জনজীবন কাহিল : দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নীলফামারীতে ৯.২ ডিগ্রি

উত্তরে জেঁকে বসেছে শীত

Daily Inqilab রেজাউল করিম রাজু, শফিকুল ইসলাম বেবু, মো. সম্রাট হোসাইন, উত্তরাঞ্চল থেকে

০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম

উত্তরের জনপদে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চল। ঠাণ্ডাজনিত রোগও বেড়েছে। গতকাল নিলফামারীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ছিল ১০.৭ ডিগ্রি। তীব্র শীতে কাঁপছে রাজশাহী। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কুয়াশার মিশেলে হাড় কাঁপানো শীত পড়ছে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নাকাল হয়ে পড়েছে নগরজীবনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষগুলো যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পথের ধারে খড়কুটো জ্বালিয়ে তারা শীতের কামড় থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে। গতকাল সকালে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সকাল ৬টা থেকে ৯ টার মধ্যে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। কুয়াশা ও হিমেল বাতাস বইতে থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। দেখা যায়নি সূর্য। কর্মজীবী মানুষেরা পড়েছে বিপাকে। নাক-মুখ ঢেকে গায়ে মোটা চাদর অথবা কম্বল চাপিয়ে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর অনেক জায়গায় রাস্তার পার্শে আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করার চেষ্ট করে যাচ্ছে। তীব্র শীতের কারণে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছে না। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রহিদুল ইসলাম ইনকিলাকে জানান, রাজশাহীতে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। ঘন কুয়াশায় সূর্য দেখা যাচ্ছে না। অন্তত ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। বাতাস বইছে তাই শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশা কেটে গেলে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। পঞ্চগড়ে কুয়াশায় আচ্ছন্ন শহর ও গ্রামের জনপদ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। উওর পশ্চিমের হিম বাতাসের কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষকে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত সোমবার ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। দেখা যায়, কুয়াশায় আচ্ছন্ন শহর ও গ্রামের জনপদ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। অনেকে খড়খুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। গবাদি পশুরাও ঠান্ডায় জরোসরো। স্থানীয়রা জানায়, হিমালয় থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসায় এখানে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। সকালে ঠান্ডায় হাত পা বাঁকা হয়ে আসে। যতই দিন যাচ্ছে ততই ঠান্ডা বাড়ছে। গাড়ি চালক আনিছুর রহমান জানান, রাত একটু গভীর হলে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় জনপদ। ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। সকালেও হেড লাইট দিয়ে চলতে হয়। রাজমিস্ত্রি হযরত আলী জানান, দুদিন ধরে এতো ঠান্ডা যে কাজ করতে হাত বাঁকা হয়ে আসে।তারপরও কাজ করতে হচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ্ ইনকিলাবকে জানান, চলতি মাসে বাতাস ও কুয়াশা বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, রোদ্র কম। এজন্য ঠান্ডাও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে পড়েছে জনপদ। জেলার সড়ক ও নৌ পথে ঘন কুয়াশায় ব্যহত হয়েছে চলাচল ব্যবস্থা। ফলে দিনের বেলা সড়ক পথে হেড লাইট জালিয়ে চলছে যানবাহনগুলো। এদিকে গত তিন দিন ধরে কনকনে ঠান্ডায় ভোগান্তির মুখে পড়েছে মানুষজন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশু বয়সীরা পড়েছে চরম বিপাকে। শীত নিবারণে পর্যাপ্ত কাপড় না থাকায় ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন তারা। কুড়িগ্রাম রাজার হাট আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সকাল ৬ টায় জেলা ১৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা ঠিক থাকলে রাতে তাপমাত্রা কমতে থাকবে । সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার প্রায় সাড়ে চারশত চরাঞ্চলের শীতের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়া কুয়াশায় কাজের সন্ধানে ছুটে চলা মানুষজন পড়ছে ভোগান্তির মুখে। তীব্র ঠান্ডায় সবজি ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা নিয়ে তাদের দুঃশ্চিন্তা দিন দিন বেড়েই চলছে। কুড়িগ্রাম পৌর শহরের টাপু ভেলাকোপা গ্রামের মো. আসলাম হোসেন বলেন, আমি হোটেলে কাজ করতে যাচ্ছি। সারারাত কনকনে ঠান্ডা দিনের বেলাও একই অবস্থা। এমন অবস্থায় আমার মত খেটে খাওয়া মানুষজনের কষ্টের শেষ নেই। কাজ না করে ঘরে বসে থাকলে তো পেটে ভাত জুঠবে না। ধরলার পাড়ের নজরুল ইসলাম বলেন, দু তিন দিন ধরে খ্বু ঠান্ডা পড়তেছে। সকালে উঠে জমিতে কাজে যেতে হয়। কাজ করতে গিয়ে হাত পা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র ইনকিলাবকে জানান, জেলায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাতে তাপমাত্রা আরো কমতে থাকবে বলে জানান তিনি। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এ মাসে একটি শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
নীলফামারীতে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নীলফামারীতে গত তিন দিন ধরে তাপমাত্রা কমছে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নীলফামারীতে গত তিন দিন ধরে তাপমাত্রা কমছে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। গতকাল নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ তথ্য জানান। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। শীতের মধ্যে বের হলেও কাজ মিলছে না। রনি ইসলাম নামে অটোরিকশা চালক বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা আয় হয়েছে। এই টাকা দিয়ে কীভাবে চলবেন? শীতে রাস্তাঘাটে মানুষ কম। ভ্যান চালক আনারুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার সারা দিনে ১৫০ টাকা আয় হয়। ছয় জনের সংসার। দুই কেজি চাল আর হাফ কেজি আলু কিনে টাকা শেষ। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে বের হয় না। তাই আয়-রোজগারও নেই। নৈশ্যকোচ চালক মো. লাভলু ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে কোচ নিয়ে খুব সাবধানে নীলফামারী এসেছেন। কুয়াশায় ১০ হাত দূরেও কিছু দেখা যায় না। ভয়ে থাকতে হয়, কখন দুর্ঘটনা হয়। এখন বেলা ১১টা, তাও গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, নিয়মোনিয়াসহ শীতজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বলে জানান নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান। নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, গরিব-অসহায় মানুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও কম্বলের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চার দিনের সফরে সোমবার সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
নতুন দেশ গঠনে আনসার ভিডিপির প্রশিক্ষিত তরুণরা বড় শক্তি : আদিলুর রহমান
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী: সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়
স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে চায়: আমিনুল হক
পাহাড় কাটা প্রতিরোধে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের কঠোর বার্তা
আরও

আরও পড়ুন

এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল

এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল

ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড

ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড

‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই

‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা

পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি

পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি

বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব

এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার

এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার

কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন

কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন

এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান

এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান

বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি

বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি

শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল

শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল

নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।

নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।

কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী

কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী

নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ

নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ

বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা

বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা

পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়

পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়

সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা

সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে