সীতাকুণ্ডে ভবন সঙ্কটে স্কুল ছাড়ছে ৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম
দরজা নেই, বেড়া নেই, টিনের চালটিও ভেঙে পড়েছে । সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় মেঝে। জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশ, আছে মশার উপদ্রবও। রাতে হয় কুকুরের আখড়া, দিনে চলে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। এমন ছন্নছাড়া এক পরিবেশে চলছে সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সীতাকুণ্ড থেকে সংবাদদাতা জানান, চার বছর আগেও বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল। পাকা সড়কের পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে তখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৫৪ জন। ২০২১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প কাম বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সীতাকুণ্ডে ছয়টি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেই তালিকায় ওঠে উত্তর বাঁশবাড়িয়ার এ বিদ্যালয়টির নামও। নতুন ভবন নির্মাণ করতে বিদ্যালয়ের মূল স্থাপনাটি ভেঙে অনতিদূরে পুকুর পাড়ে একটি অস্থায়ী বেড়ার ঘর তৈরি করে দেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। যা ছিল খুবই নড়বড়ে ও পড়ালেখার অনুপযোগী। এরপর কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা মাত্র ১৪২ জন। চার বছর আগের তুলনায় যা ৬০ শতাংশ কম।
কেন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আলীম বলেন, বিদ্যালয়ের অস্থায়ী স্থাপনাটি এতটাই নাজুক কেবল ঝুলে পড়া টিনের চালটি ছাড়া এর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কোন অবিভাবকই তার সন্তানকে রাখতে চাই না। চলতি বছর শিশু শ্রেণিতে মাত্র ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। আবার যারা ভর্তি আছে তারাও প্রতিনিয়ত আমাদের বিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে ভর্তি হচ্ছে।
গোপাল চন্দ্র দাস যিনি তার মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী রাধা দাসকে এ বিদ্যালয় থেকে ছাড়িয়ে দূরবর্তী একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। তিনি বলছেন, জঙ্গলে ঘেরা বিদ্যালয়টিতে মশার উপদ্রব। স্কুলে গেলে মশার কামড়ে মেয়ের হাত পা ফুলে যায়। এছাড়া একদিন মেয়েকে স্কুল কক্ষে কুকুরে কামড়াতে চেয়েছিল। এরপর মেয়ে ভয়ে আর ওই স্কুলে যেতে চাইনি। আমিও তাকে জোর করিনি।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রবিউল আলমের মা নাজমা বেগম দু’দিন আগে এসেছিলেন ছেলেকে এ বিদ্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিতে। তার ভাষ্য, শিশুদের পড়ার কোন পরিবেশ সেখানে নেই। আমিতো দেখে শুনে আমার ছেলের জীবন নষ্ট করতে পারি না।
এদিকে শিক্ষার অনুপযুক্ত পরিবেশ কিংবা অভিভাবকদের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়িয়ে নেয়ার দৃশ্য কেবল উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়রই নয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত অন্য ৫টি বিদ্যালয়ের অবস্থাও ভয়াভহ। এস এম পাইলট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার বছর আগে ছাত্র-ছাত্রী ছিল ১০৭৬ জন। বর্তমানে তা ১২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখিত ৬টি বিদ্যালয়ে সে সময় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭৭০ জন। বর্তমানে যা ঠেকেছে ৯৫৬ জনে। অর্থাৎ গত চার বছরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে ১৮১৪ জন বা ৬৫ শতাংশ।
এর মধ্যে এস এম পাইলট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫১ জন, উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১২ জন, পূর্ব লালানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২২৫ জন, মধ্যেরধারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯০ জন, পশ্চিম বহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬ জন ও কেশবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০ জন শিক্ষার্থী কমেছে।
অন্যদিকে কাজ শুরুর ২৪ মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও চার বছর পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বরত প্রকৌশলী আইয়ুব আলী বলছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ছয়টির মধ্যে ৫টি বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। চার বছরে ওই পাঁচ প্রকল্পের ২৫ ভাগ কাজও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। আবার কাজ চলমান দেখিয়ে পশ্চিম বহরপুর, মধ্যেরধারী ও পূর্ব লালানগর বিদ্যালয়ে নামে মাত্র কাজ করছেন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক। উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ বন্ধই পড়ে আছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুচ্ছোফা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে। কিন্তু তাদের এই বছর আর শেষ হয় না। অথচ তাদের গাফিলতির কারণে আজ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে।
এলজিইডি চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ছয় বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়া বর্ষা শুরুর আগেই বিদ্যালয়গুলোর অস্থায়ী স্থাপনা মেরামত করে দেয়া হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেছি। একই সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা