাহার স্বাক্ষরে শাহজাহান ওমর অব্যাহতির (দায়মুক্তি)’র চিঠি পান। ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শাহজাহান ওমর, তার স্ত্রী মেহজাবিন ফারজানা এবং ছেলে আদনান ওমরের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে মামলা হয়। সংস্থার তৎকালীন সহকারী পরিচালক শেখ মেসবাহ উদ্দিন গুলশান থানায় এ মামলা করেন।
এজাহারে বলা হয়েছিল, শাহজাহান ওমর ও তার পরিবারের সদস্যরা দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৬ লাখ ১৮ হাজার ৫০২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। যদিও অনুসন্ধানে দুদক ২ কোটি ৬ লাখ ১৫ হাজার ৮০৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পায়।
এ মামলায় ২০০৮ সালের মে মাসে জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন স্থাপিত বিশেষ আদালত শাহজাহান ওমরকে ১৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক। আর দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অপরাধে তার স্ত্রী মেহজাবিন ফারজানাকে ৩ বছর কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস দেয়া হয় পুত্র আদনান ওমরকে। শাহজাহান ওমর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট তাকে খালাস দেন। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। আপিলের রায়ে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১২ সালে পুনরায় অনুসন্ধান করে দুদক। সংস্থাটির তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ অভিযোগটি অনুসন্ধান করেন। অনুসন্ধান পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে শাহজাহান ওমরকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দুদক কোনো মামলা দায়ের করেনি। ২০১৬ সালে তাকে দায়মুক্তি দেয় দুদক। যদিও একই সময়ে দায়ের হওয়া মামলায় বেগম খালেদা জিয়াসহ কোনো বিএনপি নেতাই দুদক থেকে দায়মুক্তি পাননি। উপরন্তু বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে তারা হয়েছেন দণ্ডিত।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ