ডামিতে কোণঠাসা নৌকার প্রার্থীরা
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে একতরফা নির্বাচনে আমেজ আনতে নৌকার বিপরীতে দলীয় ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের জন্য কি বুমেরাং হচ্ছে-এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে। কারণ প্রচারে বেশির ভাগ আসনেই নৌকাকে ছাড়িয়ে গেছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের অন্তত ৭টিতে স্বতন্ত্রদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এসব আসনে দলের নেতাকর্মীরা নৌকা বাদ দিয়ে ঈগল, কেতলি, ফুলকপি মার্কার পক্ষে একাট্টা হয়ে গেছেন।
এসব সংসদীয় এলাকায় রীতিমত মুখোমুখি আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, মীরসরাইসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রতিনিয়তই নৌকা ও ডামি প্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। প্রচারে পাল্টাপাল্টি হামলা, বাড়ি ঘরে গুলি বর্ষণ, ভাঙচুরের মতো ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নৌকা বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কলহ বিরোধে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিবেধ চরমে উঠেছে। সামনের দিনগুলোতে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাতে খোদ আওয়ামী লীগের সমর্থক ভোটারেরাও ভোট কেন্দ্রমুখী হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে মীরসরাই, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, মহানগরীর ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর-পতেঙ্গা, পটিয়া, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালীসহ নয়টি সংসদীয় আসনে প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব আসনের নৌকার প্রার্থীরা। রাঙ্গুনিয়ায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আনোয়ারায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, কোতোয়ালী আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, রাউজানে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং সীতাকুণ্ড আসনে এস এম আল মামুনের আসনে শক্ত কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এ কারণে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন তারা। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নৌকার প্রার্থী নেই। সেখানে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে নৌকার প্রার্থী এম এ সালাম মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহজাহান চৌধুরী। জাতীয় পার্টির সোলায়মান আল শেঠকে ছেড়ে দেওয়া হয় বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন। সেখানে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন কেটলি প্রতীকের মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন ওই আসনের বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল নিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। ওই আসনে প্রার্থী মোট সাত জন হলেও এই দুইজনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও ভোটের মাঠে নতুন রুহেল। আর তাই প্রচারে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। পক্ষান্তরে তৃণমূল থেকে উঠে আসা গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে আছেন। ভোটারদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। এ অবস্থায় সেখানে ভোটের হিসাব উল্টে যেতে পারে বলেও ধারণা অনেকের।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব তরমুজ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রচারে অনেক এগিয়ে গেছেন তিনি। নৌকার প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সাবেক এমপি মরহুম রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। প্রথমবারের মতো ভোটে নেমেছেন তিনি। নৌকা পেয়েও দলের অনেক নেতাকে ভোটের মাঠে কাছে পাচ্ছেন না চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র মহিলা প্রার্থী সনি। এই আসনে প্রার্থী আটজন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকার সাথে তরমুজের হবে বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোকাবেলা করতে হচ্ছে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা। এই আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে মিতার মুখোমুখি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা মো. জামাল উদ্দিন। নৌকার বিপরীতে তিনিও প্রচারে বেশ এগিয়ে রয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী) আসনে প্রচারে এগিয়ে আছেন সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলম। ফুলকপি প্রতীক নিয়ে তিনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটি অংশও তার সাথে আছেন। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ মাঠে আছেন কেটলি নিয়ে। আর বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু নৌকা নিয়েই মাঠে আছেন। এই আসনে টানা তিনবারের এমপি ডা. আফছারুল আমিনের ইন্তেকালের পর কয়েক মাস আগের উপ-নির্বাচনে জয়ী হন মহিউদ্দিন বাচ্চু। আসন্ন নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় তরুণ এই নেতা।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে প্রথমবারের মতো ভোটে এসে প্রচারে এগিয়ে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন। কেটলি প্রতীক নিয়ে মাঠে তিনি। দলের একাংশের নেতাকর্মীরাও তার পক্ষে নেমে পড়েছেন। টানা তিনবারের এমপি আবদুল লতিফ প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি তার সমর্থকেরা। জানা গেছে, এই আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন নেতা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা সুমনের পক্ষে আছেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও চাপে আছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেয়ে এ আসনে জয়ী হলেও সামশুল হক চৌধুরী এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। এই আসনে দুই প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সংঘাত, সহিংসতা, পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম প্রকাশ্যে ঈগল প্রতীকের শামসুল হকের বিরুদ্ধে বিগত ১৫ বছর লুটপাটের অভিযোগ করছেন। অন্যদিকে প্রচারের প্রথম দিন থেকেই নৌকার সমর্থকেরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ সামশুল হকের।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভী। জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে পরপর দুইবার এ আসন থেকে নদভী এমপি হলেও আওয়ামী লীগের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি তাকে। এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ এ নেতার পক্ষে মাঠে নেমেছেন দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। এর ফলে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঈগল ও নৌকার সমর্থকদের মধ্যে প্রতিনিয়তই সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। বাসাবাড়িতে পাল্টাপাল্টি গুলিবর্ষণ, প্রচারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করা জব্বার সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহম্মেদের হাত ধরে বিএনপি থেকে এলডিপিতে যোগ দেন। এলডিপির মনোনয়ন নিয়ে দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া জব্বার দল থেকে বহিষ্কার হন ২০১৫ সালে।
পরের বছর তিনি দলবল নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হন। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার মাঠে নেমে প্রচারে এগিয়ে গেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১৫ (বাঁশখালী) আসনেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে এবারও নৌকার প্রার্থী বিতর্কিত মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। প্রার্থী ১০জন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশ এখন ঈগলের পক্ষে। এ আসনেও সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ