পবিত্র মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমার নামাজে অংশ নিতে সারাদেশে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। রাজধানীর প্রতিটি মসজিদেই ছিল মুসুল্লীদের উপচে পড়া ভিড়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, মহাখালির মসজিদে গাউসুল আজমসহ পাড়া মহল্লার সব মসজিদে মসজিদের ভিতরে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। চারতলা পাঁচ তলা বা তারও বেশি তলার মসজিদগুলোর ভিতরে জায়গা না হওয়ায় আশপাশের রাস্তায় হাজার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। মসজিদের ভিতরে নামাজে অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই মুসল্লিরা চলে আসেন মসজিদে। আজানের পর পরই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় প্রতিটি মসজিদ। মুসল্লিদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। অতীতে এমন মুসল্লি উপস্থিতি দেখা যায়নি। যে সব মসজিদে মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা আছে সেগুলোতে মহিলাদের উপস্থিাতও ছিল অনেক বেশি। অনেকে দূর থেকে গাড়ি করে মসজিদে নামাজ পড়তে এসে জায়গা না পেয়ে পার্কের ভিতরে বা মসজিদের আশপাশের প্রাঙ্গণে অনেকে নামাজ আদায় করেছেন।

মাগফিতারে দশকের প্রথম রোজায় পড়েছে বরকতময় এ জুমা। নামাজে আল্লাহর দরবারে মুসুল্লিরা নিজেকে সঁপে দিয়ে প্রাণ ভরে নামাজ আদায় করেছেন। পরে পরিবার, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়ায় অংশ নেন তারা। এ সময় দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত পরিচালিত হয়। রোজার জুমা হওয়ায় বেশি নেকির আশায় দূর-দূরান্ত থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে ছুটে আসেন মুসল্লিরা। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মুসল্লি রাস্তায় নামাজ পড়েন। একজন মুসল্লি বলেন, রোজার প্রথম জুমা আজ, তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে কবুল করে নেন। এই পবিত্র রমজানে রহমত , মগফিরাত এবং নজাত যেন লাভ করতে পারি। আরেক মুসল্লি বলেন, রমজান মাসের জুমায় সওয়াবের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই কাজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ করেই মসজিদে চলে এসেছি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পবিত্র মাহে রমজানের গতকাল দ্বিতীয় জুমার নামাজেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি মসজিদে মুসল্লির কাতার মসজিদ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত হয়। অনেক মুসল্লি রাস্তায় নামাজ আদায় করেন। কোন কোন মসজিদে অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে বারান্দা, ছাদ এবং পাশের সড়ক ও খোলা জায়গায় সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। সেখানে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ইমাম ও খতিবগণ জুমার খুৎবায় জাকাতের তাৎপর্য বর্ণনা করেন। তারা বলেন, জাকাত প্রদান অন্যতম ফরজ ইবাদত। যথাযথভাবে জাকাত আদায় করা জরুরি। তা না হলে পরকালে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। জাকাত ধনীদের উপর গরিবের হক। নামাজ শেষে দেশ জাতি ও মানুষের কল্যাণ কামনা করে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমাতেও বরিশালের মসজিদগুলো ছিল মুসল্লীদের ভিড়। খুতবা পূর্ব বয়ানে খতিব ছাহেবগণ রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করেন। জুমার খুতবাতেও রমজানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

বরিশাল মহানগরীর জামে এবাদুল্লাহ মছজিদ, কেন্দ্র্রীয় জামে কসাই মসজিদ, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, পুলিশ লাইন্স মসজিদ, জেলা সদরের মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছাড়াও গুঠিয়ার বায়তুল আমান মসজিদসহ সব মসজিদেই রমজানের দ্বিতীয় জুমাতেও মুসল্লীদের ভিড় ছিল।

এদিকে নামাজ আদায় এবং পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃআঃ) ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতের লক্ষে রমজানের দ্বিতীয় জুমাতেও সারা দেশ থেকে অসংখ্য জাকেরান ও আশেকানগণ আটরশীর বিশ^ জাকের মঞ্জিলে সমবেত হয়ে জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এ দরবার শরিফের জামে মসজিদেও জুমা পূর্ব বয়ানে রমজানের দ্বিতীয় দশকের মাগফিরাতের ওপর আলোকপাত করা হয়।
নামাজ শেষে মিলাদ এবং দোয়া মোনাজাতের পরে পীর ছাহেবের রওজা শরিফ সম্মিলিতভাবে জিয়ারতের নিয়তে ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে পুনরায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ দরবারে আগত সব জাকেরান ও আশেকানসহ মুুসল্লীগণের জন্য ইফতারী ও সেহেরীসহ রাতের খাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে।