রমজানে বন্ধ কয়েকশ’ রেস্তোরাঁ বেকারত্বের পথে ২ লাখ কর্মী
২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪ এএম
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যুর পর রাজধানীজুড়ে চলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা রেস্তোরাঁবিরোধী অভিযান। দুই সপ্তাহের অভিযানে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক রেস্তোরাঁ। আর এতেই হুমকির মুখে পড়েছে বিপুলসংখ্যক রেস্তোরাঁকর্মীর কর্মসংস্থান। রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেফ, ওয়েটার বা নিরাপত্তারক্ষীরা যেমন কাজ হারাচ্ছেন, তেমনি কাজ হারাচ্ছেন ফুডপান্ডার মতো খাবার সরবরাহকারী অ্যাপের সরবরাহকারীরাও। আর তাদের বড় অংশই তরুণ, যারা পড়ালেখার পাশাপাশি এ কাজে নিয়োজিত। পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় এসব তরুণরা এই কাজ করেই নিজেদের পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন। একের পর এক রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের ভবিষ্যত। অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক অভিযানে হয়রানির ভয়ে রেস্টুরেন্ট চালু করতেও ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই আবার সংস্কারের নামে বন্ধ রেখে কর্মচারীদের বিদায় করে দিয়েছেন যাতে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন ও পুলিশের অভিযানের নামে ক্ষতির সম্মুখিন হতে না হয়।
ময়মনসিংহের একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন হামিদুর রহমান। বাবা মুদি দোকানদার। তার পক্ষে হামিদুরের পড়ালেখার খরচ জোগানো করা সম্ভব না। তাই নিজের পড়ালেখার খরচ জোগানোর পাশাপাশি পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে হামিদুর তাই ঢাকায় ফুডপান্ডা সার্ভিসে খাবার ডেলিভারির কাজ করেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে খাবার ডেলিভারি করেন। এ থেকে মাসে আয় করেন ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। শুধু হামিদুরনন, তার বড় ভাইও পড়ালেখার পাশাপাশি ফুডপান্ডাতেই খাবার ডেলিভারি করেন।
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ড ও এর জের ধরে বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার শত শত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হামিদুরের ডেলিভারির সংখ্যাও কমে গেছে। এখন ঢাকায় বাসা ভাড়া দেওয়া ও বাড়িতে টাকা পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন তিনি।
দেড়-দুই বছর হলো পড়ালেখার পাশাপাশি ফুডপান্ডায় খাবার ডেলিভারির কাজ করেন মালিবাগের কলেজ ছাত্র মজিবুর রহমান। অন্য কাজ খুঁজছিলেন, কিন্তু রুটিন অনুযায়ী সময় দেওয়া সম্ভব না বলেই এই কাজ বেছে নিয়েছেন। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা খাবার ডেলিভারির কাজ করলে মাসে আট থেকে ৯ হাজার টাকা আয় হয় তার। অভিযানে ঢাকার রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ হতে থাকায় তার সেই আয়েও টান পড়েছে। জানা গেছে, সারাদেশে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় কত লোক যুক্ত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কাছেও। তবে তাদের অনুমাননির্ভর তথ্য বলছে, সারাদেশে রেস্তোরাঁকর্মীর সংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ কাজ করেন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। আর ঢাকায় কেবল খাবার সরবরাহের কাজেই যুক্ত প্রায় ৫০ হাজার রাইডার।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান ইনকিলাবকে বলেন, জানান, কয়েক লাখ লোক রেস্তোরাঁ ব্যবসায় যুক্ত। বিনা নোটিশে একের পর এক রেস্তোরাঁ বন্ধ করার ফলে শুধু মালিকরাই নয়, বিপদে পড়েছেন ২ লাখের বেশি কর্মীরাও। অভিযানের ফলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তালিকাভূক্ত প্রায় ২০০ রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। সমিতির বাইরেও রয়েছে শত শত রেস্টুরেন্ট। ইমরান হাসান বলেন, রোজার মাসে ব্যবসা বন্ধ থাকায় বড় অঙ্কের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরা। রেস্তোরাঁগুলো বন্ধের ফলে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগও এখন হুমকির মুখে। আমরা রাষ্ট্রের নিয়ম মেনেই ব্যবসা করতে চাই। তবে শুধু আমাদের ওপর কঠোর না হয়ে রাজউক ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদেরও ধরা হোক, যারা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলোকেও বৈধতা দিয়েছেন।
রেস্তোরাঁ মালিকদের দাবি, তারা প্রতিষ্ঠান চালুর আগে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়েছেন। তারপরও রাজউক কর্মকর্তাদের নিয়মিত ঘুষ দিয়ে যেতে হয়। এখন একটি দুর্ঘটনার পর যেভাবে কোনো সময় না দিয়েই একের পর এক রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হচ্ছে, তাতে আরও অনেক মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে পরোক্ষ ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। ঢাকা শহরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক গড়ে ওঠে রেস্তোরাঁ। এর অধিকাংশই আবাসিক ভবনে। এসব রেস্তোরাঁর অনুমতি পাওয়া ও চালু থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়েও। রেস্তোরাঁগুলো চালু হওয়ার আগেই কেন এসব সংস্থা দেখেনি সেই অভিযোগও অনেকের।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ীই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। কারও কর্মসংস্থান নষ্ট হোক, সেটি আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে আমরা চাই, সবাই একটা নিয়মের মধ্যে আসুক। মানুষের প্রাণহানি তো কারোরই কাম্য নয়। প্রতিটি ভবনে যেন অগ্নি ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকে, সেটিই আমরা দেখছি। এগুলো ঠিক না পেলে তবেই আমরা রেস্তোরাঁ বন্ধ করছি। এসব রেস্তোরাঁ যদি সব ঠিকঠাক করে আবার চালু করতে চায়, তখন আমরা সেটা বিবেচনা করব।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) ড. খ: মহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশের তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। রাজধানীর সকল রেস্টুরেন্ট ও হোটেলগুলো আইন অনুযায়ী পরিচালিত হউক সেটি আমরা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি।
২২ দিনেও প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি: বেইলি রোড ট্যাজেডির প্রায় তিন সপ্তাহের বেশি। আতঙ্ক কাটছে না ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটিতে আগুন লেগে ৪৬ জনের প্রাণহানির রহস্য ঘটনার ২২ দিনেও উদ্ঘাটন করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ঘটনার দিন রাতেই সংস্থাটি ৭দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে সেই কমিটি এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরীর বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। আমরা কাজ করছি। রমনা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে যে মামলা হয়েছে তা সিআইডি তদন্ত করছে, আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সিআইডি বিভিন্ন ধাপে তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। শিগগিরই ঘটনার কারণ ও জড়িতদের বিষয়ে জানানো হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা