হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা
০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে সব ক্ষেত্রে। কিন্তু এখনো রাজধানীর ট্রাফিক সিস্টেমে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি। সারাদেশে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও হাতের ইশারায় চলছে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা। সমন্বয়হীনতা আর প্রক্রিয়ার গলদের কারণে কাজে আসছে না রাজধানীর কোটি কোটি টাকার স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা। এছাড়া, রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি ঢাকার সড়কে চলছে। এতে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। আধ ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্মার্ট না করে শুধু আইনের কথা বললে পরিস্থিতি বদলাবে না। রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চলে পুরোপুরি হাতের ইশারায়, সেখানে স্মার্ট প্রতিপাদ্য বেমানান।
নগরীতে চলাচল করে লাখ লাখ যান্ত্রিক যানবাহন। পাশাপাশি আছে প্যাডেলচালিত রিকশা। এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। নগরীজুড়ে যত্রতত্র পার্কিং, ট্রাফিক নির্দেশনা না মানা, অবৈধ যানবাহন চলাচল করার কারণে অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। দুর্ঘটনা, প্রতারণা কিংবা যানজটে নাকাল হয়ে মাশুল গুনতে হচ্ছে নগরবাসীকেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় কাজ করতে হয় দায়িত্বরতদের।
স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু না থাকায় অসহনীয় যানজটসহ সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং রাজধানীতে চলাচলকারীরা। রাজধানী ঢাকার সড়ক সংযোগগুলোতে ট্রাফিক সিগন্যাল চলছে হাতের ইশারায়। সড়কে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা হাত নেড়ে গাড়ি চলা ও থামার সঙ্কেত দেন। রাজধানীতে চলাচলকারী কয়েকজন যানবাহনের চালক এবং নিয়মিত চলাচলকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় গাড়ি চালাতে চালাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই সিগন্যাল বাতির দিকে তেমন খেয়াল থাকে না। তবে বাতি থাকলে দূর থেকে দেখতে পারলে আগে থেকে সতর্ক থাকা যেত। সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপনের পর সেগুলো কার্যকর নেই। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। পরে একে একে বিকল হয়ে পড়ে বাতিগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ের চারদিকে বাতি স্থাপনের জন্য কাঠামোতে বাতি লাগানো আছে। কিন্তু এসব বাতি সচল না অচল কেউ জানে না। অনেক স্থানে আবার দেখা যায় লাল বাতি জ্বললেও গাড়ি চলে সবুজ বাতি জ্বললেও গাড়ি চলে। রাজধানীতে চলাচলরত গাড়ির চালকরাও এখন ট্রাফিকের হাতের ইশারায় চলতে অভ্যস্থ হয়ে গেছেন। এখন আর তারা সড়কে ট্রফিক সিগন্যালের কথা চিন্তা করেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কার্যত এখনো ডিজিটাল কিংবা স্মার্ট হতে পারছি না। যে কারণে হাতের ইশারায় আমাদের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগে জনবল সঙ্কট রয়েছে। অথচ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি সংযোজন করা গেলে বর্ধিত জনবলের প্রয়োজন পড়তো না। কায়িক শ্রমের পরিবর্তে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।
রাজধানী ঢাকার ট্রাফিকের এআই পদ্ধতি বসানো হলে এটি প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত সচল থাকে। এই পদ্ধতিতে গাড়ির গতিবিধি ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর করা সম্ভব। সিগন্যাল ছাড়ার আগে বা পরে কতগুলো গাড়ি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে তা এআই ক্যামেরায় ধরে পড়বে। লালবাতি জ্বলা অবস্থায় সাদা দাগ অতিক্রম করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাফিক মামলা হবে। সাথে সাথে আইন ভঙ্গকারীর মোবাইলে জরিমানার মেসেজ চলে যাবে। এতে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা কমে যাবে ৯৯ শতাংশ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন পদ্ধতিতে সিগন্যাল মেইনটেন্যান্স সরঞ্জাম, সিসিক্যামেরা, ইমেজ ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ও অন্য সরঞ্জমাদি দিয়ে সিস্টেমটি সাজানো হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ট্রাফিক সিগন্যালের জন্য সর্বমোট প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ হবে। রাজধানীতে মোট ১১০টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। এআই পদ্ধতিতে ভিডিও ক্যামেরা ও সেন্সর এবং গতি মিটারসহ আরও কিছু সরঞ্জাম বসানো হবে এটিতে। একটি সড়কের চারটি লেনের বিপরীতমুখী গাড়িগুলো ডানের টার্নগুলো বাদ দেয়া হবে। তখন শুধু বামে ও সামনের দিকেই চলবে। এটাকে বলা হয় দ্বিমুখী সিগন্যাল। তাছাড়া এতে পথচারীর জন্য সবুজ বাতি দিয়ে হাঁটার সুযোগ করে দেয়া যেতে হবে। সব খরচ মিলিয়ে পায় ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আধুনিক-স্মার্ট শহরে পথচারীদের সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অথচ ঢাকায় পথচারীবান্ধব অবকাঠামো নেই। ফলে এই শহরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন পথচারীরা। পথচারীদের পারাপারের জন্য ট্রাফিক সংকেতব্যবস্থা কার্যকর করা জরুরি। সিগন্যাল ট্রাফিকের সব সমাধান না। ঢাকার এআই পদ্ধতিতে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হয়। সবুজ বাতি কতক্ষণ জ্বলবে তার পরিমাণও করা হয়। তাও ঠিক মতো কাজ করেনি। যখন একটি শহরের যানবাহন রাস্তার সক্ষমতার কম বা সমান থাকে তাহলে এই ধরনের সিগন্যাল কাজ করবে। বেশি থাকলে কখনো কাজ করবে না। ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় পিক আওয়ারে কয়েকগুণ বেশি গাড়ি চলে। এমনটা হলে কোনো ধরনের পদ্ধতি কাজ করবে না। তবে এগুলো বসানোর আগে বেশি করে যাচাই করে নিতে হবে। বর্তমানে ট্রাফিক ম্যানুয়েল পদ্ধতি বা হাতের ইশারায় চলছে। গাড়ির সক্ষমতা যখন সিগন্যালের চেয়ে বেশি হয় তখন হাতের ইশারাতেও কাজ করে না। এজন্য যানবাহনের সংখ্যা সক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। গণপরিবহন বাড়াতে হবে আর রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে হবে।
উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি) নাবিদ কামাল শৈবাল ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এখনো রাজধানীর সব সড়কে সিগন্যাল বাতি নেই। অনেক সময় গাড়ির চাপের কারণে এগুলো ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না। সেসময় ট্রাফিক পুলিশরা হাতের ইশারায় দায়িত্ব পালন করেন। পুরো রাজধানী এক সাথে ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থায় আনা হলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাগুরায় প্রাইভেট মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে ও রিকসা উল্টে ৩ জন নিহত আহত এক
শেখ হাসিনা ছিলেন দেশের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী: মাদারীপুরের রাজৈরে চরমোনাই পীর
মব জাস্টিস : নিষ্ঠুরতার এক নৃশংস চিত্র, প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার
পরাজিত শক্তি পাহাড়ে অরাজকতা করতে চায়: জাগপা
বিএনপি নেতা মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে শোকজ
মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৩ জন নিহতের ঘটনায় ৩ মামলা
আবু সাঈদ হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বেরোবিতে তদন্ত কমিটি গঠিত
কুতুবদিয়ায় কোস্টগার্ডের অভিযানে বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ আটক ২
বিরলে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যাক্তির মরদেহ উদ্ধার
জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
কলাপাড়ায় যাত্রীবাহী বাস-অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিশু সহ আহত-৫
গাজীপুরে কলোনিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪ ইউনিট
মেরিনারের দায়িত্ব নিলেন সামির কাদের চৌধুরী
বাফুফের সভাপতি পদে এবার দৃশ্যপটে তাবিথ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন
ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে