তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে রমজানকে কাজে লাগাতে হবে
০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজানের পুরোপুরি হক আদায়ে সবাইকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিতে হবে। তাকওয়া আল্লাহ ভীতি অর্জনের মাধ্যমে রমজানকে কাজে লাগাতে হবে। বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে রমজানে ঈমানকে মজবুত করতে হবে। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে নেকির পাল্লা ভারী করার উত্তম সময় হচ্ছে রমজান। রমজানকে সামনে রেখে অসৎ উপায়ে মজুদদারী করা হারাম। রোজাদাররা যাতে জুলুমের শিকার না হন সে জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। খতিব বলেন, অতিমুনাফার লোভে পণ্যসামগ্রী মজুদদারী করে জাতিকে কখনো কষ্ট দেয়া যাবে না। এটা নবীর (সা.) শিক্ষা। আমরা অসাধু মন্দের কাতারে থাকতে চাই না। জান্নাতে থাকতে চাই শয়তানের সাথে থাকতে চাই না। আসুন ভালো হবার মু’ত্তাকি হবার মাস রমজান চলে এসেছে। নৈতিকভাবে যা হালাল তা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। এই মাসে আত্মীয় স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা মু’ত্তাকি হয়ে যাও। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া জাগ্রত করতে হবে। শয়তানের অসওয়াসায় সকল প্রকার গুনাহর কাজ গিবত পরনিন্দা সবই পরিত্যাগ করতে হবে। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে। সউদী আরবের সাথে রোজা রাখা যাবে না। রোজা রাখা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো যাবে না। গরিব মিসকিনকে দান খয়রাত করতে হবে। একজন রোজাদারকে ইফতার করালে ওই রোজাদারের পুরো সওয়াব লাভ করা যাবে, তবে তার রোজার সওয়াব কম হবে না। রমজানে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগির বদৌলতে বাকি ১১ মাস যাতে আমরা গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে পারি সে দিকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আল্লাহ মাহে রমজানে সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রহমাত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজানুল মোবারক আমাদের দ্বারপ্রান্তে। এ মাস সিয়াম সাধনার। আত্মসংযমের। ধৈর্য, ত্যাগ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা অর্জনের। মানবিক গুণাবলী অনুশীলনের। এ জন্য এ মাস অতি পবিত্র। এ মাসে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য যেমন মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে তেমনি অন্যান্য আসমানী কিতাবও নাজিল হয়েছে এ পবিত্র মাসেই। এ মাসের মধ্যে অবস্থিত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম কোরআনের নুজুল। তেমনি হযরত ইব্রাহীম (আ.) ছহিফা এ মাসের প্রথম কিংবা তৃতীয় তারিখে অবতীর্ণ হয়। অষ্টাদশ কিংবা দ্বাদশ তারিখে জবুর প্রাপ্ত হন হযরত দাউদ (আ.)। ৬ষ্ঠ দিবসে তৌরাত পান হযরত মূসা (আ.)। দ্বাদশ কিংবা এ দশ তারিখে ইঞ্জিল প্রাপ্ত হন হযরত ঈসা (আ.)। এরূপ সব আসমানী কিতাব এ মাসে নাজিল হওয়ায় সব জাতির নিকট এ মাস যেমন পবিত্র তেমনি এর পবিত্রতা রক্ষার জন্য যত্নবান হওয়া উচিত প্রত্যেককেই। খতিব বলেন, পবিত্রতা বা সম্মান রক্ষার অর্থ যার ওপর রোজা রাখা ফরজ তার রোজা রাখা, অধীনস্থ অন্যান্যের রোজা রাখানো। সব রকমের অন্যায়, অশ্লীলতা, বেলেল্লাপনা, নোংরামী, চরিত্রবিধ্বংসী ও নৈতিকতাবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা ও অন্যান্যেরও বিরত রাখার চেষ্টা করা। রাস্তা-ঘাটে প্রকাশ্য দিবালোকে ধূমপানসহ সর্বপ্রকার পানাহার বন্ধ রাখা। ঝগড়া-ঝাঁটি, ফ্যাসাদ, কলহ-কোন্দল এড়িয়ে থাকা এবং তা যাতে সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। সব ব্যাপারে সংযমশীলতার পরিচয় দেয়া। কোরআন তিলাওয়াত, চরিত্র গঠনমূলক আলোচনা অনুষ্ঠান, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদির মাধ্যমে, মুত্তাকি হওয়ার জন্য সৎ ও ভালো হওয়ার সাধনায় ব্রতী হওয়াই এ মাসের দাবি। যত্নের সাথে দীর্ঘ একটি মাস যদি গোটা জাতি এই সাধনায় আত্মনিয়োগ করে তবে তার মন-মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব। রমজানের উদ্দেশ্য যাতে সফল হয় এ জন্য সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালানো উচিত প্রতিটি মুসলমানের। বিশেষ করে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে পালন করা উচিত বিশেষ ভূমিকা। কারণ আমাদের আর্থিক অভাব, অনটন আছে একথা সত্য, কিন্তু আজকে সবচেয়ে বড় অভাব হচ্ছে সততার, ন্যায়-নিষ্ঠার, দায়িত্ববোধের, সৎ চরিত্রের। যার অভাবে একটা জাতি কখনও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না, আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। আমাদের জনগণ জাতি বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় সকলেই রমজানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এজন্য চেষ্টাও চালান।
খতিব বলেন, একশ্রেণীর অসৎ অতিলোভী ব্যবসায়ী, কিছু দায়িত্বহীন উচ্ছৃংখল বখাটে যুবক রমজানুল কারিমের পবিত্রতা বিনষ্টের জন্য যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই তৎপর হয়। এ ধরনের হীন মানসিকতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের কথা অবশ্য আলাদা, লোভ তাদের পশুর থেকেও অধম করেছে। শকুন যেমন মরা দেখলে খুশি হয় তেমনি এরা মানুষের দুর্দশা দেখলে আনন্দিত হয়। একে মনে করে মুনাফা লোটার, স্ফীত হয়ে ওঠার একটা মোক্ষম মওকা। বানে, বন্যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে অগণিত মানুষ যখন হাহাকার করে তখন তারা মাল আটকে রেখে মওজুদারির মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করার ধান্ধায় থাকে। জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ তিন গুণ বাড়িয়ে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় উঠে-পড়ে লেগে যায়। রমজানকেও এরা মোক্ষম সুযোগ মনে করে মানুষের রক্ত চোষার ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত হয়। এদেরই কারসাজিতে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম হু হু করে চড়ে যায়। চলে যায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আত্মশুদ্ধি বা কৃচ্ছ্রতা নয়, লোভ-লালসাই বর্ধিত হয় এদের।
খতিব বলেন, রমজান মাস সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস। রাসূলেপাক (সা.) একে আখ্যায়িত করেছেন শাহরুল মাওয়াছাত বা সমবেদনা ও সহমর্মিতার মাস বলে। গরিব-দুঃখী, দুস্থ অনাথ কাঙ্গালদের ব্যথা-কষ্ট দূর করার জন্য এ মাসে আরও অধিক যত্নবান হওয়া উচিত। কেবল ধনীরাই দান করবে তা নয়। তারা তাদের মতো করবে, আমরাও পারি আমাদের মতো করতে। আমার ইফতারির জন্য ৫টা আইটেমের জায়গায় ৩টা আইটেম করে বাকি দুটো বা দুটোর পয়সা দিতে পারি আমাদের অভাবগ্রস্ত নিকট-প্রতিবেশীকে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে রাসূলে করীম (সা.)-এর সেই সাবধান বাণী, খোদার কসম সে ব্যক্তি মোমেন নয়, যে পেট পুরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অনাহারী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত কাটায়। রাসূলে করীম (সা.) আরও বলেছেন, আর যদি না পার তবে “তোমাদের তরকারিতে একটু বেশি করে সুরা বা ঝোল দিও এবং তা প্রতিবেশীকে পৌঁছিও।” কত বাস্তব ও যুক্তিপূর্ণ একথা। আসলে লাখ টাকা দান করাই বড় কথা নয়, আমার যা আছে তা থেকে যতটা সম্ভব দেয়াই বড় কথা। এটা একটা মানসিকতা। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ প্রতিবেশীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতাম তবে সমাজে এ হাহাকার থাকতে পারতো না। রমজান মাসে ভাল ভাল খাবার আর ভূরি-ভোজনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সারাদিন অনাহারে থাকার মাসুল সুদে-আসলে পুরিয়ে নেয়ার জন্য সেহরি ও ইফতারিতে অধিক আয়োজন ও খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। আসলে এতে রোজার মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। এ মাস তো কৃচ্ছ্রতা সাধনের। সংযম সাধনার। রোজার মূল উদ্দেশ্য কামভাব ও প্রবৃত্তি দমন। কিন্তু অতিরিক্ত আহারের দ্বারা তা সফল হলো কোথায়? আজকে আমাদের প্রার্থনা, আমরা যেন রোজার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হই এবং রমজানের দাহনে সব পাপ-পংকিলতাকে ভস্মীভূত করে পবিত্র দেহ, মন ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী