ভুয়া দলিলে সরকারি টাকা লুট
১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম
এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। ভুয়া দলিলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরে। জেলা সদরের পাঁচখোলায় ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত খানবাড়ি কমিউনিটি হাসপাতাল, প্রবীণ নিবাস ও এতিমখানার নামে ভুয়া দলিলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা লুটপাটের সত্যতা পেয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ফাউন্ডেশনের নামে জমির দলিল, নামজারি পর্চা, জমির পরিমাণ কমসহ এ প্রকল্পে সরকারের চার কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন খান কমিউনিটি হাসপাতাল পাঁচখোলা মাদারীপুর স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ডিপিপি ও একনেক সভার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রকল্পের প্রত্যাশী সংস্থা এ অনিয়ম করে। নির্মিত প্রকল্পের জন্য উল্লেখ করা জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করা দলিল না থাকা এবং প্রচলিত দরের চেয়ে অনেক উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে সরকারি এ অর্থের লুটপাট হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা অডিট অধিপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর সেক্টর-২ এর উপপরিচালক শাওন রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
এবিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জোবায়দা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, জমির দলিল, নামজারি পর্চা, জমির পরিমাণ কমসহ এ প্রকল্পে সরকারের চার কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাত করেছে।
খানবাড়ি কমিউনিটি হাসপাতাল, প্রবীণ নিবাস ও এতিমখানার নামে ভুয়া দলিলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আরো প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়েছে। আমরা তদন্ত করে খানবাড়ী কমিউনিটি হাসপাতালের জমি বিষয়ক অনিয়মের বিষয়ে একাধিকবার প্রত্যাশী সংস্থা ওয়াজেদা কুদ্দুস ফাউন্ডেশনের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছি। তারা কোনো তথ্য দিচ্ছে না। অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে প্রকল্পের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল ও নামজারির পর্চা সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকার এ প্রকল্পে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মোট ব্যয়ের ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল এবং ২০ ভাগ প্রত্যাশী সংস্থা ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বহন করবে। প্রকল্প পরিচালক ও প্রত্যাশী সংস্থার যৌথ ব্যাংক হিসাবে এ অর্থ জমা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী জমিক্রয় ও অন্যান্যখাতের বিপরীতে প্রত্যাশী সংস্থাকে আট কোটি ২৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। শুরুতেই ক্ষমতার অপব্যহার করে প্রত্যাশী সংস্থাকে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়ম ও সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে এবং সরকারি টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। প্রত্যাশী সংস্থা ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন মাদারীপুর সদর উপজেলাধীন ১০৫ নং উত্তর পাঁচখোলা মৌজার বিআরএস খতিয়ান এবং দাগে তাদের ৬২৭ শতাংশের জমির মূল্য বাবদ পাঁচ কোটি ছয় লাখ ৩৭ হাজার দেখিয়েছেন। অথচ উল্লেখিত দাগগুলোর জমি সরকার ও প্রত্যাশী সংস্থার যৌথ নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করা হয়নি। সরকারি ভাবে বারবার লিখিত নোটিশ দেওয়ার পরও জমির পক্ষে দলিলাদি প্রদানে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ্আবার প্রচলিত বাজার থেকে অনেক বেশি দাম দেখিয়ে প্রত্যাশী সংস্থা মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মৌজা মূলে সেখানে প্রতি শতাংশের দাম ৩৪ হাজার পাঁচশত ৩০ টাকা হলেও সেখানে প্রত্যাশী সংস্থা দেখিয়েছেন ৮০ হাজার সাতশত ৬১ টাকা, অর্থাৎ শতাংশ প্রতি ৪৬ হাজার দুইশত ৩১ টাকা বেশি দেখানো হয়েছে।
গত বছর ১২ নভেম্বর সরকারি নিরীক্ষা দল প্রকল্প এলাকা পাঁচখোলা, মাদারীপুর সরেজমিনে পরিদর্শন করে। সেখানে প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ার কর্তৃক হাসপাতালের বাউন্ডারীকৃত জমির পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। পরিমাপকালে হাসপাতালের বাউন্ডারীকৃত জমির পরিমাণ ৭৭৩ বর্গফুট বা ৮৭ শতাংশ পাওয়া যায়। কাগজে-কলমে দেখানো ৬২৭ শতাংশের মধ্যে ৫৪০ শতাংশ জমির কোন অস্তিত্ব নেই। ভুয়া দলিল দিয়ে এ প্রকল্পে শুধুমাত্র জমি বাবদই চার কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে। নিরীক্ষা দল রেজিস্ট্রি অফিস ও সরকারি দপ্তরে খোঁজ নিয়ে প্রকল্প এলাকা মৌজা উত্তর পাঁচখোলার বিআরএস খতিয়ান ও দাগ নং গুলোতে জমির মালিকানায় প্রত্যাশী সংস্থা ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নাম পাননি বলে প্রতিবেদন। গত ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি উত্থাপিত একনেক শাখা-১ এর স্মারক নং পরি/ একনেক-০১/০১/২০০৬/ ৪৪ মোতাবেক ঐ বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে একনেক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য সংগ্রহকৃত নতুন জমির ক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করতে হয়। এ প্রকল্পে সরকারি এ নির্দেশনা মানা হয়নি। ওয়াজেদা-কুদ্দুস প্রবীণ নিবাস, নওয়াব আলী খান এতিমখানা এবং খানবাড়ি কমিউনিটি হাসপাতাল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে একই জমিতে। সাবেক সচিব মোজাম্মেল হক খান তার মা বাবা ও দাদার নামে এ প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে মোট ৯০ কোটি টাকা। এর বাইরে অন্যান্য মাধ্যম থেকে সব মিলে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সহযোগিতা এসেছে।
মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সূত্রে জানায়, তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ওয়াজেদা-কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে। সেবা মূলক হওয়ার শর্ত থাকলেও প্রবীণ নিবাসের একটি অংশ বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস-এর নিকট মাসিক তিন লাখ টাকা এবং অন্য একটি অংশে পল্লী বিদ্যুতের অফিস ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক সচিব মোজাম্মেল হক খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী
মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান
সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান
ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স