ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
‘জনগণের আকাক্সক্ষা গোটা বিশ্বের তাগিদকে উপেক্ষা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে একতরফা ভোটের পরিণতি শুভ হবে না। সাতই জানুয়ারি ঘিরে হতে পারে নাটকীয়তা। আছে সংশয়। আমরা কি দুর্ভিক্ষের দিকেই যাচ্ছি?” -বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ইয়াহইয়া আখতার

সাত তারিখ কাছে-দূরে এরপরে কী?

Daily Inqilab শফিউল আলম

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

অনেকে বলছেন সাত জানুয়ারি এখনও অনেক দূরে। তার আগে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে। তা আমজনতার জন্য বা স্বার্থের প্রশ্নে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচকও বিবেচিত হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ এখনও ভেঙে দেওয়া হয়নি। বহাল আছে। তাই সংসদ অধিবেশন ডেকে প্রধানমন্ত্রী চাইলে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থাটা করে আমেরিকা, ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বের চাপ কিংবা তাগাদা এবং সর্বোপরি জন-আকাক্সক্ষা ও দাবি পূরণে এগিয়ে আসতে পারেন। দিতে পারেন সময়োচিত বিচক্ষণতা ও সুমতির পরিচয়। অন্যদিকে অনেকে বলেন, নির্বাচন এখন কাছেই। সাত তারিখের পর ‘আট’ তারিখ আসা ছাড়া আর কী?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক মহল, কৃষক মজদুর, রাজনৈতিক কর্মীসহ অনেকেরই অভিমত হলো, সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে। সারাদেশের জনগণ, বিশ্বের চাওয়া, আকাক্সক্ষা ও দাবি উপেক্ষা করে এহেন একতরফা ভোটের পরিণতি শুভ ফল বয়ে আনবে না। অতীত থেকেই দেখা গেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া কোন নির্বাচনই ভালো হয়নি। এবারও ভালো হাওয়ার কারণ নেই।

এদিকে ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি যেমন জোরদার গতিতে চলছে, তার বিপরীতে সাধারণ মানুষের মাঝে এ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ন্যূনতম তো নেই; বরং ফিকে। মানুষের মুখে দেখা যায় না ভোটের মৌসুমের চিরাচরিত সেই হাসিখুশি স্বতঃস্ফূর্ত ভাব। সবারই মুখেমুখে ওই একই কথাই এখন ঘুরেফিরে আলোচনায়, আলাপে-আড্ডায় উঠে আসছে, এরপরে কী? আবার অনেকে বলছেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে সাত জানুয়ারির আগে অন্যকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও আসতে পারে। তবে সাত তারিখে ভোটের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারেন। এসব বিষয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে কৌতূহল, উত্তেজনা, সেই সাথে সংশয় ও হতাশার কথা উচ্চারিত হচ্ছে শহর বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জের সবখানে। তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও মানুষের মুখোমুখি হলেই এসব প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। ‘ভাই, বলেন তো নতুন আর কোন খবর আছে কিনা’।

নির্বাচন ও রাজনীতির সর্বশেষ হালচাল মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, কলামিস্ট ও চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. ইয়াহইয়া আখতার গতকাল রোববার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোন ভালো নির্বাচন অতীতে হয়নি। সাত তারিখেও ভালো নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা আশা করা যায় না। এদেশের জনগণের আকাক্সক্ষা, আমেরিকা, ইউরোপসহ গোটা বিশ্বের তাগিদকে উপেক্ষা এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে একতরফা ভোটের পরিণতি শুভ হবে না। এবারে নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই বিদেশি প্রভাবশালী সকল পক্ষ বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ কিংবা পরামর্শ দিয়ে আসছে। অতীতে তারা এভাবে প্রকাশ্যে ও অতটা জোরালোভাবে বলেনি।

ড. ইয়াহইয়া মনে করেন, সাতই জানুয়ারি ঘিরে হতে পারে নাটকীয়তা। আছে নানান সংশয়ও। নবগঠিত সরকার কতদিন টিকতে পারবে তা নিয়েও সংশয় আছে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সাত তারিখ দূরে, এখনও সময় আছে। জাতীয় সংসদ তো বহাল আছে। চাইলে অধিবেশন ডেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বন্দোবস্ত করা সম্ভব।
তিনি বলেন, কেউ নৌকা, কেউ স্বতন্ত্র, কেউ বিদ্রোহী সবাই তো নৌকার বা আওয়ামী লীগের। একদলের ভেতরেই চার পাঁচ গ্রুপ হলে নাশকতা হয়ে থাকে। দলীয় বিশৃঙ্খলা চরমে। অথচ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ নেই। আমজনতা ভোটকেন্দ্রে কয়জন যাবে তা নিয়ে সরকারের ও ইসির পরোয়া নেই। সিইসি তো আগেই একবার বলেছিলেন, এক শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে গেলেও নির্বাচন বৈধ হবে। অথচ দেড় মাস আগে বলেছিলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এদিকে মাঠের প্রধান বিরোধীদল মাঠেঘাটে ময়দানে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছে, জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভোটারদের অংশগ্রহণে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ড. ইয়াহইয়া আখতার বলেন, সবকিছু তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। এহেন একতরফা নির্বাচন রাজনীতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী নিজেই কিছুদিন আগে টুঙ্গিপাড়ায় বলেছেন, আগামী মার্চ মাসের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথাগুলো। তাহলে আমরা কী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সঙ্কটের দরুণ ক্রমেই এক দুর্ভিক্ষের দিকেই যাচ্ছি?


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা