দ্বিতীয় নৌভ্রমণ শুরু কাল
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ উৎসব উপভোগ করতে আগামীকাল বুধবার ঢাকা থেকে বরিশাল ও মোংলা হয়ে কলকাতায় দ্বিতীয় নৌ ভ্রমণ শুরু করছে ‘এমভি রাজারহাট-সি’। ‘মেসার্স কার্নিভাল ক্রজ লাইন্স’ তাদের ২১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ নৌযানটির মাধ্যমে গত ২৯ নভেম্বর ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় নৌপথে প্রথম যাত্রী পরিবহণ শুরু করে। ঐদিন সকালে প্রায় ২শ’ যাত্রী নিয়ে ঢাকার হাসনাবাদ কার্নিভাল জেটি থেকে নৌযানটি রওয়ানা হয়ে ২ ডিসেম্বর বিকেলে কলকাতায় পৌঁছে। ‘এমভি রাজারহাট-সি’ বরিশাল-মোংলা-পুরাতন চালনা হয়ে সুন্দরবনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আংটিহারায় নৌ চেকপোস্টে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ভারতে প্রবেশ করে। কলকাতার বাবুঘাট পুলিশ জেটিতে অবস্থান করে সেখান থেকে ৪ ডিসেম্বর ফিরতি যাত্রা করে নৌযানটি ঢাকায় পৌঁছে ৭ ডিসেম্বর সকালে।
আগামীকাল বুধবার সকালে পুনরায় ‘এমভি রাজারহাট-সি’ র উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে। বিলাসবহুল এ নৌযানটিতে ঢাকা থেকে কলকাতার একক পথে ৪০% রেয়াত দিয়ে ভ্রমণ কর সমেত সিঙ্গেল সিøপারের ভাড়া ৬ হাজার টাকা, ডবল সিøপার ১০ হাজার ২শ’ টাকা, একক শয্যার কক্ষ ১২ হাজার টাকা, দ্বৈত শয্যার কক্ষ ২০ হাজার ৪শ’ টাকা, ফ্যামিলি কেবিন ২৫ হাজার ২শ’ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৩০ হাজার টাকা ও প্রিমিয়াম ভিআইপি কেবিন ৫০ হাজার ৪শ’ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। রিটার্ন টিকেটধারীদের জন্য নৌযানটিতেই থাকার সুবিধা অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এবার যাত্রীদের জন্য বুফে খাবারের কোনো ব্যবস্থা রাখছে না প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাফেটরিয়া থেকে নির্ধারিত মূল্যে যাত্রীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একইসাথে যারা পরিবার নিয়ে ভ্রমণকারীদের সাথে থাকা অনুর্ধ্ব ১০ বছরের দুই বাচ্চার জন্য ভ্রমণ কর পরিশোধ সাপেক্ষে বিনা মাসুলে ভ্রমণের সুযোগ থাকছে।
এমভি রাজারহাট-সি কলকাতা থেকে ৩ জানুয়ারি ফিরতি পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছেন কার্নিভাল ক্রজ লাইন্স’এর পরিচালক ইমরান খান রাসেল।
তিনি জানান, তাদের নৌযানটির ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও ভারতীয় নৌপথে রাত্রীকালীন নৌ-সংকেত সুবিধার কিছুটা দুর্বলতা ছাড়াও দু দেশের সীমান্তে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পরীক্ষায় সময় ব্যয়সহ নানা আনুষ্ঠানিকতা অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। তবে তারা নৌযানটি এমনভাবে পরিচালনা করছেন, যাতে যাত্রীরা দিনের বেলা মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
১৮৭৪ সালে এ উপমহাদেশের প্রথম কলকাতা-বরিশাল, নারায়নগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-খুলনা, ঢাকা-চাঁদপুর-গোয়ালন্দ নৌপথে বাস্পীয় প্যাডেল হুইল স্টিমার সার্ভিস চালু করে বৃটিশ-ভারতীয় সহায়তা লাভকারী আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘অইজিএন’ ও ‘আর এসএন কোম্পানী’। তবে সুন্দরবনের গহীনে কয়েকটি নৌযান ডুবির প্রেক্ষিতে কলকাতা-বরিশাল রুটে সরাসরি নৌযোগাযোগ ১৯৪০ সালের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে খুলনা পর্যন্ত স্টিমার সার্ভিসের সাথে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত রেল সংযোগ চালু থাকলেও ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের দিন তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭২ সালে সম্পাদিত নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-বাংলাদেশ-ভারত পণ্যবাহী নৌযোগাযোগ চালু হলেও যাত্রীবাহী নৌ যোগাযোগ আর চালু হয়নি।
প্রায় ৭০ বছর পরে দুই দেশের সরকার প্রধানের সিদ্ধান্ত আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পূর্বের নৌ প্রটোকল অনুযায়ী ২০১৯-এর মার্চে রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি তার ‘এমভি মধুমতি’ যাত্রীবাহী নৌযানের সাহায্যে ঢাকা-কলকাতা রুটে একটি পরীক্ষামূলক যাত্রী পরিচালন সম্পন্ন করলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্তাদের অনাগ্রহে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বেসরকারি কার্ণিভাল ক্রুজ তাদের ২১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বিলাসবহুল নৌযানটির সাহায্যে গত মাসেই ঢাকা-বরিশাল-রুটে যাত্রী পরিবহণ শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় মাসে দুটি ট্রিপে নৌযানটি চলাচলের কথা থাকলেও এখনো মাসে একটি ট্রিপ দিচ্ছে রাজারহাট-সি। তবে যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে তা বৃদ্ধিতে আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
করোনাপূর্বকালীন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বছরে ২০ লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করতো। এখনো চিকিৎসা ও পর্যটনের জন্য দু দেশের একাধিক স্থলবন্দর দিয়েই ৮০ ভাগেরও বেশি যাত্রী চলাচল করে থাকেন। এছাড়াও ঢাকা থেকে সপ্তাহে ৫ দিন ও খুলনা থেকে দুদিন পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০টি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লী ও চেন্নাই রুটে বিপুল যাত্রী ভ্রমণ করছেন। করোনা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতির পরে দু দেশের মধ্যে যাত্রী চলাচল অনেকটা বাড়লেও ভারতীয় দুতাবাসের ভিসা জটিলতায় তা কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। ভারতগামী বাংলাদেশীরা ভিসা প্রাপ্তিতে সাম্প্রতিককালে নানা ধরনের দীর্ঘ সূত্রিতা ও হয়রানীর অভিযোগ করছেন। পাশপাশিস্থল সীমান্ত চেকপোস্ট গুলোতেও ভারতগামীদের দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই।
এদিকে গত ১১ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের বারানসী থেকে ভারত-বাংলাদেশের ৩ হাজার ২শ’ কিলোমিটার নৌপথে ২৮ জন যাত্রী নিয়ে ‘এমভি গঙ্গা বিলাস’ নামের একটি প্রমোদতরী ৫১ দিনের ভ্রমণের সূচনা করে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি নৌযানটি ভারত-বাংলাদেশের নৌসীমান্তের আংটিহারা হয়ে মোংলাতে পৌঁছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে পৌঁছে রাত্রীযাপনের পরে পর্যটকবাহী নৌযনটি পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিয়ে আসামের ডিব্রুগড়ে ৫১ দিনের নৌ ভ্রমণ শেষ করে। প্রায় ২শ’ ফুট লম্বা তিনতলা প্র্রমোদতরীটি সুইজারল্যান্ড ও জার্মানীর ২৮ জন পর্যটক নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের ২৭টি নদী ও ৫০টি পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেছিল। বিশে^র দীর্ঘতম এ নৌ ভ্রমণে খাবার সমেত প্রতি পর্যটকের কাছ থেকে ৫১ দিনে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ভারতীয় রূপি বা তৎকালীন ১৬ লাখ টাকারও বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঐ প্রমোদ ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ