তামাশার নির্বাচন কন্টকমুক্ত রাখতে, একদফার সংগ্রাম বানচাল করতে পুলিশের প্রটেকশনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগুন সন্ত্রাস করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, এখন গোটা পৃথিবীবাসী জানেন যে, আগুন দিয়ে গাড়ী পোড়ানো, ট্রেনে আগুন, ট্রেন লাইন উপড়ানো, সহিংসতা, গান পাউডার দিয়ে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার মূল হোতা আওয়ামী লীগ। এবারো তামাশার নির্বাচন কন্টকমুক্ত রাখতে,একদফার সংগ্রাম বানচাল করতে পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যেমনটা তারা ১৯৯৬, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। প্রায় প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামীলীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটা প্রকাশ হচ্ছে কোনোটা ঢাকা দিচ্ছে পুলিশ। গতকাল শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পাতানো নির্বাচনের জন্য দেশটাকে জ্বলন্ত অগ্নিগিরি বানিয়ে ফেলেছে। দেশকে এভাবে মৃত্যু উপত্যকা এবং জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ বানানো হয়েছে। এই স্বৈরাচার জালিম সরকার নিরীহ মানুষের জীবন নিয়ে পৈশাচিক খেলায় মেতেছে। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকা-ে হতাহতের নৃশংসতম বর্বরোচিত ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরই আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি। প্রকৃত দোষীদের আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সাত সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে মহানগর ডিবি পুলিশ প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় নাকি বিএনপি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা এই ঘটনায় বিএনপিকে দূষছেন। কি হাস্যকর বয়ান। ক্রসফায়ারের নিত্যদিন একই কাল্পনিক গল্পের মতো তাদের প্রতিটি ঘটনায় গল্প তৈরি থাকে। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে তুলে নিয়ে গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এখন তাদেরকে নৃশংস নির্যাতন করে দোষ চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও তাদের দলীয় পুলিশ প্রশাসনের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতে বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর দায় চাপিয়ে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে সহিংস হিসেবে দেখাতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শুক্রবার রাতে ট্রেনে আগুনের ঘটনা ওবায়দুল কাদেরের গুপ্ত হত্যা-নাশকতার আগাম বক্তৃতার বাস্তবায়ন কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। কয়েকদিন আগে সড়ক-পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিএনপি নাকি গুপ্ত হত্যা ঘটাতে এজেন্ট ঠিক করেছে। পুলিশের আইজিপিও নাশকতার কথা বলছেন। গত মাসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার দুদিন আগেই ডিএমপি থেকে স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দিয়ে ঢাকার হাসপাতালসমূহে স্ট্যান্ডবাই ডাক্তার, এ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবা প্রস্তুত রাখতে চিঠি দিয়েছিলো। কারণ তারা ভয়াবহ নাশকতার প্ল্যান করেছিলো। একইভাবে তারা বড় ধরনের নাশকতা, গুপ্তহত্যার প্ল্যান করে আগেই বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে রাখে। ট্রেনে আগুনের ঘটনার বিশ্লেষণে জনমনে প্রতীয়মান রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশে এই নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়ার আগে বিকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ছুটি বাতিল করে জরুরি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। শুক্রবার দুপুরে এক বিফ্রিংয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং সুনামগঞ্জ থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর আপন বড় ভাই বর্তমান আইজিপি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির পরিকল্পনা জেনে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একদিন আগে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছিল, রাজধানীর সরকারী হাসপাতালগুলি খালি রাখতে, এমনকি আইসিইউ। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এই নির্দেশনাটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। পুলিশের এই প্রস্তুতিমুলক উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছিল, নাশকতার সুস্পষ্ট তথ্য ও পরিকল্পনা তাদের কাছে কিভাবে এলো এবং তারপরেও এটি রোধে কেন তারা কোনো ব্যবস্থা নিলেন না, জনমনে এসব প্রশ্ন রয়েছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গোটা বাংলাদেশ। সারাদেশে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার মোতায়েন, রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের তল্লাশি থাকার পরেও ট্রেনে কারা আগুন দিলো তা বুঝতে বিজ্ঞানী হওয়া লাগে না। তারা কি আওয়ামী লীগের, দুর্নীতিবাজ ও সিন্ডিকেট, মাফিয়া চক্রের পরিকল্পনা জানতে পারে না শুধু বিএনপির পরিকল্পনাই শুধু জানে? তবে আগুন দিয়েছে কারা বাংলাদেশের জনগণসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব জানে। দেশের জনগণ জানে বিএনপি একটি উদারনৈতিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দল। বিএনপিকে নিয়ে অনেক গল্প সরকার সাজিয়েছে, অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনটাই আখেরে ধোপে টেকেনি।

তিনি বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দিয়ে নারী শিশুসহ চারজন সাধারণ নিরীহ মানুষকে নৃশংসতম ভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এই বর্বরতার ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি। এই ক্ষমতা লিপ্সু সরকারের কোন তদন্তের উপর দেশের জনগণের ন্যূনতম আস্থা-বিশ্বাস নেই। কারন তাদের তদন্তের টার্গেট থাকে বিএনপিকে দোষী বানানো। অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনটাই আখেরে ধোপে টেকেনি।