জিম্মি উদ্ধারে আলোচনা শুরু
২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
অবশেষে সাড়া দিয়েছে সোমালি নৌদস্যুরা। বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ২৩ নাবিককে জিম্মি করে রাখার নয় দিনের মাথায় মালিক পক্ষের সাথে কথা বলেছে তারা। গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জাহাজের মূল মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল মিজানুল ইসলাম।
তিনি জানান, সোমালি দস্যুরা প্রথমবারের মতো তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। তবে তারা প্রাথমিক আলাপে কোনো ধরনের মুক্তিপণ দাবি করেনি। তাদের সাথে আলোচনা শুরু হয়েছে। জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের নিরাপদে মুক্ত করতে এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আলোচনার যেকোন পর্যায়ে মুক্তিপণের বিষয়টি আসতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, অন্য কোনো বিষয়ে এখনও বলার মতো কোনো আলাপ হয়নি। যেহেতু, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, এ মুহূর্তে আর কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। ছিনতাইকারী দস্যুদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের খবরে জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের মাঝেও কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের কার্গো জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি করে সোমালি নৌদস্যুরা। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককেও জিম্মি করা হয়। ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। সেটি ১৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামারিয়া বন্দরে পৌঁছার কথা ছিল। জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে এখন সোমালিয়ার নুগাল প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা শহর গদবজিরানের কাছাকাছি উপকূলে নোঙ্গর করে রেখেছে নৌদস্যুরা।
গত কয়েকদিনে শুধুমাত্র এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সঙ্গে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছিল জাহাজটির মালিক পক্ষের। জিম্মিকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অপেক্ষায় ছিল তারা। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় একটা অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক কাজ করছিল। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছিল জিম্মি নাবিকদের স্বজনদের মাঝেও। এর মধ্যেই জাহাজটির অবস্থানও কয়েকবার পাল্টায় দস্যুরা। অবশেষে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু হওয়ায় জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধরের পথ উন্মুক্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স তাদের অপারেশন আটলান্টার অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর উপর নজরদারি শুরু করে। একই সময়ে নজরদারি ও টহল জোরদার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ইউরোপীয় এই বাহিনী আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তাব দেয়। তবে বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি। নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই অভিযানের ওই প্রস্তাবে সরকার এবং মালিক পক্ষ রাজি হয়নি।
মালিক পক্ষ শুরু থেকেই সমঝোতার মাধ্যমে অর্থাৎ সোমালি জঙ্গিদের দাবিকৃত মুক্তিপণ পরিশোধ করেই নিরাপদে নাবিক এবং জাহাজ ফিরিয়ে আনার পক্ষে। জাহাজটি ছিনতাই হওয়ার পর থেকেই তারা এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দস্যুদের সাথে আলোচনা শুরু হওয়ায় সমঝোতার মাধ্যমে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার কাজটি এখন সহজ হয়ে যাবে।
এর মধ্যে খবর আসে জাহাজে জিম্মিদের সাথে অমানবিক আচরণ করছে সোমালি নৌদস্যুরা। জাহাজে থাকা খাবার ও পানির অপচয় করার পাশাপাশি জিম্মি নাবিকদের কেবিনের বদলে জাহাজের ডেকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখার খবরও পাওয়া গেছে। ক্ষণে ক্ষণে তারা রুঢ় আচরণ করছিল জিম্মিদের সাথে। ভারী অস্ত্র হাতে জাহাজে দস্যুদের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। দস্যুদের এমন বেপরোয়া আচরণে রীতিমত শঙ্কিত নাবিকেরা। তাদের নাওয়া-খাওয়াও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচনা শুরু হওয়ায় জিম্মিদের সাথে মানবিক আচরণ করার আহ্বান জানানোর পথও সহজ হয়েছে। আশা করা যায়, আলোচনা আরো এগিয়ে গেলে জিম্মিদের প্রতি নৌদস্যুদের বৈরি আচরণ থাকবে না।
তাছাড়া জাহাজে খাদ্য সঙ্কটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। মালিক পক্ষের একটি সূত্র জানায়, জিম্মিদের উদ্ধারে তারা যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে রেখেছে। এখন যোগাযোগ শুরু হওয়ার দ্রুত সময়ে জিম্মিদের উদ্ধার করা যাবে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালে একই নৌদস্যুদের হাতে জাহান মণি জিম্মি করার ঘটনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যাবে। ওই সময় একই মালিকানাধীন এমভি জাহান মণির ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ ২৬ জনকে জিম্মি করা হয়। মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের চেষ্টায় তাদের মুক্ত করে আনা হয়।
এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা