নৌকা ডোবাতে স্বতন্ত্রদের পেছনে আ.লীগের নেতাকর্মীরা
০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
পঞ্চাশোর্ধ আমির হোসেন বললেন, গত দুটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এবারও ভোট দেয়ার প্রয়োজন হবে না। কারণ ভোট দিলেও নৌকা না দিলেও নৌকা পাস। তার প্রশ্ন প্রার্থীরা সব এক দলের, এটা কেমন ভোট। চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব কাটগড়ের বাসিন্দা আমির হোসেনের মত বেশিরভাগ ভোটারেরই ভোট নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভাগ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন উৎসাহ নেই।
অথচ দেশে জাতীয় নির্বাচন মানে উত্তাপ-উত্তেজনা অন্যরকম উৎসবের আমেজ। সম্পূর্ণ উল্টোচিত্র এখন ভোটের মাঠে। টানা তৃতীয়বারের মত এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটারদের মধ্যে নেই কোন উচ্ছ্বাস। খোদ সরকারি দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নৌকার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এবং নৌকা ডুবাতে নেতাকর্মীদের একাংশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘটনায় রীতিমত বিভ্রান্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকেরাও।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের ১০টিতেই নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র তথা ডামি প্রার্থীরা। এসব আসনে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত হচ্ছেন নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমর্থকেরা। আর তাতে এলাকাজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দুইটি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। সে দুটিতেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। লাঙ্গল ঠেকাতে একাট্টা আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তবে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত চারটি আসনে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র কোন প্রার্থী নেই। এর ফলে নৌকার প্রার্থীরা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে একতরফা হয়ে পড়েছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুসারী কিছু রাজনৈতিক দল এবং কিংস পার্টি হিসেবে নবগঠিত কয়েকটি দলের নেতারা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের নির্বাচন হিসেবে দেখছেন সাধারণ ভোটারেরা। নৌকার বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় ভোটের আগেই ফলাফল কি হবে তা পরিষ্কার। ভোটের আগেই ভোটের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ভোট নিয়ে কোন উৎসাহ নেই। একতরফা ভোটে প্রচার-প্রচারণাও তেমন জমছে না। যে কয়টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি নেই সেখানে লোক দেখানো কিছু গণসংযোগ ও পথসভা করছেন আওয়ামী লীগের ভিআইপি প্রার্থীরা। নৌকা স্বতন্ত্রের লড়াই যে কয়টি আসনে সেখানেও ভোটের আমেজের বদলে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
ভোটের বাকি আর মাত্র চার দিন। অথচ সংসদীয় আসনগুলোতে নেই কোন উৎসবের আমেজ। নেই ব্যাপক কোন গণসংযোগ, মিছিল, পথসভা। ভোট চেয়ে মাইকিং করার গরজও নেই আওয়ামী লীগের কর্মীদের। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে রেকর্ড করা সেøাগান প্রচার করা হচ্ছে। প্রতীক ও প্রার্থী নিয়ে রচিত প্যারোডি গান বাজানো হচ্ছে নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে। বেশিরভাগ ক্যাম্প ফাঁকা। নেই চেয়ার-টেবিল, কোথাও চেয়ার-টেবিল থাকলেও নেই কর্মী-সমর্থকদের আড্ডা-জটলা। প্রার্থী কিংবা বড় কোন নেতার পেছনে গণসংযোগে শরিক হচ্ছেন হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী ও সমর্থক। গণসংযোগের নামে চলছে ফটোসেশন, সেলফি তোলার হিড়িক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ও ব্যানারে এগিয়ে আছেন নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আচরণবিধি ভেঙ্গে রঙিন পোস্টারও লাগিয়েছেন কোন কোন প্রার্থী। সব পোস্টারই প্লাস্টিকে লেমিটেনিং করা। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও তা দেখার কেউ নেই। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় ভোটাররা গৌণ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে ভোটারদের কাছে যাওয়ার গরজ নেই প্রার্থীদের। অথচ একসময় অলিগলি চষে বেড়াতেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। বাসাবাড়িতে গিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতেন নারী কর্মীরা। এবারের নির্বাচনে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। যেসব আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি নেই সেখানে প্রচারও চলছে নামমাত্র। আর স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ যেখানে বেশি সেখানে প্রচারের চেয়ে শক্তি প্রদর্শন ও শোডাউনে ব্যস্ত নৌকার প্রার্থীরা।
চট্টগ্রাম-১ মীরসরাই আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। তার অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা এ পর্যন্ত তার ভোটের প্রচারে ২২ দফা হামলা করেছে। তবে নৌকার সমর্থকরা বলছেন, ১৫ বছরে লুটপাটের কারণে ক্ষুব্ধ জনতা তার ওপর হামলা করছে এটি তার কর্মফল।
চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে মুখোমুখি নৌকার আবু রেজা নদভী ও স্বতন্ত্র সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেব। তাদের অনুসারীরা প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনেও সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন নৌকার মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা। চট্টগ্রাম-১৩ চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম-১০ পাহাড়তলী-হালিশহর, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর পক্ষে। এ লক্ষে সরকারি তরফেও নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি কর্মকর্তারা প্রতিদিনই ভোটারদের উদ্দেশে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। বলছেন নিরাপদে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা দেবেন। প্রার্থীরাও ভোটারদের কেন্দ্রে আসার অনুরোধ করে যাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফলে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে