ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন বাতিলের চেষ্টা চলছে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে। হারার ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে করেনি। তাদের চক্রান্ত শেষ হয়নি, নির্বাচন বাতিলের চেষ্টা চলছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন অভিযোগ করেন।

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, দোয়া করবেন, এখনো চক্রান্ত শেষ হয়নি। এখনো শুনি তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার লাফালাফি করে। নির্বাচন বাতিল করতে হবে, এই করতে হবে সেই করতে হবে। যাই হোক জনগণের ভোটে আমরা সরকারে এসেছি জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাব।

বিএনপি-জামায়াত এখন নির্বাচন বাতিলের দাবি করছে এমন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি পরাজয়ের ভয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং জনগণের কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতায় আসার অন্ধকার গলি খুঁজছে।

বিএনপির সমালোচনা করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জানে জনগণ তাদের বর্জন করেছে। এ কারণেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তাই, তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ক্ষমতা যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। তারা এখন নির্বাচনে আলোর পথ এড়িয়ে অন্ধকারের গলির দিকে তাকিয়ে আছে। শেখ হাসিনা প্রবাসীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।

২০০৮ সালের জাতীয় সসদ নির্বাচনের উল্লেখ করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। অপর দিকে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ আসন পেয়েছিল। বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তখন থেকেই তারা কোনো নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনে আগুন লাগিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। তারা যত বেশি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড-অগ্নিসন্ত্রাস করবে, জনগণ তত বেশি তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই তারা জানে যে, জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে বর্জন করেছে সেজন্য নির্বাচন করতে চায় না। এজন্যই নির্বাচন বানচাল করে কীভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় তারা সেই পথ খুঁজে বেড়ায়। অন্ধকার গলি খুঁজে বেড়ায়, আলো ঝলমল নির্বাচন আর জনগণের পথ হারিয়ে ফেলে।

শেখ হাসিনা বলেন, নিজেরা অফিসে তালা দেয়, আবার নিজেরাই ভাঙ্গে। এনিয়ে আবার গর্ববোধ কর, যে চাবি হারিয়েছে। চাবি গেল কোথায়? তালাতো তাদেরই দেওয়া ছিল। তাদের চাবি খোয়া যাবে, চাবি হারাবে এবং তারা পথও হারাবে। তারা পথ হারানো পথিক হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, তাদের একটাই দক্ষতা আছে, অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, লঞ্চে ট্রেনে আগুন দেওয়া, রেলের লাইন খুলে দিয়ে, রেলের পাত খুলে ফেলে মানুষ হত্যা করা। মানুষ মারার ফাঁদ পাতায় তারা ওস্তাদ। তাদেরকে জনগণ শুধু নির্বাচন নয়, বারবারই তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং হারার ভয়েই নির্বাচন করেনি। কিন্তু জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় প্রসঙ্গে বলেন, এ নির্বাচনে বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়। নির্বাচনে বিজয় গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিজয়। তিনি দেশ পরিচালনায় সকলের সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করেন।

জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়াই লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেন জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি। অন্তত এটুকু বলতে পারি গত ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি বলেই আজকে বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব নেই। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, বাংলাদেশের মানুষ এখন আরো উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে।

তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। আমি বলবো এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, যেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা তো নির্বাচন উম্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। হ্যাঁ নৌকা মার্কা দিয়েছি, সেই সঙ্গে বলেছি যারা নির্বাচন করতে চায় করতে পারবে। উম্মুক্ত করে দিয়েছি, কাজেই সেখানে নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে।

বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে এবং জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে রয়েছি। সেখানে নারী হত্যা, শিশু হত্যা হচ্ছে যা গণহত্যার শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দাও জানিয়েছি। কিছু সহযোগিতাও পাঠানো হয়েছে এবং আরো পাঠানো হবে।
মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারে যখন ঝামেলা হয়েছিল তখন আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি এবং এ নিয়ে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোন বিবাদে জড়াইনি বরং আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিশ্বে চলমান অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহবান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন ফোরামে যেখানে কথা বলেছি সেখানেই অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে এই অস্ত্রের টাকা শিশুদের খাদ্য, শিশুদের চিকিৎসা এবং তাদের শিক্ষার জন্য এবং মানবকল্যাণে ব্যয় করার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, যেসব দেশ অস্ত্রের জন্য টাকা ব্যয় করছে সেগুলো তো সেদেশের জনগণ যে ট্যাক্স দেয় সেই ট্যাক্সেরই টাকা। কাজেই তাদের টাকা ধ্বংসের জন্য কেন ব্যয় হবে?

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের উন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় রেমিটেন্স বৈধ চ্যানেলে পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যদি অনলাইনে ব্যাংকিং এর সুযোগ নিয়ে টাকাটা পাঠায় তাহলে যেটুকু পরিবারের জন্য খরচ হবে বাকিটা তার একাউন্টে জমা থাকবে এবং নিজেরও একটা ভরসার জায়গা থাকবে। তিনি তাঁর সরকারের চালু করা সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং প্রবাসী পেনশন স্কিম গ্রহণ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন গণআন্দোলন এবং সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষের কল্যাণ হোক, তাদের জীবন মান উন্নত হোক। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সমস্ত কার্যক্রম। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়ে গিয়েছিলেন, তার থেকে একধাপ এগিয়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে তুলে এনেছি এবং ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো