ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
ফিরে দেখা-২০২৩ এডিস প্রতিরোধে ব্যর্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৬ মৃত্যু ১০৭ জনের

মশার কামড়ে মৃত্যুর বছর

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

গেল বছরজুড়ে চট্টগ্রামে আলোচনায় ছিল ডেঙ্গু মশা। মশার কামড়ে ১০৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৬ জন। অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। তবে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন তুঙ্গে তখন মশার মারতে কামান দাগায় চসিক। দিনে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় নামনো হয় ড্রোন। বলা হয়েছিল ড্রোন দিয়ে মশার উৎপত্তি স্থল চিহ্নিত করে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।

কিছু এলাকায় লোক দেখানো অভিযানও চলে। তাতে বন্ধ হয়নি এডিস মশার প্রজনন। কর্পোরেশনের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে এডিসের উৎপাত চলে নগরজুড়ে। মহানগরীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু জ¦র। বেঘোরে মানুষের মৃত্যু, ঘরে ঘরে রোগী, হাসপাতালের বিছানা থেকে ফ্লোর সর্বত্রই রোগীর ঢল। এ ছিল পুরো বছরের চিত্র। মশক নিধনে ব্যর্থতার পাশাপাশি মশাবাহিত এ রোগ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় সচেতনতামূলক কর্মসূচিসহ তেমন কোন উদ্যোগই নিতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও ছিলেন নির্বিকার।

বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কোন তৎপরতাও ছিল না। বছরজুড়েই ছিল মশার দাপট। ডেঙ্গু আক্রান্তদের হিমশিম খেতে হয়েছে চিকিৎসা নিতে। হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার ঝক্কি-ঝামেলার পাশাপাশি ওষুধ-পথ্যের দামও ছিল আকাশছোঁয়া। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের। ভোগ্যপণ্যের বাজারের মত ওষুধের বাজারেও চলে সিন্ডিকেটের কারসাজি। স্যালাইনসহ ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় অতি জরুরী ওষুধ-পথ্যের কৃত্রিম সঙ্কটও সৃষ্টি করা হয়।

ডেঙ্গু জ্বর শনাক্তে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো গলাকাটা হারে টাকা আদায় করেছে। এ সিন্ডিকেটবাজির বিরুদ্ধে যথারীতি লোক দেখানো অভিযানও চলে। পরিবারের সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঘটেছে একই পরিবারে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা। বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। পুরো বছরজুড়ে ডেঙ্গুর উপদ্রব ছিল। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয় ৭৭ জন, মারা যান তিনজন। ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে কোন মৃত্যু না হলেও আক্রান্ত হয়েছেন যথাক্রমে ২২, ১২, ১৮ ও ৫৩ জন। জুনে এসে ২৮৩জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। মারা যান ছয়জন।

জুলাই মাসে দুই হাজার ৩১১ জন আক্রান্ত হন, মারা যান ১৬ জন। জুলাই মাসে ২৮ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্ত হন তিন হাজার ১১ জন। আগস্টে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৮৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন, মারা যান ২১জন। সেপ্টেম্বর মাসে দুই হাজার ৭৭৯ জন আক্রান্ত হন, মারা যান ১২জন। অক্টোবরে এক হাজার ২৫৪জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৬জন। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৪জন।

এক বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৬জন। ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ৪৪৫জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন, মারা যান ৪১জন। ২০২১ সালে ২৭১জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন মারা যান। ২০২০ সালে ১৭জন আক্রান্ত হলেও ডেঙ্গু জ্বরে কারও মৃত্যু হয়নি। গেল বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। বছরজুড়ে বেঘোরে মানুষের মৃত্যুর পর মশক নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মশার জ্বালায় অতিষ্ট নগরবাসী। থামছে না ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবও।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা