অবৈধভাবে ইউরোপ মরণযাত্রা-শেষ পর্ব

ইনকিলাবে ২৫ পর্ব সংবাদ প্রকাশে নড়েচড়ে বসেছে সব ধরনের দালালরা

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ/ আবুল হাসান সোহেল ফরিদপুর অঞ্চল থেকে

২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

অবৈধপথে ইউরোপ মরণযাত্রা। ধারাবাহিকভাবে ১-২৫ পর্ব ইনকিলাবে প্রকাশ হওয়ার পর অবৈধপথে বিদেশ পাঠানো এমন সব আদম ব্যবসায়ী দালালরা নড়েচড়ে বসেছেন। সব ধরনের দালালরা প্রশাসনের ভয়ে অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ যাদের বিদেশ পঠাতে পারেনি তাদের পরিবারের সাথেও গোপনে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায়, ফরিদপুরের সালথায় এক আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে চার যুবক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ খবর পাওয়ার ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে ঐ চার যুবক মালয়েশিয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদেরকে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ীর মো. আতিক মোল্যা (৫০)। সে উপজেলার ফুলবাড়িয়া মধ্যপাড়ার মৃত কুটি গেদা মোল্লার পুত্র। তার মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ জন যুবক মালয়েশিয়াতে যান, সেখানে গিয়ে কোনো চাকরি কাজ কোনটাই পাননি। এতে চরম মানবতার জীবনযাপন করেন ঐ যুবকরা। দেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা ও বহু কষ্টের মধ্যে চলছেন।
এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন যুবকের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ঐ চার যুবক মালয়েশিয়াতে এবং দেশে তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইনকিলাবের সংবাদে সকল তথ্য উঠে আসে। এ সংবাদ পেয়ে আতিক মোল্যা ভয়ে পাগল হয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনও করেন এবং যাদের বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং কাজ পায়নি। পাশাপাশি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কিন্তু বিদেশ পাঠাতেই পারেননি। সকলের সাথে সে যোগাযোগ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছেন এবং সকলের সংসার চালানোর অঙ্গিকার করে প্রবাসে থাকা সকলের চাকরি ও ফিরিয়ে দিবেন মর্মে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বার্তা দিচ্ছেন বলে সালথার সাংবাদিক বিধান মন্ডল নিশ্চিত করছেন। উল্লেখিত বিষয়ে সালথা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার।
ভুক্তভোগী ঐ চার যুবকের পরিবারের সাথে কথা বললে তারা ইনকিলাবকে জানান, আপনাদের পত্রিকায় সংবাদ লেখায় এখন পাগল হয়ে গেছে। এখন আপোষ করতে চায়। থানার ওসিও মিটিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন। জানা যায়, নগরকান্দা উপজেলার মধ্যে ভুক্তভোগী সকলেরই বাড়িঘর।
উল্লেখ্য, ফুলবাড়িয়া এলাকার ফেলু মোল্যার পুত্র আলমগীর মোল্যার কাছ থেকে কনস্ট্রাকশনে ভাল বেতনে কাজের কথা বলে প্রায় ৫ লাখ টাকা নেয়। এরপর ৩ থেকে ৪ মাস পর সাপ্লাই ভিসা দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠায়। আতিক মোল্যার চাহিদা মতো ঘটি-বাটি সব বিক্রি করে এবং চড়া সুদে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা যোগাড় করে দেয়। ৪ মাস ধরে বিদেশ গেলেও কোনো টাকা পাঠাতে পারছে না আলমগীর, প্রায় প্রতিদিন পাওনাদারেরা বাড়িতে হাজির হয়। চার মেয়ে নিয়ে আলমগীরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অপরদিকে কাজ না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কোনো রকমে মালয়েশিয়াতে আদম ব্যবসায়ী আতিকের দিকে তাকিয়ে আছে আলমগীর।
স্থানীয় অপর এক যুবক সোনা মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ১ বছর ঘুরিয়ে মালয়েশিয়াতে পাঠায় আতিক। এনজিও থেকে লোন ও সুদে টাকা যোগাড় করে সে বিদেশের স্বপ্ন দেখে। বিদেশের মাটিতে ৬ মাস থাকলেও কোনো কাজ জোটে নাই তার ভাগ্যে। দেনাদার রা বাড়িতে ভিড় করায় সোনা মিয়ার স্ত্রী বাড়ি ছাড়া। ঐদিকে সোনা মিয়া ৬ মাস যাবত কোনো কাজ না পেয়ে অন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে ধার দেনা করে চলছে। আতিককে কিছু বললেই বলে সামনে মাস থেকে কাজে দিবে।
জীবনে অনেক বছর প্রবাসে কাটানো হেমায়েতকে মালয়েশিয়ার বিখ্যাত প্যাটোনাস কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ৫ থেকে ৬ মাস ঘুরিয়ে প্রবাসে পাঠায় আতিক মোল্যা। ভাগ্য বদলের আশায় প্রবাসে পাড়ি জমানো এই যুবক ৫ মাস যাবত বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সাপ্লাই ভিসা দেয়ায় কোনো কাজ নাই তার। মাঝে মধ্যে কোনো কাজ করলেও তার বেতন চাইতে পারেন না তিনি। দেশে গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে। ভাল কাজ অথবা দেশে ফেরত আসতে চান হেমায়েত। সামিউল নামের অপর এক যুবকের কাছ থেকে কোম্পানির ভিসা দেয়ার কথা থাকলেও তাকেও সাপ্লাই ভিসা দেয়া হয়। বর্তমানে সামিউল ও তার পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
এছাড়াও স্থানীয় মোমরেজ শেখ, বজলু সর্দার, ইয়াছিন, সজিবের মতো আরো কিছু নিরীহ যুবকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের প্রবাসে পাঠাতে পারছেন না আতিক মোল্যা। আবার যারা বিদেশ আছে তাদেরও ভাল কাজ নাই। স্থানীভাবে আতিক মোল্যা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার কোনো কাজের বিরোধিতা করে না। কেউ কিছু বললে তাকে মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছে, আবার অনেক মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার কারণে চুপ করা বন্ধ করেছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী আতিক মোল্যা বলেন, আমার মাধ্যমে তারা বিদেশে যায়। কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট রেখে ফটোকপি দিয়েছে। কাজ না থাকায় কোম্পানি তাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। কোনো প্রবাসীর পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আমি আরো তাদের পরিবারকে চাল, ডাল কিনে দিচ্ছি। আমিও এখন নিরুপায়।
অপরদিকে ইনকিলাবের ধারাবাহিক ২৫ পর্বে প্রকাশের মধ্যে দিয়ে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ জানতে পারল আদম কি পাচারকারী কারা? তাদের আচার শ্রেণী এবং প্রকারভেদ কি? পাশাপাশি আদম পাচারকারীদের খুঁজতে বেরিয়ে আসছে ১২ থেকে ১৩ হাত কাপড়ের আড়ালে বহু বির্তকিত মুখোশধারী নারী পাচারকারী চক্রের অসাধু সদস্যদের নাম। এরা পুরুষ আদম ব্যবসায়ীদের চেয়েও বহুগুন ভয়ংকর। একজন পুরুষ আদম ব্যবসায়ী লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়ে পুরুষকে অর্থনৈতিকভাবে শেষ করে পথের ফকির করে দেয় এবং একজন মুখোশধারী নারী পাচারকারী একজন নারী হয়ে আরেক নারীকে টাকার বিনিময় বহু অর্থের লোভ দেখিয়ে আজীবনের জন্য বিক্রি করে দেয়। আবার আসবো মধ্যাঞ্চলীয় কোনো সামাজিক সমস্যার সংবাদ নিয়ে। শেষ পর্ব (সমাপ্ত)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
কী আছে তৌফিকার লকারে?
চট্টগ্রামসহ সারা দেশের পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধ করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ