যুদ্ধবিরতি বাদ দিয়েই প্রস্তাব পাস
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাব পাস হয়েছে। গাজা উপত্যকায় আরো অধিক মানবিক সহায়তা পাঠানোর এ প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাস হয়েছে। শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। প্রস্তাবটির খসড়ায় গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির কথা থাকায় এতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পরে যুদ্ধবিরতির কথা বাদ দিয়ে শুধু মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে ঝুলে থাকা প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত পাস হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি বন্ধে এতে কোনো আলোচনা করা হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ দেশের মধ্যে ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও; যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য রাশিয়া বলেছে, এ প্রস্তাব একটি ‘দন্তহীন’ ও ‘অক্ষম’ প্রস্তাব। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নিবানজিয়া বলেছেন, এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে বলা হয়নি। এর বদলে এটির মাধ্যমে ‘মুক্তহস্তে’ ইসরাইলকে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের হামলায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা পৃথিবীর নরক বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের খুন করছে ইসরাইলি সেনা! তাও আবার তাদের পরিবারের সামনেই! যদিও এই অভিযোগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি ইসরাইলের সেনা।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তরফে জানানো হয়, গাজার আল রেমাল এলাকার আল আওদা বিল্ডিংয়ের দখল নেয় ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে একাধিক পরিবার। অভিযোগ, ইসরাইলের সেনা সেখানে প্রথমে মহিলা ও শিশুদের থেকে পুরুষদের আলাদা করে দেয়। তার পর অন্তত ১১ জনকে পরিবারের সদস্যদের সামনেই গুলি করে খুন করা হয়। নিহতদের মধ্যে অনেকের বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে। ইতিমধ্যেই এই বিস্ফোরক অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। যদি এই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে এটা ইসরাইলি সেনার যুদ্ধাপরাধ হবে।
এদিকে, হামাস বনাম ইসরাইল সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু ও মহিলার সংখ্যাই বেশি। কিন্তু যুদ্ধ থামাতে নারাজ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ফের একবার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘একটা সহজ বাছাই করতে হবে হামাসকে। হয় আত্মসমর্পণ করো নয় মরো। এছাড়া আর কোনও অপশন নেই। জয় না আসা পর্যন্ত আমরা লড়ব।’ প্রসঙ্গত, এর আগেও এ নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন নেতানিয়াহু। এবারও সেটাই বজায় রেখে আক্রমণের সুর চড়ালেন তিনি।
উল্লেখ্য, যুদ্ধ আবহে রক্তপাত থামাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। কিন্তু ভেটো প্রয়োগ করে সেই চেষ্টা আটকে দিয়েছিল আমেরিকা। ওয়াশিংটনের যুক্তি ছিল, এই প্রস্তাবে যুদ্ধের ময়দানে পরিস্থিতি কিছুই পালটাবে না। বাস্তব থেকে যোজন দূরে এই প্রয়াস। এটা অর্থহীন। ফলে গত দুমাস ধরে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলা যুদ্ধে ছেদ পড়ার সম্ভাবনা জোরাল ধাক্কা খেয়েছে নতুন করে।
একটি পরিবারের ৭৬ সদস্য নিহত : ‘গাজায় কোথাও নিরাপদ নয় এবং ইসরাইলের চলমান আক্রমণ মানবিক সহায়তা বিতরণে ‘ব্যাপক বাধা’ তৈরি করছে’ বলে জাতিসংঘ প্রধান আবারও সতর্ক করার একদিন পর ইসরাইলি বিমান হামলায় একটি বর্ধিত পরিবারের ৭৬ জন সদস্য নিহত হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, গাজা শহরের একটি ভবনে শুক্রবারের হামলাটি অবরুদ্ধ ছিটমহলের ওপর ইসরাইলের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল, যা এখন তার ১২তম সপ্তাহে রয়েছে। তিনি নিহতদের নামের একটি আংশিক তালিকা দিয়েছেন। এতে পরিবারের প্রধানসহ আল মুগরাবি পরিবারের ১৬ জন এবং নারী ও শিশুও রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের একজন প্রবীণ কর্মী ইসাম আল মুগরাবি, তার স্ত্রী এবং তাদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজার বেশ কয়েকটি শহরে ভারী গোলাবর্ষণের খবর দিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইলি বোমা হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা যুদ্ধের নতুন সংখ্যা প্রকাশ করেছে এবং ইসরাইল তার আগ্রাসন প্রসারিত করেছে এবং আরো কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালানোর আল্টিমেটাম দিয়েছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজায় ইসরাইলের হত্যাকাণ্ডের শিকার ভূখণ্ডের যুদ্ধপূর্ব জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ, যাদের অধিকাংশই শিশু এবং নারী। ইসরাইলের আকাশ ও স্থল আক্রমণ সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হামলার মধ্যে একটি। এতে গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় ৮৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ক্ষুদ্র অবরুদ্ধ ছিটমহলের বিস্তৃত অংশকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। গাজার ৫ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারে রয়েছে।
অনেক বিলম্বের পর, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার গাজার মরিয়া বেসামরিক লোকদের জন্য অবিলম্বে ত্রাণ বিতরণ দ্রুত করার আহ্বান জানিয়ে একটি জলাবদ্ধ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য তার দীর্ঘ দিনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মহাসচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত শাস্তিকে কখনই ন্যায্যতা দিতে পারে না এবং তারা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরাইলকে তার নিজস্ব আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করতে পারে না’।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে যে তারা যুদ্ধে ২০ হাজার ৫৭ জন মারা গেছে এবং ৫৩ হাজার ৩২০ জন আহত হয়েছে। তারা আগে বলেছিল যে, নিহতদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মহিলা বা নাবালক। ইসরাইলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, তাদের ১৩৯ সৈন্য স্থল আক্রমণে নিহত হয়েছে। ইসরাইল অভিযোগ করেছে যে, তারা গত তিন সপ্তাহে প্রায় ২ হাজারসহ হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, তবে দাবির সমর্থনে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। বেশিরভাগ যুদ্ধের জন্য, ইসরাইল মিসর থেকে সাহায্যের ট্রাক কনভয় ব্যতীত খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং অন্যান্য সরবরাহের প্রবেশও বন্ধ করে দেয়, যা গাজার প্রয়োজনের একটি অংশকে কভার করে। গাজায় অপর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশের কারণে, ক্ষুধার মাত্রা আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনে সাম্প্রতিক বছরগুলোর নিকটবর্তী দুর্ভিক্ষকে গ্রাস করেছে এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি ‘প্রতিদিন বাড়ছে’ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ