ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আ.লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইস্যু তুলছে : অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী কোন প্রেক্ষাপটে ওরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দরকার নেই বলছে জানি না : ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ছাড়া বিএনপির আদৌ কিছু করার নেই : ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী দেশের রাজনীতির ইতিহাসে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো নজির নেই : প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন

আলোচনায় মধ্যবর্তী নির্বাচন

Daily Inqilab স্টালিন সরকার

১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম

‘মধ্যবর্তী নির্বাচন মামা বাড়ির আবদার’ মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সিংগাপুরে চিকিৎসা নিয়ে গতকাল রোববার দেশে ফিরেই তার এ মন্তব্য ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলছেন, সত্যিই কী দেশ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? পর্দার আড়ালে এ নিয়ে কী চাপ সৃষ্টি হয়েছে? নেটিজেনদের বক্তব্য সরকারের হাবভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের তেমন কিছু দৃশ্যমান না হলেও পর্দার আড়ালে হয়তো অনেক কিছুই ঘটছে। ভঙ্গুর অর্থনীতি সজল রাখতে হলে পশ্চিমাদের সহায়তা আবশ্যক।

গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয় ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। নির্বাচন কার্যত আওয়ামী লীগ ও তাদের ডামি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের পোশাক খাত নিয়ে তদন্ত শুরু করছে। জো বাইডেন প্রশাসন নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা এবং গত বছর থেকে বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মজুরি, ট্রেড ইউনিয়নসহ নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে সুরাহার তাগাদা দিচ্ছে। বাণিজ্য কমিশনের তদন্তে এসব বিষয় প্রাধান্য পাবে। এ নিয়ে দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেন। ওই সফরে সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে ফর্মালি আলোচনা করলেও ওই প্রতিনিধি দল নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাজনীতি, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন, মানবাধিকার ইত্যাদির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। অতঃপর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে বলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার জন্য।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং গণতন্ত্র নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। দু’একদিনের মধ্যে তারাও বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করবে। সরকার তো জানে তারা ডামি প্রার্থীর নির্বাচন করেছে। ৪০ শতাংশ ভোটের কথা প্রচার করা হলেও ১০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। সরকার কোনো নিয়ম-নীতি আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে জুলুম নির্যাতন করেছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার জানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর আইআরআই রিপোর্ট প্রকাশ করলে সরকারের পাতানো ডামি নির্বাচনের মুখোশ খুলে যাবে। পশ্চিমারা মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করবে। এ ছাড়া চরম অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যমূল্য, সরকারের ছত্রছায়ায় বাজার সিন্ডিকেট, তলানীতে রিজার্ভ, এক কথায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। মানুষ ঋণ করে, ধার করে কম খেয়ে সংসার চালাচ্ছে। অথচ সামনে কোনো আশার আলো নেই। বিএনপির আহ্বানে জনগণ নির্বাচন বর্জন করেছে এতে দলটির নেতাদের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়েছে। দলটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠন করছে। এ অবস্থায় বিরোধী দলগুলো মাঠে নামলে এবং পশ্চিমারা চাপ দিলে সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হতে পারে। কারণ, দেশের অর্থনীতির যে ভঙ্গুর অবস্থা তাতে পশ্চিমাদের সহায়তা ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন যে আড়াই বছর পর দিতে হবে এমন নয়; যে কোনো সময় মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া যায়। এই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ওবায়দুল কাদের আগাম ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন মামা বাড়ির আবদার’ বক্তব্য দিয়েছেন। পরিস্থিতি ‘ঠাকুর ঘরে কে রে/ আমি কলা খাই না’ প্রবাদের মতো।

৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে পর্দার আড়ালে ভারত কলকাঠি নাড়লেও পশ্চিমাদের এখনো ম্যানেজ করতে পারেনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দুতিয়ালি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ম্যানেজ করেছিল, এবার পারেনি। বরং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাদের নির্বাচন কমিশনের মুখোশ খুলে গেছে। নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশা করছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতির যে দুরবস্থা তা কোনোভাবেই নিরসন করতে পারছে না। রিজার্ভ তলানিতে, ডলার সংকট, ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থাহীনতা, মূল্যস্ফীতিতে মানুষ দিশেহারা, গ্যাস বিদ্যুতের সংকটের মধ্যে দাম বৃদ্ধি সবকিছুই অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। অন্যদিকে বিএনপিতে কার্যত চাঙ্গাভাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন কর্মসূচিতে দেশের এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ সমর্থন করবে এটা ছিল দলটির নীতি নির্ধারকদের ধারণারও বাইরে। দলটির নেতারা মনে করছেন, সংবিধানের ধারাবাহিকতার তোয়াক্কা না করেই সরকার গঠন এবং সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়োগ দিলেও সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে নেই। বিশেষ করে পশ্চিমারা কোনোভাবেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের মানদণ্ডে’ ফেলতে পারছে না। নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিবেদন দিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন দেবে। এসব প্রতিবেদন দেখার পর সরকার দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে আনতে চাইলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। ৫ মার্চ ক্ষমতা ছেড়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাহলে তাদের সামনে একটি পথ খোলা আছে। সেটা হলো ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া। এটাই আমরা চাই। প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সরকার ফিরে আসুক। এছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। আর শুধু বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগের ভোটাররাও এই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে। এটা কোনো নির্বাচন নয়, এটা প্রহসন, নাটক ও সার্কাস। সংসদ একটা নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের কিভাবে এমন কথা বলেছেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু তারা তো বলে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। তারা যে ভাবে নির্বাচন করেছেন সে ভাবে সরকার গঠন করেছেন। এখন কিভাবে কোন প্রেক্ষাপটে এসব কথা বলেন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দরকার নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করে আসছেন। সে জায়গা থেকে এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ছাড়া বিএনপির নিকট আদৌ কোনো পথ খোলা আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে রাজনীতির মাঠে বিএনপির যে অবস্থান সে জায়গায় তাদের আরো জোর দেওয়া প্রয়োজন। তারা জোর দিচ্ছেনও। সুতরাং এই আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ছাড়া আদৌ কিছু করার নেই। কারণ এই সরকার যদি ফুল টাইম রান করে তবে সেটা হবে তাদের জন্য অনেক দূরবর্তী বিষয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের অনেক কথাই বলতে হয়। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য কিংবা সংগঠনের গতিশীলতা ধরে রাখতে নানা সময় নানান বিবৃতি দিতে হয়। সাংবিধানিক নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিও তেমনই একটি। যার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ অতীত ইতিহাসে এর কোনো নজির নেই। আর নির্বাচনের সময়ও বহির্বিশ্ব থেকে তেমন কোনো চাপ আসেনি। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও না। সুতরাং বৃহৎ কোনো আন্দোলন ছাড়া বিএনপির জন্য আরো ৫ বছর অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সফর ও পোশাক খাত তদন্ত : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সফর করেন। সরকারের মন্ত্রীরা ছাড়াও তারা বিএনপি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) বাসায় বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইউএসএআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। তারা ড. ইউনূসের মামলা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার চর্চার সুযোগ কেমন, তা জানতে চান। দুই ঘণ্টার ওই মতবিনিময়ে যোগ দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন, অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক ও সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নাগরিক সমাজ কীভাবে দেখছে, সেটাও জানতে চায়। এ ছাড়া বিরোধী দল নির্বাচনের পর কোন অবস্থায় রয়েছে কিংবা বিরোধী দলের সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনা এসেছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধিদলের মতবিনিময়ের পর ঢাকায় দেশটির দূতাবাস তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছে, ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নাগরিক সমাজ। আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত থাকব। সরকারকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানাব।’

এদিকে পোশাক রফতানি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমেছে। এরপরও বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির বাজার দখলে রেখেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তদন্ত করছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা দীর্ঘদিন থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। সরকার সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন বাড়ালেও শ্রমিকরা তা মানেননি। এর মধ্যে আন্দোলনে কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র গার্মেন্টস সেক্টরে তদন্ত শুরু করেছে। এ তদন্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরা। বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম আবার মনে করছেন বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলার জন্য এ তদন্ত করা হচ্ছে।

ইইউ প্রতিবেদন : ইউরোপীয় কমিশনের ওয়েবসাইটে ৩৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ভোটাররা পুরোপুরিভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ পাননি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী ও তাদের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভোটারদের সত্যিকার অর্থে পছন্দের প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ ছিলও না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে নির্বাচনের দিনের বিভিন্ন অনিয়ম, সহিংসতা ও আইন বহির্ভূত আচরণের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তারা বলছে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে সরকার বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েছিলো। কেন্দ্রে না আসলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দেয়া হুমকির বিষয়গুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপস্থিতির কারণে ভোটারদের জন্য নির্বাচনের পরিবেশ ছিল ভয়ের।

ইইউ বলছে, নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স ভর্তি এবং জালিয়াতির প্রচেষ্টাসহ নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।

নির্বাচনের দিন সহিংসতার বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা বলেছে ইইউ। এছাড়া ব্যালট বাক্স ভর্তি এবং জালিয়াতির প্রচেষ্টাসহ নির্বাচন কমিশনে স্থানীয় প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন বলেও প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীপক্ষ বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও শরিক জোট নির্বাচন বয়কট করে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভোটারদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিলও না।

রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের বিএনপি কর্মসূচি ঘিরে গণ গ্রেফতারের ঘটনায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটে।

২৬ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সরকার ও সরকারকে যারা মদদ দিচ্ছে তাদের কারো সঙ্গে আপস নেই। সেটা চীন, আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত যেই হোক না কেন। জানুয়ারির পর মানুষ একটা ধাক্কা খেয়েছে। বিএনপি যদি এখন একটা সমাবেশের ডাক দেয় তাহলে এখনো পল্টনের এক মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যাবে না। ৭ জানুয়ারিতে কোনো ভোটই হয়নি। সেখানে এক শতাংশ ভোট পড়েছে, নাকি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ভোট হয়েছে সেটা তারা দেখে না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই