স্বাধীনতার ৫২ বছরেও নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত হয়নি
২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বরিশালসহ উপকূলভাগ জুড়ে দুর্যোগপূর্ণ অশান্ত মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। এমনকি স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীরও পরে উপকূলভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীর জানমাল রক্ষা করে নিরাপদ যোগাযোগের বিষয়টি এখনো অনেকটাই উপেক্ষিত বলে অভিযোগ এ অঞ্চলের কোটি মানুষের। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই গত ২৫ বছরে সরকারি আর্থিক সহাতায় রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য নতুন ১২টি সী-ট্রাক ছাড়াও ৩টি উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ এবং আরো দুটি পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কিন্তু ইজারাদারের মাধ্যমে যথেচ্ছ পরিচালন এবং সুষ্ঠু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে চরম উদাসীনতাসহ দুর্নীতির কারণে ‘চলাচল অযোগ্য’ বলে ইতোমধ্যে ৪টি সীÑট্রাক বিক্রি হয়ে গেছে।
অথচ বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর, মির্জাকালু-চরআলেকজান্ডার এবং চরদোয়ানী-বড়মাছুয়া-সন্যাসী’র মতো অতি জনগুরুত্বপূর্ণ রুট সমূহে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ অনুপস্থিত।
১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্টের আদেশ বলে রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় বিশাল জনগোষ্ঠীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করা। এমনকি এ লক্ষ্য বিশ^ ব্যাংকের সুপারিশে উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহণে পরিচালনা ব্যয়ের ওপর ভর্তুকি হিসেবে সরকার প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসি’কে ৫০ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তাও প্রদান করছে। এমনকি উপকূলীয় নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ১৯৯৮ সাল থেকে ১২টি নতুন সী-ট্্রাক সংগ্রহে অর্থায়ন করে সরকার। এর বাইরে ১৯৬৪ সালে বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটের জন্য সংগ্রহ করা ৪টি উপকূলীয় নৌযানের মধ্যে দুটির পুনর্বাসন ছাড়াও ২০০২ সালে চীনা ঋণে ‘এমভি বার আউলীয়া’ ২০২১ সালে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভী রহমান’ সংগ্রহে সরকার ৮০ ভাগ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এসব নৌযানের পেছনে সরকার সংস্থাটিকে শতাধিক কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহণে বেসরকারি সেক্টরের অংশগ্রহণ খুব নগন্য বিধায় সরকার রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠাটিকে নৌযান সংগ্রহ ও পরিচালনে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ‘অশান্ত মৌসুম’ এ দেশের উপকূলভাগকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে ‘বিশেষ কারিগরি ব্যবস্থা সম্বলিত’ নিরাপদ উপকূলীয় নৌযান হিসেবে নিবন্ধিত ছাড়া অন্যসব নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ।
কিন্তু বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলে সরকারি অর্থে নতুন যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহসহ মেরামত ও পুনর্বাসন করা হলেও ২০১১ সালের মে মাস থেকে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম উপকূলীয় রুটে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। ২০০১ সালে চীনা ঋণে ‘এমভি বার আউলীয়া’ সংগ্রহ করা হয়। এমনকি নির্ধারিত সময়ের ৪ বছর পরে ২০২১-এর শেষভাগে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করা হলেও সংস্থাটি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে আর যাত্রী পরিবহণ শুরু করেনি। তুলনামূলকভাবে ছোট মাপের ইঞ্জিন সংযোজন করায় দুটি নৌযানেরই গতি অনেক কম। ফলে তা ভাটি মেঘনা অতিক্রম করে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছতে অনেক বাড়তি সময় ও জ্বালানির প্রয়োজন হয় বিধায় ২০২১-এর ডিসেম্বরে ট্রায়াল ট্রিপের পরে আর বাণিজ্যিক পরিচালন সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তি মির্জাকালু-চর আলেকজান্ডার রুটের সী-ট্রাক সার্ভিস গুলিও। বরগুনার চরদোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সন্যাসী পর্যন্ত সী-ট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপকূলীয় এলাকাটির সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবিও দীর্ঘদিনের।
এদিকে সংস্থাটির ১৪টি সী-ট্রাকের ইতোমধ্যে ৪টি বিক্রি হয়ে গেছে। এরমধ্যে ‘এসটি খিজির-৬’ ২০০১ সালেই চীনা ঋণে সংগ্রহ করা হয়েছিল। বিআইডব্লিউটিসি’র সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ১০টি সী-ট্রাকের মাত্র ৫টি ইজারার মাধ্যমে চলছে। দুটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে এবং অপর ৩টি টেকনাফ ও চট্টগ্রামে পড়ে আছে। শুধুমাত্র ‘এসটি খিজির-৫’ ও ‘এসটি খিজির-৮’ ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট এবং ‘এসটি আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ মনপুরা-শশিগঞ্জ, ‘এসটি ভাষা শহিদ জব্বার’ ভাষানচর-বয়ারচর এবং ‘এসটি শেখ ফজলুল হক মনি’ বয়ারচর-হাতিয়া রুটে চলছে।
‘এসটি শেখ রাসেল ও এসটি মিতালী’ দীর্ঘদিন ধরে সংস্থা ১ ও ৩ নম্বর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ ও ‘এসটি ভাষা শহিদ সালাম’ টেকনাফে পড়ে আছে গত ১৫ মার্চ থেকে। অন্য রুটের পরিবর্তে ইজারাদারের ইচ্ছায় এতদিন এ দুটি সী-ট্রাক টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করে। এসব নৌযানের সাগর পাড়ি দেয়া নিষিদ্ধ বিধায় তা এখনো নিরাপদ পোতাঙ্গনে ফেরেনি। আগামী ৭ মাস নৌযান দুটি আর নিরাপদ পোতাঙ্গনে ফিরতে পারবেও না বলে জানা গেছে।
ইতোপূর্বে বরিশাল থেকে ইলিশা ঘাট হয়ে মজু চৌধুরীর হাট রুটে সংস্থাটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘এসটি খিজির-৮’ চলাচল করলেও ইজারাদারের কাছে তুলে দেয়ার পরে তা ইলিশাঘাট ও মজু চৌধুরীর হাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বরিশাল থেকে দ্রুত ও নিরাপদে চট্টগ্রামে পৌঁছার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জনগণের অর্থে সংগ্রহ করা এসব সী-ট্রাক যথাযথ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালন করলে তা উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারত।
এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপকূলীয় নৌ যোগাযোগ আরো নিরাপদ ও সম্প্রসারণে ইচ্ছে থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ‘নানা সীমাদ্ধতা’ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। দায়িত্বশীল মহল থেকে, ‘অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয়’ বলেও জানান হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা