একই মঞ্চে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি বিরোধীদের
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
চলমান সরকার পতন আন্দোলনকে সফলতা দিতে নানামুখি কৌশলে এগুচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বে সকল দলকে একই মঞ্চে এনে সর্বাত্মক গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এ লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে পৃথকভাবে চলা জামায়াতে ইসলামীকেও সঙ্গে পাচ্ছে বিএনপি। জামায়াত ইস্যুতে এতোদিন যাদের আপত্তি ছিল সরকার পতন আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে রাজি হয়েছেন তারাও। ফলে চলতি সপ্তাহেই সকল দলকে দেখা যেতে পারে একই মঞ্চে। এই সকল দল মিলে ৩১ ডিসেম্বর বা ১ জানুয়ারি থেকে চলমান কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যতিক্রম কিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন তারা। একইসঙ্গে শ্রমিক, কৃষক, আইনজীবী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকেও মাঠে নামাতে চায় এসব দল। এজন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি, হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করেছেন। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ বেশি কিছু দাবি নিয়ে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ। আইনজীবীসহ পোশাজীবীরাও থাকবেন রাজপথে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনকারী সকল রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এখনো এর প্রভাব চোখে না পড়লেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এটি সরকারকে ব্যাপক চাপে ফেলতে পারে। এর সঙ্গে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিও ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবেন তারা। ভোট বর্জন ও অসহযোগের অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে সারাদেশে ফের সক্রিয়ভাবে মাঠে নামছেন নেতাকর্মীরা। এটি সামনের আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখবে।
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা জানান, চলমান আন্দোলনকে এখন চূড়ান্ত পরিণতি প্রদান করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। কারণ সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকারও বিরোধী দলগুলোর ব্যাপারে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাই এই সরকার পুনরায় ক্ষমতায় টিকে গেলে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঠায় হবে কারাগারে। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভাগভিত্তিকে যেসব ভার্চুয়াল সভা করেছেন সেখানে স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছেন, এটি সবার বাঁচা-মরার লড়াই। নেতারা কারাগারে যাবেন নাকি মুক্তভাবে থাকবেন সেটি নির্ধারিত হবে আগামী কয়েকদিনে।
তারা জানান, কেন্দ্রীয়সহ তৃণমূলের নেতারাও সামনের দিনে কর্মসূচিতে যার যার সামর্থ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার দিয়েছেন। তাদের প্রতিশ্রুতিতেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো। তাই এখন আর পৃথক পৃথক মঞ্চে নয়, একক মঞ্চে থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন পালনে সম্মত হয়েছেন তারা। এতে যুক্ত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য দল জামায়াতের সঙ্গে একই মঞ্চে আন্দোলনে রাজিও হয়েছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে সকল দল মিলে একই মঞ্চের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আসতে পারে বলে একাধিক নেতা জানান। তারা জানান, জামায়াত ইস্যুতে অনেক দলই এতোদিন বিরোধীতা করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি জামায়াতের সঙ্গে একই মঞ্চে আন্দোলন করতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সকল দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিএনপি। তারাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, চলমান আন্দোলনে জামায়াত একটি বড় শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই তাদেরকে বাইরে রাখা ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, একই মঞ্চে আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী একটি বড় রাজনৈতিক দল। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের একই মঞ্চে আসলে আমাদের শক্তি বাড়বে। কারণ আমাদের সবার লক্ষ্য একটিই, এই সরকারের পতন ঘটানো। তাই নানা মত পার্থক্য থাকলেও এই একটি দাবিতে তো আমরা এক জায়গায় আসতে পারি। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সর্বাত্ম আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে।
জামায়াতের ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজপথে সকল বিরোধী দলই আন্দোলন করছে। এর মধ্যে দিয়ে ঐক্য গড়ে উঠেছে। সবাই সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। আন্দোলন যখন তুঙ্গে বা কাছাকাছি পৌঁছাবে তখন যেকোন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আগামী দিনের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, অসহযোগ আন্দোলন চলছে, এর পাশাপাশি গণসংযোগ অব্যাহত থাকবে। চলতি সপ্তাহে আরো এক দফা অবরোধ বৃদ্ধি হতে পারে। তবে আগামী সপ্তাহে সর্বাত্মক কর্মসূচি নিয়ে সমস্ত দল মাঠে নামবে। এরপাশাপাশি শ্রমিকরা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে, আইনজীবী, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষও রাস্তায় নামতে পারে।
এদিকে শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক ধর্মঘট পালন করার ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি)। এই দাবি যতদিন পূরণ না হবে ততদিন কারখানাসমূহ বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছে এসএসপি। এ লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে সকল সেক্টরে গণসংযোগ করবে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের উদ্যোগে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা জানান এসএসপির প্রধান সমন্বয়ক এএএম ফয়েজ হোসেন। মজুরি আন্দোলনে শহীদদের হত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল, গার্মেন্টস সেক্টরে ঘোষিত মজুরি বাতিল করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার নির্ধারণের দাবিতে’ চূড়ান্ত আন্দোলন-সংগ্রামের প্রসঙ্গে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সূত্রমতে, রোববার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল অথবা অবরোধ ও গণসংযোগের কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এরপর আন্দোলনের ধরন আবারও পরিবর্তনের কথা ভাবছে বিএনপি। যার মধ্যে ৩ জানুয়ারি থেকে ভোটের দিন ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘গণকারফিউ’ দেওয়ার কথা আলোচনায় রয়েছে। অসহযোগের মধ্যেই ‘গণকারফিউ’ দেওয়া হতে পারে। যেখানে জনগণকে বাসা থেকে বের না হওয়া, ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহণ বন্ধ এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধের আহ্বান জানানো হতে পারে। নতুন বছরের শুরুতে এই কর্মসূচির ডাক আসতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি ও সমমানা দল যে আন্দোলন করছে সে আন্দোলন ন্যায় সঙ্গত। সত্যের স্বপক্ষের আন্দোলন। যারা সত্যের পক্ষে থাকে তাদের উপরে তো নিপীড়ন নির্যাতন নেমে আসে। আমরা সকল বাঁধা অতিক্রম করে, সরকারের সকল রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে শিগগিরই এই সরকারের পতন নিশ্চিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতে পারে। যা অর্জন করার উদ্দেশ্যে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী আজ রাজপথে নেমেছে। বিএনপির জন্য নয়, কোনো ব্যক্তির জন্য নয়, বরং এ দেশের সব মানুষের মৌলিক ভোটের অধিকার তথা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রাজপথের আন্দোলন চলতেই থাকবে।’#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ