নির্বাচনী অপরাধের বিচার কোথায়?
০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই প্রচলিত বিধি-বিধানের বাইরে প্রার্থী ও ভোটারদের জন্য অবশ্য প্রতিপালনীয় কিছু আচরণবিধি প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন। এ আলোকে প্রার্থী এবং ভোটারকে শাস্তি দেয়ার বিধান থাকে। সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে (সামারি ট্রায়াল) অভিযুক্তদের সাজা দেয়া হয়। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামারি ট্রায়ালের জন্য ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ৩শ’ নির্বাচনী আসনে গত ৫ জানুয়ারি থেকেই দায়িত্ব পালনে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী অপরাধ বিচারে তারা আগামি ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। নির্বাচন কমিশন প্রতি নির্বাচনের আগেই আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কিছু ‘শাস্তি’ নির্ধারণ করে। এবং সেটি ‘কঠোরভাবে’ অনুসরণ করতে প্রার্থী, তাদের সমর্থক এবং ভোটারকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও ‘নির্বাচনী আচরণবিধি’ লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। কম-বেশি অর্থদ- কিংবা সতর্ক করে দেয়ার মতো শাস্তির কথা জানা যায়। কিন্তু প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল কিংবা অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানোর মতো কোনো দৃষ্টান্ত নির্বাচন কমিশন স্থাপন করতে দেখা যায় না। বিশ্লেষকদের মনে তাই প্রশ্ন-নির্বাচনী আচরণ বিধিতে বহু বিধি-বিধানের কথাইতো উল্লেখ থাকে। কিন্তু এসবের প্রয়োগ ঘটে কতটা ? যদি প্রয়োগই না থাকে তাহলে অলঙ্কারিক আচরণবিধি করে লাভই বা কি ?
নির্বাচনী আচরণ বিধি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আচরণ বিধি লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী, তার কর্মী-সমর্থক বা ভোটারকে শাস্তি দিতে পারে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এ বিধিমালার পাশাপাশি নির্বাচনসংক্রান্ত বেশকিছু ফৌজদারি অপরাধের বিধান বলা আছে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৯ক অধ্যায়ে। যে নির্বাচনই হোক না কেন, কেন দন্ডবিধির এ বিধানগুলো প্রতিটিতেই কার্যকর হবে।
ফৌজদারি দন্ডবিধির ১৭১ক ধারায় ‘ভোটাধিকার’ বলতে বোঝানো হয় একজন নাগরিকের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার অধিকার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অধিকার এবং সর্বোপরি ভোটাধিকার প্রয়োগ কিংবা ভোটাধিকার না করার অধিকার। ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে যেমন কাউকে বিরত রাখার চেষ্টা করা যাবে না, তেমনি ভোট না দিতে চাইলেও কাউকে বাধা দেয়া যাবে না। ভোটাধিকার প্রয়োগে আইনত: প্রার্থী কিংবা ভোটার থাকবেন সম্পূর্ণ স্বাধীন। ভোটাধিকার যখন কোনো ব্যক্তি অন্যের প্ররোচনায় পড়ে তার কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে প্রয়োগ করতে যান, সেটি আইনের চোখে অপরাধ। এ ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ এবং প্রদানকারী উভয়েই আইনের চোখে সম অপরাধী। ফৌজদারি দন্ডবিধির ১৭১খ ধারায় উৎকোচের এ বিধান স্পষ্ট করা আছে। কারো কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে অর্থ নিয়ে কেই যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন কিংবা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন, সেটি আইনের চোখে অপরাধ গণ্য। অনুরূপ উৎকোচের বিনিময়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করাও অপরাধ।
বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনে মৃত, গুম হওয়া এবং প্রবাসী ব্যক্তিদের ভোট প্রদানের তথ্য জানা যায়। অথচ এ অপরাধে সংশ্লিষ্ট কাউকেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। দেখা যায় নি। যদিও নির্বাচনী আইনেই এটি গুরুতর অপরাধ। ফৌজদারি দ-বিধিতেতো বটেই।
নির্বাচনী আইন পর্যালোচনায় দেখা যায়, জীবিত, মৃত কিংবা এমন কোনো ব্যক্তি যিনি এরই মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ফেলেছেন, তাদের নামে যদি অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট দেন কিংবা একই ব্যক্তি একাধিকবার ভোট প্রদান করেন,তাহলে এটি ফৌজদারি অপরাধ। এ অপরাধের দায়ে অন্যূন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদ- প্রদানের বিধান থাকলেও ২০১৮ সালে ‘অনেক মৃতব্যক্তি’কেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন-মর্মে জানা যায়। অথচ এই অপরাধে কাউকে সাজা ভোগ করতে হয় নি।
প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রদানও ফৌজদারি অপরাধ। দ-বিধির ১৭১ছ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র বা আচরণ সম্পর্কে নিজে যা বিশ্বাস করে না, এ রকম কোনো তথ্য ভোটারদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রদান করলে অর্থদ-ে দন্ডিত করার বিধান আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের এসব বিধানের অধিকাংশই কাগজে সীমাবদ্ধ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার আচরণবিধি ভঙ্গের বহু নজির লক্ষ্য করা যায়। বিপরীতে কিছু অর্থদ- ব্যতিত আইনের তেমন কোনো প্রয়োগ দেখা যায় নি।
ভোটের দিন নির্বাচনী অপরাধ বিচারার্থে ৬৫৩ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, তারা নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধবংস করা, ব্যালট বক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাঁধা প্রদান বা বাধ্য করা, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশকে ভোটের উপযোগী না রাখার মতো অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করবেন। যদিও ‘নির্বাচন’ বলতে শুধু ভোটের দিনটিকেই বোঝায় না। প্রার্থীগণ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই গুরুতর বহু অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিপরীতে কিছু অর্থদ- হলেও প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার মতো কোনো শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায় নি। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- ভোটের দিন অপরাধ সংঘটিত হলেই বা কি শাস্তি হতে পারে ?
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো: মঈদুল ইসলাম মনে করেন, ভোটের দিন যত অপরাধ সংঘটিত হয় তা কিছু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে প্রতিকার করা সম্ভব নয়। ভোট কেন্দ্রে ভোটারকে আনতে বাধ্য করার মতো অপরাধগুলো সাধারণত: আড়ালে-আবডালে হয়ে থাকে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুধু তার সম্মুখে সংঘটিত অপরাধের বিচার করতে পারবেন। আগে কিংবা পরে নির্বাচনী অপরাধের বিচার তিনি করতে পারবেন না। ম্যাজিস্ট্রেটের চোখের সামনে ঘটতে হবে। তিনি বলেন, কেউ যদি জোর করে ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধ্য করেন, সে ক্ষেত্রে হয়তো জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের কিছুই করার থাকবে না। ঘরে ঘরেতো ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার সুযোগ নেই। সাবেক এই সিনিয়র বিচারকবলেন, মোবাইল কোর্ট বা ম্যাজিস্ট্রেট নামিয়ে সব ধরণের নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার
৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ
২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ
বাইতুল মোকাররমে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আহত ৩ মুসল্লি
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার
বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২
পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল
মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে পালিয়ে গেলেন আওয়ামী খতিব
ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ
শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব
আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর
আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩
কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা
সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা
মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার
বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে