আয়ু কমছে রাজধানীবাসীর
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
ঢাকার বায়ুদূষণ রকম বেড়েছে। রাজধানীবাসী গত এক সপ্তাহ যাবৎ দুর্যোগপূর্ণ বাতাসে নি:শ্বাস নিচ্ছেন। যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ঢাকা বিশ্বের বায়ুদূষণের শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ঢাকার বাতাসের স্কোর ফেব্রুয়ারির প্রথম দুইদিন ছিল ৩০০ এর উপরে। যা নগরবাসীর জন্য ‹ঝুঁকিপূর্ণ›। গতকালও এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৯০। যা অস্বাস্থ্যকর। গত ১ সপ্তাহ যাবত ঢাকা বায়ুদূষণের শহরে ঘুরে ফিরে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন দিনই ছিল শীর্ষে।
বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউ-এয়ার) সূচক অনুযায়ী, বছরের অধিকাংশ সময় অস্বাস্থ্যকর থাকে ঢাকার বাতাস। তবে ২০২৩ সাল ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বায়ুমান সূচকে ঢাকার গড় স্কোর ছিল ১৭১, যা আগের বছর ছিল ১৬৩। নতুন বছর ২০২৪ এর জানুয়ারির ১০ দিন বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল রাজধানী ঢাকা।
বাতাসের মান ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’, ১৫০ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়, ৩০১ এর বেশি একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। এবারও শীত মৌসুমের শুরু থেকেই রাজধানীর বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর। ঢাকায় বায়ুমানের অবনতির মাশুল দিচ্ছে এই শহরে বসবাসকারীরা। অস্বাস্থ্যকর বায়ু নিশ্বাসের সঙ্গে যাওয়ায় রোগাক্রান্ত হচ্ছে শহরবাসী। বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণরা ভুগছেন বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর বায়ুর কারণে সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তাদের মতে, দূষণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের সম্ভাবনা থাকে। প্রথম দিকে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া হলেও একটা সময় রোগীদের ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের করা গবেষণায় বলা হয়, বায়ুদূষণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমেছে ৭ বছর। আর রাজধানীবাসীর (ঢাকাবাসীর) গড় আয়ু কমছে ৮ বছর করে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের কোনো দেশের অধিবাসীদের গড় আয়ু কী পরিমাণে কমছে, সেই হিসাব ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। এটি আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। কিন্তু দূষণরোধে আমাদের সরকারের আন্তরিক কোন উগ্যোগ লক্ষ করা যায় না। দূষণরোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বা অন্যদের মধ্যে সমন্বয় নেই। সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পরিকল্পনা নেই। ফলে প্রতি বছর মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি রোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিক কোন উগ্যোগ লক্ষ করা যায় না, সরকার একেবারেই নিশ্চুপ। বর্তমান বায়ুদূষেণের যে মাত্রা তা স্বাস্থ্যের জন্য কী পরিমাণ ক্ষতিকর- সেটা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। শহরে কলকারখানার ধোঁয়া তো রয়েছে। একই সঙ্গে শীতকালে ঢাকা শহরে বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলে। রাস্তা কাটাকাটি করা হয়। ফলে দূষণ আরও বেশি হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা। একদিকে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তাদের অর্থের অপচয় হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, রাজধানী বায়ুদূষণ ও পরিবেশ দূষণ রোধে ইতোমধ্যে আমরা ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ কর্মপরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন হলে আশা করি রাজধানীবাসী একটি নির্মল বাতাসের নগরীতে বসবাস করবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন