পণ্যমূল্যে রোজাদারদের ত্রাহিদশা
১৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
খেজুরের দাম গতকালও নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়। রোজা শুরুর আগে তেল, ডাল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু কে শোনো কার কথা? প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। রাজধানীর বাজারগুলোতে যে যেভাবে পারছেন খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে রোজার বাজারে ইফতারে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি থাকায় স্বস্তি মিলছে না নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। রমজানের প্রথম দিনে বেশিরভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার যাত্রাবাড়ি বাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১১টার পর খুচরা পর্যায়ে দেশি শসা ১০০ টাকা কেজি দরে, হাইব্রিড শসা ৮০ টাকা, গোল বেগুন (সবুজ) ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগেও একই বাজারে দেশি শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, হাইব্রিডের শসা ৫০ টাকা, গোল বেগুন (সবুজ) ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বড় আকারের এলাচ লেবুর দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা, যা দুই দিন আগে ছিল ২০ টাকা এবং এক সাপ্তাহ আগে ছিল ১০ টাকা। আর মাঝারি আকার ও গোল লেবুর পিস ১৫ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আর ধনিয়া পাতার ৮০ টাকা কেজি। গতকাল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ৬ থেকে ৭ টাকার লেবু ঢাকার বাজারে ২০ টাকা হয় কেমন করে? কারওয়ান বাবারের সবজির খুচরা বিক্রেতা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি পর্যায়ের দাম বেশি থাকলেও খুচরা পর্যায়ে দাম খুব বেশি বাড়েনি। কারণ দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশানুরূপ বিক্রি নেই। কারওয়ান বাজারে ইফতারের কেনা করতে আসা গ্রিন রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শহীদুল আলম বলেন, রোজা ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন দাম বেধে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা তাদের আদেশ নির্দেশ কেউ মানছে না। যে যেভাবে পরছেন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাজার করতে আসা শেফালি বেগম নামের এক নারী বলছিলেন, বাজারে যাই ধরি, সেটারই দাম বেশি। সবকিছুর দাম বেশি। দুই দিন আগেও এক আঁটি ধনিয়া পাতা কিনেছি ১০ টাকায়। এখন সেটা ২০ টাকা দিয়ে কিনলাম। গরুর গোশতের দাম কসাইরা কমিয়েছিল। কিন্তু সরকার কেন নতুন করে দাম বাড়ালো বুঝতে পারছি না। আপনারা পত্রিকায় লিখে কী হবে? দাম তো আর কমবে না।
যাত্রাবাড়ি বাজারে খুচরা পর্যায়ে শবরি কলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায়, বাংলা কলা ১০০ টাকায়, চাঁপা (চম্পা) কলা ৭৫ টাকায় ও সাগর কলা ১৪০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, দুই দিন আগে শবরি কলার ডজন ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বাংলা কলা ৮০ টাকা, চাঁপা ৬০ টাকা ও সাগর কলা ১২০ টাকা। খুচরা পর্যায়ের কলা বিক্রেতা শামসুল আলম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমরা যখন কিনি, তখন সেখান থেকেই খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আমরাও সেই দামেই বিক্রি করি। বেল প্রতি পিস আকারভেদে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আকারে একটু ছোট হলে ৬০- থেকে ৮০ টাকা। আর কদবেলের পিস ৫০ টাকা। থাই পেয়ারার দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি ও দেশি পেয়ারা ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দুই দিন আগে ছিল থাই পেয়ারার দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও দেশি পেয়ারা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
খেজুরের সর্বনিম্ন দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে জাতভেদে প্রায় দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আছে কারওয়ান বাজারে। এর মধ্যে জাহিদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৮০ টাকা, খুরমা খেজুর ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, দাবাস খেজুর ৪৫০ টাকা, বরই খেজুর ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাশরুক খেজুর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, সউদী মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, আজুয়া খেজুর ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, মেডজুল জাম্বু খেজুর ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই দিনের ব্যবধানে খেজুরের দাম কিছুটা বেড়েছে। কমদামি খেজুরের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং দামি খেজুরের দাম ১০০ টাকাও বেড়েছে কেজিতে।
এদিকে আগের বাড়তি দামে ছোলা, মসুর ডাল, খেসারি ডাল ও খোলা চিনি বিক্রি হ চ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ছোলার কেজি ১১০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা, খেসারি ডাল ১৩০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানীরা জানান, গত কয়েকদিনে এই পণ্যগুলোর দাম আর বাড়েনি, একই আছে। তবে যাত্রাবাড়ি বাজারে ইফতারের ফল কিনতে আসা আলাউদ্দিন আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের নিত্যপণ্যের দামের যে অবস্থা, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা এক ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তারা কোনো ধরনের স্বস্তি পাচ্ছে না। সেহরি ইফতার কোনো কিছুই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা স্বাভাবিক ভাবে করতে পারবে না।
এদিকে গতকাল খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অতি সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুরের দাম হবে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাহিদি খেজুরের কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুনের সই করা সার্কুলারে এ দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সার্কুলারে বলা হয়েছে, দেশে আমদানিকৃত বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানিমূল্য, আরোপিত শুল্ক ও কর এবং আমদানিকারকের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিকেজি খেজুরের মানভিত্তিক যৌক্তিক মূল্য নিরূপণ করেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সুনামগঞ্জে নিখোঁজের ৩৩ ঘণ্টা পর গাছের নিচে মিললো যুবকের মরদেহ
নগরকান্দায় সড়কে প্রাণ গেল দুই কলেজ শিক্ষার্থীর
মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩ রোহিঙ্গাসহ ১০ জন আটক
বগুড়ার দুই সাংবাদিক গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর এবার মজুরি ২৫,০০০ টাকা দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
এমডি শূন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হ য ব র ল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪
হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল
রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক
রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে
ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর
ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭
'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা
ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ
অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য