প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় বাড়লো আরো ৪জন নতুন সদস্য। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে নতুন এই মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে দিয়ে মন্ত্রিসভার আকার বেড়ে দাঁড়িলো ৪৪ জনে। আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো নতুন যারা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সে বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সূত্রগুলো বলছেন, দলীয়ভাবে বেশ ইতিবাচক ইমেজ রয়েছে নতুন এই মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রীদের।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বঙ্গভবনে নতুন প্রতিমন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। শপথ নেওয়া নতুন প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওয়াদুদ, নওগাঁ-২ আসনের এমপি শহীদুজ্জামান সরকার, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল), সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান (চট্টগ্রাম), সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও ৭৫-এর ৩রা নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানে নিহত কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে বেগম নাহিদ ইজাহার খান (ঢাকা) এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বেগম রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট)।

এর আগে শুক্রবারই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট শুক্রবার সাতজনকে সরকারের প্রতিমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, শহীদুজ্জামান সরকারকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, মো.আব্দুল ওয়াদুদকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে শ্রম ও কর্মসংস্থান, বেগম শামসুন নাহারকে শিক্ষা, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খানকে অর্থ, ডা. বেগম রোকেয়া সুলতানাকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং নাহিদ ইজাহার খানকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সব সময় প্রস্তুতি থাকে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা ওপর মহল থেকে আসেনি। নির্দেশনা পেলে আপনাদের জানানো হবে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যারা প্রধানমন্ত্রী যাদের নতুন মন্ত্রী করেছেন তাদের প্রত্যেকেই মন্ত্রী হিসেবে কাজ করার যোগ্য। তাদের অতীতের দলীয় ইমেজও বেশ পরিষ্কার। এদের কাছ থেকে ভাল কিছুরও আশা সংশ্লিষ্টদের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল ৩৭ জন। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী ছিল। কোনো উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও আগের মন্ত্রিসভায় তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভা ছিল ৪৭ সদস্যের। ওই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি করে আসনে জয় পেয়েছে। এর বাইরে সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন। পরে ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। ওই দিনই সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দেন তিনি। এরপর ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন।