পণ্যমূল্য উপেক্ষা বিপাকে ক্রেতা
২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪ এএম
সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম পাত্তাই দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি চলছে। মাহে রমজানে ভোগ্যপণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে ওই দামে কোন কিছুই মিলছে না। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটছেই। বেশিরভাগ পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজন। রোজার বাজারে আগুন নিন্মবিত্ত এমন কি মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় সাধারণ মানুষ যুগপৎ ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ভোক্তাদের নীরব কান্না আর হাহাকার দেখার কেউ নেই।
বিগত ১৫ মার্চ খুচরা বাজারে মাছ, গোশত, ডিম, ডাল ও সবজির মতো ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে কৃষিপণ্য ক্রয়বিক্রয়ের অনুরোধ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচও তুলে ধরা হয়। এর ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়।
ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৮ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৬২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে বাজারে মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯৫-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬২ টাকা, আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকা। মুরগির মতো সবকিছু সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর গোশতের উৎপাদন খরচ ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম প্রতি কেজি ৬০৫ টাকা ১৩ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩১ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা বেশি দামে গরুর গোশত কিনতে হচ্ছে। হাড় ছাড়া প্রতি কেজি গোশত ৯০০ টাকা এবং হাড়সহ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশত এক হাজার তিন টাকা নির্ধারণ করা হয়, বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। বাজারে অন্য সব প্রয়োজনীয় পণ্যও কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। দেশি রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকা , চায়না ২০০ টাকা। চীন থেকে আমদানি আদা ২০০ টাকা, দেশি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবে দাম ঠিক করা হয়েছে।
দেশি পেঁয়াজ কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৫৩ দশমিক ২০ টাকা ও খুচরা ৬৫ দশমিক ৪০, দেশি রসুন কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৯৪ দশমিক ৬১ টাকা ও খুচরা ১২০ দশমিক ৮১, আদা আমদানিকৃত পাইকারি বাজার মূল্য ১২০ দশমিক ২৫ টাকা ও খুচরা ১৮০ দশমিক ২০ টাকা।
সরকারি দামে ছোলা, ডাল কিছুই মিলছে না। ভালো মানের ছোলা প্রতি কেজি-১২০ টাকা, নিম্নমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। মসুর ডাল চিকন ১৫০ টাকা আর মোটা জাতের মসুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। সরকারিভাবে ২৮ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। প্রতি ডজন ডিম ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বুটের ডাল ৯০ টাকা , চনার ডাল ১০০ টাকা, মুগ ডাল ২০০ টাকা, খেসারি ১৪০ টাকা। চিনি খোলা ১৫০ টাকা, প্যাকেট ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা।
নির্ধারিত দামে কোন মাছ ও সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে মাছের সরবরাহ পর্যাপ্ত। এরপরও দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। বেড়েছে গুঁড়ো দুধ, মশলার দাম। লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। তারা এজন্য সরকারের সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইচ্ছা সরকারের নেই। কারণ ব্যবসায়ীরা এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
দেশ থেকে অবাধে পুঁজি পাচারের ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতিতে মানুষ দিশেহারা। তার উপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত নির্বাচনে সরকারি দলের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে লোক দেখানো কিছু অভিযান এবং জরিমানা আদায়ের মধ্যে সরকারের কার্যক্রম ঘুরপাক খাচ্ছে।
২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়াকে আইওয়াশ বলছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, দাম নির্ধারণ করে দিয়ে তা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা জনগণের সাথে এক ধরনের তামাশা। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেটের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা