রাজধানীর মহাখালী টিঅ্যান্ডটি মাঠ সংলগ্ন গোডাউন বস্তিতে গতকাল রোববার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্ততঃ দুই শতাধিক বস্তিঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জীবনের সকল সহায় সম্বল হারিয়ে পাগলপ্রায় বস্তির বাসিন্দারা। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমান সম্পর্কে জানা যায়নি। ফায়র সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টা ৫মিনিটে গোডাউন বস্তিতে হঠাৎ আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশন থেকে একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু গতকাল ইফতারের আগে এবং অফিস ছুটির কারণে রাস্তায় ছিলো ব্যাপক যানজট। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো জ্যামের কারণে রাস্তায় আটকে থাকে। গাড়িগুলো যেতে বিলম্ব হলে দ্রুতই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কাঠ-বাঁশের তৈরী বস্তির ঘরগুলোতে দ্রুতই আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিস থেকে ধাপে ধাপে পাঠানো মোট ১২টি ইউনিট অনেক চেষ্টার পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহনা হক জানান, আগুনের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও অধিকাংশ বসত ঘরগুলো পুড়ে গেছে।
বস্তিবাসিদের দাবি, বনানীর গোডাউন বস্তিতে লাগা আগুনে দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তারা। আগুনে পুড়ে গেছে জমানো টাকা-পয়সা সহায় সম্বল
বস্তির পাশাপাশি ঘরে বসবাস করতেন তৃতীয় লিঙ্গের ১০ জন হিজড়া। এদের একজন লিমা হিজড়া বলেন, আমরা ১০ জন হিজড়া দুটি ঘরে বসবাস করতাম। আগুনের সময় আমাদের কয়েকজন ঘরেই ছিল, বাকিরা বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে আমরা আসি। এসে দেখি আমাদের ঘরসহ সবকিছু পুড়ে গেছে। আমরা ভিক্ষা করে অনেক কষ্ট করে একটি একটি করে জিনিসপত্র কিনেছিলাম। আজ আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। এখন আমরা কোথায় যাব, কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

লিমার মতো আফরোজাও তার সর্বস্ব হারিয়েছেন এ আগুনে। তিনি বলেন, আগুনের সময় ঘরের ভেতরে ছিলাম। প্রথম একটি দোকানে আগুন লাগে। দৌড়ে ঘর থেকে বের হই। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। ভেতর থেকে কিছুই আনতে পারিনি। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
কেবল লিমা বা আফরোজা নয়, তাদের মতো প্রায় ২০০ মানুষের সবকিছু আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে কেউ ঘর থেকে কিছু নিয়ে বের হতে পারেননি।

এই আগুনে ঘর ছাড়া হয়েছেন অনেকে। গতকাল ইফতারের সময় দেখা যায়, আগুনে সব কিছু পুড়ে যাওয়ায় ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সেখানকার বস্তিবাসীকে ইফতার করতে হচ্ছে। অশ্রুভেজা চোখে দু’টি পেঁয়াজু দিয়ে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে ইফতার করছেন আব্দুল হালিম নামের এক ব্যক্তি। কান্নাবিজরিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ভেবেছিলাম আজকে কাজ থেকে ফিরে ঘরে বসে ইফতার করব। কিন্তু আগুন আমার সবকিছু ছারখার করে দিয়েছে। সারাদিন রোজা রেখেছি, আগুনের সময় অনেক চেষ্টা করেছি ঘরটিকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু পারিনি। এখন পুরে যাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ইফতার করতে হচ্ছে।

ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে ইফতার সারেন আসাদুল ইসলামও। গোডাউন বস্তিতে লাগা আগুনে তারও থাকার ঘরটি পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই ঘরে ইফতার করি। কিন্তু আজকে যে পোড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ইফতার করতে হবে, সেটি কখনো ভাবিনি। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ঘরে থাকা টাকা-পয়সা, মালামাল সবকিছু পুড়ে আগুনে ছাই হয়ে গেছে।
আরও দেখা যায়, শুধু আব্দুল হালিম কিংবা আসাদুল ইসলাম নন, বস্তির এক কোণে দাঁড়িয়ে এভাবে ইফতার করছেন অনেকেই। সাজানো গোছানো সংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেখে অনেকেরই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।