নগরীতে নির্মাণাধীন একটি হিমাগারে (কোল্ড স্টোরেজ) অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। দমকল কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় তিনঘণ্টা সময় লেগেছে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় সেখানে শ্রমিক কর্মচারীরা ছিলেন না। তাতে বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। ভবনটিতে অবাধে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা (ভেন্টিলেশন) না রাখায় প্রচুর ধোঁয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে চারতলা ভবনটিতে আগুন লাগে, যার পুরোটিই কোল্ডস্টোরেজ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই ভবন থেকে বের হওয়া প্রচুর ধোঁয়ার কারণে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাজা মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোর নামে এ হিমাগারটি নির্মাণ করছেন এস আলম গ্রুপের পরিচালক শহীদুল আলম। তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে সেটি নির্মাণ করছেন বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপক আশীষ কুমার নাথ।

প্রত্যক্ষদর্শী সিয়াম নামে স্থানীয় এক যুবক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কয়েকজন এক্সেস রোডের মুখে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ ভবনটির ভেতর থেকে ধোঁয়া দেখতে পাই। প্রথমে ভেবেছি, নির্মাণ কাজের জন্য ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে দেখি, ধোঁয়া আরো বাড়তে থাকে। বাইরে থেকে ভবনটির ভেতরে বৈদ্যুতিক তার, গ্যাসের সিলিন্ডারসহ আরো বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখতে পাই।

ভবনটির পাশে মাহবুব এন্টারপ্রাইজ নামে এক দোকানের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি বাসায় ছিলাম। সকাল ১০টার কিছু পরে খবর পাই, এস আলম গ্রুপের কোল্ডস্টোরেজে আগুন জ্বলছে। দ্রুত এখানে চলে আসি। আমার দোকানের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে এসেছি। দূর থেকেই প্রচুর ধোঁয়া দেখতে পাই। কোল্ডস্টোরেজের ভেতরে প্রচুর ককশিট, কাঠের জিনিসপত্র আছে। সেগুলোর কারণে সম্ভবত প্রচুর ধোঁয়া হয়েছে। উপর থেকে দুই-তিনজনকে রশি বেয়ে নিচে নেমে যেতে দেখেছি।

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক আব্দুল মালেক জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে তিনটি স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে নেভানোর কাজ শুরু করে। এরপর আরো তিনটি ইউনিট কাজে যোগ দেয়। মোট ১০টি ইউনিটের কর্মীরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে দুপুর ১টা ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আগুন প্রায় নেভাতে সক্ষম হন তারা।

ভেন্টিলেশন না থাকায় প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা এস আলম গ্রুপের কোল্ডস্টোরেজ বলে শুনেছি। এর চারপাশ আটকানো অবস্থায় আছে। ভেন্টিলেশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ককশিট রাখা ছিল। সেগুলোতে আগুন লাগার কারণে ধোঁয়া ছিল বেশি। সেগুলো স্বাভাবিকভাবে বের হতে না পেরে বড় বড় কু-লী হয়ে বের হয়েছে। এজন্য কাজ করতে খুব সমস্যা হয়েছে। এত বড় বড় ধোঁয়ার কু-লী ছিল, আমাদের খুব সতর্কভাবে কাজ করতে হয়েছে। ভেতরে কোনো লোকজন না থাকায় কেউ হতাহত হননি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় সম্ভবত শ্রমিকরা কাজে আসেননি। ভেতরে লোকজন ছিল না। এজন্য জানের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে ভেতরে কোল্ডস্টোরেজের প্রচুর সামগ্রী ছিল। সেগুলো পুড়ে গেছে।
আগুন লাগার কারণ পুরোপুরি নেভানোর পর তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক আব্দুল মালেক।

ঘটনাস্থলে যাওয়া এস আলম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপক আশীষ কুমার নাথ বলেন, কোল্ডস্টোরেজে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কাজ চলছিল। সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে তখন কাজ বন্ধ ছিল। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেটা আমরা বলতে পারছি না। ভেতরে কেউ ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে দুই-তিনজন ছিলেন, উনারা নিরাপদ আছেন। আগুন যাতে আশপাশে ছড়িয়ে না পড়ে, আমরা সেই প্রচেষ্টায় ছিলাম। আশপাশের কোনো ক্ষতি হয়নি।

আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আমরা জানি না। তবে ভবনের চারতলায় বেশকিছু এয়ারকন্ডিশন (এসি) ছিল। দোতলায়ও অনেক সরঞ্জাম ছিল। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।