ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
কেন নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিল রাশিয়া ও চীন?

কি ছিল গাজায় যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে?

Daily Inqilab দ্য গার্ডিয়ান

২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম

যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলাকে সুসংহত করার প্রয়াসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এপর্যন্ত আনা বিভিন্ন প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে এসেছে। এরপর, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব প্রস্তাব পেশ করেছে, যাতে শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভোটে ভোটো দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। কিন্তু কি বলা হয়েছে সেই মার্কিন প্রস্তাবে? প্রস্তাবটি সমস্ত অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি কৌশল সুরক্ষিত করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে।

গাজায় যুদ্ধ বিরতি সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাবে শুরুর শব্দটি ছিল জটিল এবং অস্পষ্ট। এটি সব পক্ষের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে, প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের অনুমতি দিতে ও মানবিক দুর্ভোগ লাঘবের জন্য অবিলম্বে এবং টেকসই যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘকে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু রাশিয়া সহ মার্কিন সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন যে, পাঠ্যটি যুদ্ধবিরতির শর্তে ‘আহ্বান› শব্দটি স্পষ্টভাবে ব্যবহার করেনি।

প্রস্তাবটি আরও ইঙ্গিত করে যে, যুদ্ধবিরতি সমস্ত জিম্মি মুক্তির শর্তসাপেক্ষে হবে। পাঠ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে চিহ্নিত করেছে, যেহেতু পূর্বে দেশটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের ১৫-শক্তিশালী সদস্যদের মধ্যে ১১টির ভোট পেয়েছে, তবে রাশিয়া ও চীন এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এবং গায়ানা বিরত ছিল।

জাতিসংঘে রাশিয়ার সহকারী রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমরা এমন কিছুতে সন্তুষ্ট নই, যা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় না।’ শুক্রবারের ভোটের পর তিনি বলেন, ‘সমন্বয় পর্যায়ে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জিম্মিদের মুক্তি বা হামাসের নিন্দার শর্তাধীন হওয়া উচিত নয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছে প্রায় সব নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।›

পলিয়ানস্কি যুক্তি দিয়েছেন যে, সমস্ত জিম্মিদের মুক্তির উপর শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি করার প্রস্তাব সমর্থন করা হলে, তা হবে হামাস এবং ইসরায়েল একটি চুক্তিতে পৌঁছানো পর্যন্ত কয়েক হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অব্যাহত ইসরায়েলি আক্রমণের সম্মুখিন হতে সমর্থন করা।

রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন যে, প্রস্তাবটি একটি ‹ভন্ডামিমূলক প্রদর্শনী› যা যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলের উপর প্রকৃত চাপ সৃষ্টি করে না। মস্কো আরও বলেছে যে, ঘটনাটি দেখিয়েছে যে মার্কিন প্রশাসন আমেরিকান ভোটারদের দিকে একটি হাড় ছুঁড়ে দিতে এবং বোঝাতে আগ্রহী ছিল যে, এটি নিরপেক্ষভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করছে।

গায়ানার বিরত থাকার ব্যাখ্যা করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রতিনিধি ক্যারোলিন রড্রিগেস-বারকেট বলেছেন, ‹গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদনের বিপরীতে, এই প্রস্তাব অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় না।› তিনি আরও বলেছেন যে, যুদ্ধবিরতিকে জিম্মিদের মুক্তির সাথে যুক্ত করা বা শর্ত দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‹দুটি অন্যায় একটি ন্যায় ঘটাতে পারে না এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত নয় এবং অন্যের অপরাধের জন্য তাদের জিম্মি করা উচিত নয়।›

বারকেট বলেন, ‘যদি কেউ পটভূমির জ্ঞান ছাড়াই এই প্রস্তাবণাটি পড়েন, তাহলে এই সঙ্ঘাতের কোন পক্ষ গাজায় নৃশংসতা করছে, যে নৃশংসতা এই খসড়া প্রস্তাবে আরও সামনে আনার প্রয়োজন ছিল, তা নির্ধারণ করা কঠিন হবে। ৪১টি অনুচ্ছেদের একটি প্রস্তাবে, ২হাজার ৩৬টি শব্দ, আগ্রাসনকারী শক্তিটির কথা শেষ অনুচ্ছেদে মাত্র একবার উল্লেখ করা হয়েছে।’

কূটনৈতিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে কিছু ইতিবাচক নেতৃত্ব প্রদর্শন করে উপকৃত হতে পরতো। যুক্তরাষ্ট্র গাজায় প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত পণ্যের উপর কম নিষেধাজ্ঞা সহ সাহায্য দ্রুত প্রবাহের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এটি ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির বিরোধিতা করেছে। কিন্তু পাঠ্যটির বেশিরভাগ অংশ স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের কোনও সমালোচনা না করে বরং এর পক্ষে পরিচালিত হয়েছে।

মার্কিন প্রস্তাবটি তিনটি বিতর্কিত বিষয়ে নীরব ছিল। ইসরায়েলে নির্দেশিত একটি ধারায়, পাঠ্যটি জাতিসংঘের ত্রাণ কার্য সংস্থা আনরওয়া-এর নিরপেক্ষতা তদন্ত করতে সহযোগিতার জন্য সকল পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এই পর্যায়ে সংস্থাটির তহবিল ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়নি। গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা মূলত জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারীকে একটি সুস্পষ্ট ভূমিকা দেওয়ার মধ্যে অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। গাজাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে, কিনা তা বলা হয়নি।

মার্কিন প্রস্তাবের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি খসড়া প্রস্তাব আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট, তবে এটি শুক্রবার ভোটে রাখা হয়নি। জাতিসংঘে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস দে রিভিয়ের বলেছেন, ‹রমজানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যদের দ্বারা চ্যাম্পিয়ন একটি বিকল্প খসড়া ভোটের জন্য উৎখাপিত হবে। আমাদের যুদ্ধবিরতি দরকার তারপর আলোচনা হবে।’

কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে এমন বিভক্তি রয়েছে যে, এই প্রস্তাবটি মাঠে মারা যেতে পারে। এবং এবার একটি মার্কিন ভেটো দ্বারা, সম্ভাব্য এই ইস্যুতে দেশটির চতুর্থ ভোটো। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, পর্বটি এটি নিশ্চিত করবে যে, নিরাপত্তা পরিষদ স্রেফ ভেঙে পড়েছে।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা