নিত্যপণ্যের দাম বল্গাহীন
০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ঘোষণা দিয়েছেন, রোজার কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না’। প্রতিমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রোজার আগেই বল্গাহীন ঘোড়ার মতো উধ্বশ্বাসে উপরে ছুটছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিন পর শুরু হবে রমজান মাস। গতকাল ছিল মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাসের আগে শেষ শুক্রবার। এদিন বেশির ভাগ কর্মজীবী পবিত্র রমজান মাসের বাজার করে থাকেন। প্রতিবছর রমজান মাস শুরুর আগের শুক্রবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে বাড়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকলেও বাজারে নেই কোনো সুখবর। কদিন ধরেই বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীলরা বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাদের আশ্বাস দিলেও সবজি থেকে শুরু করে মাছ- গোশত প্রায় সবকিছুই কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এতে রোজার আগেই বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। কয়েকদিন আগে এফবিসিসিআই সেমিনারের আয়োজন করে রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের সীমিত লাভ করার অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে রমজান মাসসে সামনে রেখে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যেন রোজাদারদের গলা কাটার লক্ষ্যে কসাই মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছে। যে যেভাবে পারছেন দাম বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন। সরকারি ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানের নিত্যপণ্য চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ, মুরগির গোশত, মাছ, শশা, লেবুসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবজি থেকে শুরু করে মাছ-গোশত সবকিছুর দাম বাড়তি। এই বাজারের বিক্রেতাদের এদিন ব্যস্ত দেখা গেলেও ক্রেতাদের কপালে হতাশার ছাপ দেখা যায়। বাজারের এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ক্রেতারা বলছেন, অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে না আনায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। অন্যদিকে বরাবরের মতোই বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম।
সবজির বাজারে আগুন : সরজমিনে শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন, টমেটো, শশাসহ অনেক সবজির দামই বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের শাক ১০ থেকে ২৫ টাকা আটি, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ধরন ভেদে ৮০-৯০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৩৫-৫০ টাকা, শালগম ২৫-৩০, শসা ৬০, কচুর লতি ৮০ টাকা, গাজর ২০-৩০ টাকা, টমেটো ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, আকার ভেদে লাউ ৪০-৮০ টাকা, করলা ও ঢ্যাড়শ বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১০০ ও ১৪০ টাকা কেজি। কাচামরিচ ৮০-৯০ এবং পেঁয়াজ ধরন ভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।
গোশত-মাছের দাম বৃদ্ধি : রমজানের আগে ঊর্ধ্বমুখী মুরগি ও গরুর গোশতের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। জাত ভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। তবে বাড়েনি খাসির গোশতের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায়। বাজারের মাছের দোকানগুলোতে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২২০ টাকা, চাষের শিং ৫২০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইন ১ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মশলার বাজারও চড়া: শনির আখড়া, গোবিন্দপুর ও যাত্রাবাড়ি বাজারের খুচরা দোকানিরা জানান, গত ১৫ দিন জিরা ছাড়া প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি জিরা ৭৫০ টাকা, এলাচ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪৬০ থেকে ৪৭০ টাকা, গোলমরিচ ৯০০ টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ টাকায়।
তেলের দামে তেলেসমাতি : সরকার ১০ টাকা দাম কমিয়ে সয়াবিনের দাম বেধে দিলেও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিল তেল। রমজানে চাহিদা বাড়া একটি অন্যতম পণ্য হচ্ছে ভোজ্য তেল। ইফতার সামগ্রী তৈরিতে পণ্যটির বিকল্প নেই। এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি সরকার পহেলা মার্চ থেকে ১০ টাকা সয়াবিনের দাম কমালেও কোম্পানীগুলো এক সাপ্তাহ আগেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে সয়াবিনের দাম কমছে না। গত ১ মার্চ খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৩ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়কে তোয়াক্কা না করেই বাড়তি দামে তেল বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এদিন বাজারে ১ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ১৭০ টাকা এবং খোলা তেল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
খেজুর ও বিভিন্ন ফল : রমজানে রোজাদারদের ইফতারির তালিকায় অন্যতম খাবার হচ্ছে ফল। বিশেষ করে ইফতারের সময় রোজাদারগণ খেজুর খেয়ে ইসতার শুরু করেন। প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ‘রোজায় দাম বাড়বে না’ অথচ রোজার আগে বাড়তে শুরু করেছে খেজুরসহ সব ধরওেণর ফলের দাম। বিক্রেতাদের দাবি, ডলার সংকট ও আমদানি শুল্কের কারণে এ বাড়তি দাম। তার ওপর রমজানের বাড়তি চাহিদা তো রয়েছেই। বাজারে প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৮০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বড়ই খেজুর ৪৫০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি মাল্টা ৩০০ টাকা, সবুজ আপেল ৩২০ টাকা, নাশপাতি ২৬০ টাকা, আনার ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কালো আঙুর ৪০০ টাকা ও কমলা ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল ও আটার বাজারে বড় পরিবর্তন নেই। খোলা আটা এলাকাভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ টাকা বেড়ে বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ডাবলির ডাল ৮৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রমজান মাসে খুবই প্রয়োজনীয় চিনির বাজার অস্থির। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর আগের মতোই প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শনির আখড়া বাজারে আসা অ্যডভোকেট মিজানুর রহমান নামের একজন ক্রেতা বলেন, রোজায় ইফতার ও সেহেরিতে মানুষের যেসব পণ্য খুবই প্রয়োজনীয়, সেসব পণ্যের দাম গত কয়েকদিনে অনেক বেড়েছে। দামের কাছে আমরা সাধারণ ক্রেতারা জিম্মি হয়ে যাচ্ছি। সরকার অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। জনগণের সঙ্গে সরকারের দূর¦ বেড়ে যাওয়ায় সরকার মুখে বললেও বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং বাজারে সিণ্ডিকেট করে যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে সরকারের হোমরা-চোমরাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। হেদায়েত উল্লাহ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আবার সেই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর গোশত। অথচ এক মাস আগেও গরুর গোশত ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সরকার নিজেই গরুর গোশতের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ায় কসাইরা একশ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার ঘোষণা দিলেও পেঁয়াজের দাম তো কমছেই না। রমজানের আগে নিত্যপণের বাজারের এমন অবস্থা হয়েছে, এবার রোজাদারদের একটু ভালো মন্দ খাওয়ার উপায় নেই। ছুটির দিনে রোজার বাজার করতে এসেছিলাম, অনেক কিছুই টাকায় কুলায়নি। তাই না নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর রোজার সময় নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্তত পঞ্চম রোজা পর্যন্ত ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করে ইফতারে ফল রাখতে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এর দামও বেড়ে যায়। প্রতি বছর রোজার আগেই অল্প অল্প দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু রোজার ২ থেকে ৩ দিন আগেই মূলত দাম হুট করে বাড়ে। তবে এ বছর রোজা শুরুর ১০ থেকে ১২ দিন আগেই পাইকারি বাজারে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী