মার্চ শেষে লক্ষ্য ১৯.২৭ বিলিয়ন
১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে অন্যতম শর্ত চলতি মার্চ শেষে বাংলাদেশের প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত সপ্তাহ শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। বিদেশি কারেন্সিতে গঠিত তহবিল ও অর্থায়ন যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গণনায় দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে উঠেছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিল ও অর্থায়ন যার বাইরে আছে। এছাড়া দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থার নিট রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে। এটি শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই মেথডে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে ৩ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। মূলত, প্রতি মাসে পণ্য কেনা বাবদ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার করে দায় পরিশোধ করা হয়। সাধারণত, একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে শেষ প্রান্তে রয়েছে। আইএমএফ’র ৪৭০ কোটি (৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার পথ মসৃণ করতে মার্চ শেষে সাড়ে ১৭ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন রাখতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই রিজার্ভ বাড়ানো বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আর তাই এই সময়ের মধ্যে রিজার্ভ বাড়িয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা, অফশোর ব্যাংকিং চালু, আরএফসিডি হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধাসহ নানাবিধ সুবিধা চালু রেখেছে। অবশ্য এর সুফল হিসেবে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এদিকে রিজার্ভ বাড়লেও চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের সামান্য উপরে থাকবে। অবশ্য নানামুখী উদ্যোগের কারনেই রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। অথচ ২০২১ সালের আগস্টে যেখানে রিজার্ভে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, গত নভেম্বরে সেই রিজার্ভ ১৯ বিলিয়নে নেমে যায়। যদিও বৈশ্বিক কারণে চাপে পড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই বছর ধরেই নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার সহায়তা দিতে থাকায় ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়।
সূত্র মতে, রিজার্ভ বাড়াতে অফশোর ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্যাংকিং চললেও গত ৫ মার্চ জাতীয় সংসদে অফশোর ব্যাংকিং আইন-২০২৪ পাস হয়েছে। অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরেই পৃথক ব্যাংকিং সেবা। বিষয়টি আরও সহজ করে বললে, আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়ার দুই কার্যক্রমই বৈদেশিক উৎস থেকে আসে ও বিদেশী গ্রাহকদের দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই ব্যাংকিং কার্যক্রম শুধু অনিবাসীদের মধ্যেই সীমিত থাকে। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে দেশের অনেক ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই অফশোর ব্যাংকিং করে আসছে, তবে এ সংক্রান্ত কোনো আইন এতদিন ছিল না। নতুন আইনে বলা হয়েছেÑ বিদেশে যে বাংলাদেশী বসবাস করছেন, তার পক্ষে দেশে অবস্থানরত যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। সহায়তাকারী হিসেবে তারা অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে পাঁচ ধরনের বিদেশী মুদ্রাÑ ডলার, পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ানে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে অন্য বিদেশী মুদ্রায়ও লেনদেনের সুযোগ পাবে ব্যাংকগুলো। অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর আয়কর বা অন্য কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর আরোপ করা যাবে না। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি, রিজার্ভ ও এলসি খোলার সংকটের সমাধানসহ বিদেশী বিনিয়োগ আরও উৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এতে বাড়ছে ডলারের প্রবাহ ও রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত তৃতীয় এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতায় বলেছেন, ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমরা ব্যাংকে ডলার জমার সুযোগ সহজ করে দেওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ নগদ ডলার জমা হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যাংক কিন্তু কোনো প্রশ্ন করছে না। আবার বিদেশ থেকে আসার সময় কেউ যদি ঘোষণা দেয় আমি ডলার নিয়ে এসেছি। কেউ প্রশ্ন করবে না। সেই ডলার আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট) হিসেবে জমা রাখা যাবে। গভর্নর বলেন, আরএফসিডি হিসাবে যে কেউ ডলার জমা রাখতে পারছে। যে জীবনে একবার বিদেশে গিয়েছে সেও ব্যাংকের একটি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার জমা রাখতে পারবে। কেউ যদি চারবার বিদেশে যায়, তাহলে ৪০ হাজার ডলার জমা রাখার সুযোগ পাবে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ’র ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হয় গত ১২ ডিসেম্বর। তবে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় বাংলাদেশ এ শর্তে কিছুটা ছাড় চাইলে সংস্থাটি তা পুননিরর্ধারণ করে। সে অনুযায়ী গত ডিসেম্বর শেষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন, এ বছরের মার্চ শেষে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ও জুন শেষে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি গেলেও তা পূরণ সম্ভব হয়নি। এদিকে আকুর বিল পরিশোধের পরও যাতে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে এবং আইএমএফ’র তৃতীয় কিস্তির ঋণ পেতে তাদের শর্ত অনুযায়ী চলতি মার্চ মাস শেষে নিট রিজার্ভ যেন ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার থাকেÑসেজন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভ রাখার জন্য সোয়াপ কারেন্সি সুবিধাসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সে কারণেই গত কয়েক দিনে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। তারপরও মনে হয় না মার্চ শেষে আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ৩ থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার কম থাকে। আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছু উপরে অবস্থান করবে। সেখান থেকে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে হিসাব করলে আইএমএফ’র শর্ত পূরণ হবে না। আর তখন আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে সংস্থাটি।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী
মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান
সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান
ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স