ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
অবৈধভাবে ইউরোপ মরণযাত্রা-শেষ পর্ব

ইনকিলাবে ২৫ পর্ব সংবাদ প্রকাশে নড়েচড়ে বসেছে সব ধরনের দালালরা

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ/ আবুল হাসান সোহেল ফরিদপুর অঞ্চল থেকে

২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

অবৈধপথে ইউরোপ মরণযাত্রা। ধারাবাহিকভাবে ১-২৫ পর্ব ইনকিলাবে প্রকাশ হওয়ার পর অবৈধপথে বিদেশ পাঠানো এমন সব আদম ব্যবসায়ী দালালরা নড়েচড়ে বসেছেন। সব ধরনের দালালরা প্রশাসনের ভয়ে অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ যাদের বিদেশ পঠাতে পারেনি তাদের পরিবারের সাথেও গোপনে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায়, ফরিদপুরের সালথায় এক আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে চার যুবক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ খবর পাওয়ার ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে ঐ চার যুবক মালয়েশিয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদেরকে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ীর মো. আতিক মোল্যা (৫০)। সে উপজেলার ফুলবাড়িয়া মধ্যপাড়ার মৃত কুটি গেদা মোল্লার পুত্র। তার মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ জন যুবক মালয়েশিয়াতে যান, সেখানে গিয়ে কোনো চাকরি কাজ কোনটাই পাননি। এতে চরম মানবতার জীবনযাপন করেন ঐ যুবকরা। দেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা ও বহু কষ্টের মধ্যে চলছেন।
এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন যুবকের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ঐ চার যুবক মালয়েশিয়াতে এবং দেশে তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইনকিলাবের সংবাদে সকল তথ্য উঠে আসে। এ সংবাদ পেয়ে আতিক মোল্যা ভয়ে পাগল হয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনও করেন এবং যাদের বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং কাজ পায়নি। পাশাপাশি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কিন্তু বিদেশ পাঠাতেই পারেননি। সকলের সাথে সে যোগাযোগ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছেন এবং সকলের সংসার চালানোর অঙ্গিকার করে প্রবাসে থাকা সকলের চাকরি ও ফিরিয়ে দিবেন মর্মে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বার্তা দিচ্ছেন বলে সালথার সাংবাদিক বিধান মন্ডল নিশ্চিত করছেন। উল্লেখিত বিষয়ে সালথা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার।
ভুক্তভোগী ঐ চার যুবকের পরিবারের সাথে কথা বললে তারা ইনকিলাবকে জানান, আপনাদের পত্রিকায় সংবাদ লেখায় এখন পাগল হয়ে গেছে। এখন আপোষ করতে চায়। থানার ওসিও মিটিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন। জানা যায়, নগরকান্দা উপজেলার মধ্যে ভুক্তভোগী সকলেরই বাড়িঘর।
উল্লেখ্য, ফুলবাড়িয়া এলাকার ফেলু মোল্যার পুত্র আলমগীর মোল্যার কাছ থেকে কনস্ট্রাকশনে ভাল বেতনে কাজের কথা বলে প্রায় ৫ লাখ টাকা নেয়। এরপর ৩ থেকে ৪ মাস পর সাপ্লাই ভিসা দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠায়। আতিক মোল্যার চাহিদা মতো ঘটি-বাটি সব বিক্রি করে এবং চড়া সুদে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা যোগাড় করে দেয়। ৪ মাস ধরে বিদেশ গেলেও কোনো টাকা পাঠাতে পারছে না আলমগীর, প্রায় প্রতিদিন পাওনাদারেরা বাড়িতে হাজির হয়। চার মেয়ে নিয়ে আলমগীরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অপরদিকে কাজ না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কোনো রকমে মালয়েশিয়াতে আদম ব্যবসায়ী আতিকের দিকে তাকিয়ে আছে আলমগীর।
স্থানীয় অপর এক যুবক সোনা মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ১ বছর ঘুরিয়ে মালয়েশিয়াতে পাঠায় আতিক। এনজিও থেকে লোন ও সুদে টাকা যোগাড় করে সে বিদেশের স্বপ্ন দেখে। বিদেশের মাটিতে ৬ মাস থাকলেও কোনো কাজ জোটে নাই তার ভাগ্যে। দেনাদার রা বাড়িতে ভিড় করায় সোনা মিয়ার স্ত্রী বাড়ি ছাড়া। ঐদিকে সোনা মিয়া ৬ মাস যাবত কোনো কাজ না পেয়ে অন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে ধার দেনা করে চলছে। আতিককে কিছু বললেই বলে সামনে মাস থেকে কাজে দিবে।
জীবনে অনেক বছর প্রবাসে কাটানো হেমায়েতকে মালয়েশিয়ার বিখ্যাত প্যাটোনাস কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ৫ থেকে ৬ মাস ঘুরিয়ে প্রবাসে পাঠায় আতিক মোল্যা। ভাগ্য বদলের আশায় প্রবাসে পাড়ি জমানো এই যুবক ৫ মাস যাবত বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সাপ্লাই ভিসা দেয়ায় কোনো কাজ নাই তার। মাঝে মধ্যে কোনো কাজ করলেও তার বেতন চাইতে পারেন না তিনি। দেশে গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে। ভাল কাজ অথবা দেশে ফেরত আসতে চান হেমায়েত। সামিউল নামের অপর এক যুবকের কাছ থেকে কোম্পানির ভিসা দেয়ার কথা থাকলেও তাকেও সাপ্লাই ভিসা দেয়া হয়। বর্তমানে সামিউল ও তার পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
এছাড়াও স্থানীয় মোমরেজ শেখ, বজলু সর্দার, ইয়াছিন, সজিবের মতো আরো কিছু নিরীহ যুবকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের প্রবাসে পাঠাতে পারছেন না আতিক মোল্যা। আবার যারা বিদেশ আছে তাদেরও ভাল কাজ নাই। স্থানীভাবে আতিক মোল্যা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার কোনো কাজের বিরোধিতা করে না। কেউ কিছু বললে তাকে মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছে, আবার অনেক মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার কারণে চুপ করা বন্ধ করেছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী আতিক মোল্যা বলেন, আমার মাধ্যমে তারা বিদেশে যায়। কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট রেখে ফটোকপি দিয়েছে। কাজ না থাকায় কোম্পানি তাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। কোনো প্রবাসীর পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আমি আরো তাদের পরিবারকে চাল, ডাল কিনে দিচ্ছি। আমিও এখন নিরুপায়।
অপরদিকে ইনকিলাবের ধারাবাহিক ২৫ পর্বে প্রকাশের মধ্যে দিয়ে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ জানতে পারল আদম কি পাচারকারী কারা? তাদের আচার শ্রেণী এবং প্রকারভেদ কি? পাশাপাশি আদম পাচারকারীদের খুঁজতে বেরিয়ে আসছে ১২ থেকে ১৩ হাত কাপড়ের আড়ালে বহু বির্তকিত মুখোশধারী নারী পাচারকারী চক্রের অসাধু সদস্যদের নাম। এরা পুরুষ আদম ব্যবসায়ীদের চেয়েও বহুগুন ভয়ংকর। একজন পুরুষ আদম ব্যবসায়ী লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়ে পুরুষকে অর্থনৈতিকভাবে শেষ করে পথের ফকির করে দেয় এবং একজন মুখোশধারী নারী পাচারকারী একজন নারী হয়ে আরেক নারীকে টাকার বিনিময় বহু অর্থের লোভ দেখিয়ে আজীবনের জন্য বিক্রি করে দেয়। আবার আসবো মধ্যাঞ্চলীয় কোনো সামাজিক সমস্যার সংবাদ নিয়ে। শেষ পর্ব (সমাপ্ত)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান