ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং গুলশানস্থ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এ পর্যন্ত কত রোগী মারা গেছে সেই তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।

গতকাল সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহর ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত আদেশের পাশাপাশি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকূলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না-এই মর্মে রুলনিশি জারি করেন। এছাড়া শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। সরকারপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
গত ১৪ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের শুনানি হয়। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে আদেশের তারিখ ধার্য ছিলো ১৫ জানুয়ারি।
গত ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন আয়ানের পিতা। রিটে আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সনদ বাতিল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এ রিট করেন। পরে শিশু আয়ানের বাবা রিটে পক্ষভুক্ত হন এবং নতুন করে রিটে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

এদিকে, সুন্নাতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শিশু আয়ান মারা যায়। টানা ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল আয়ান। এর আগে ৩০ ডিসেম্বর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়ানকে সুন্নাতে খৎনা করা হয়। তখন তাকে এনেসথেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। এরপর মৃত্যু পর্যন্ত তার আর জ্ঞান ফেরেনি। ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলার কারণে আয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা দায়ের করেছেন আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ।

এর আগে ২০২০ সালের ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুনে পুড়ে নিহত হন ৫ রোগী। তাদের মধ্যে ৩ জনই ছিলেন করোনা আক্রান্ত। নিহতরা ছিলেন, মো: মাহবুব (৫০), মো: মনির হোসেন (৭৫), ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪), খাদেজা বেগম (৭০) এবং রিয়াজ উল আলম (৪৫)। এ ঘটনা তদন্তে অগ্নিকাণ্ডে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ওইবছরের ঘটনায় হাইকোর্ট মৃতদের ৪ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আদেশটি স্থগিত হয়ে যায়। সেই ক্ষতিপূরণের টাকা ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি পরিশোধ করেছে বলে জানা যায় নি।