ফরিদপুরে মধুখালীর এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক নৃশংসভাবে দুইজন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার জঘন্যতম ঘটনায় বিভিন্ন ইসলামী দলের মাঝে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের প্রমাণ ছাড়াই খেটে খাওয়া দিনমজুর নিরপরাধ ২ সহোদর হত্যা পুরো দেশবাসির বিবেক নাড়া দিলেও সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক সৌহার্দপূর্ণ অবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে এ ধরণের পৈচাশিক ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্র রয়েছে কী না তা’ খতিয়ে দেখতে হবে এবং দোষী উগ্র হিন্দুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : ফরিদপুরে মধুখালীতে মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে সহোদর দুই ভাইকে তুলে নিয়ে প্রচন্ড নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া সম্পূর্ণ সন্দেহবশত বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হাত পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা অতীতের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। দেশে থানা-পুলিশ, আইন, প্রশাসন থাকা সত্ত্বেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেন দুইজন খেটে-খাওয়া মুসলিম শ্রমিককে গণপিটুনি দিয়ে নিশংসভাবে হত্যা করেছে তার রহস্য উদঘাটন করতেই হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর নতুন কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী অবিলম্বে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারিকে দায়ি নিতে হবে। বাংলাদেশ মুসলি লীগ : মধুখালীতে দুই শ্রমিক সহোদরকে অমানুষিক নির্যাতন পূর্বক পিটিয়ে হত্যা এবং একাধিক ব্যক্তিকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার ও মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের। নেতৃদ্বয় বলেন, ধর্মীয় উত্তেজনা ও উন্মাদনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য অতি রহস্যজনক এই ঘটনার সাথে বিশেষ কোন মহলের সম্পৃক্ততা ছিল কিনা তা প্রশাসনকে গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল করার উদ্দেশ্যে বিশেষ কোন মহলের দূরভিসন্ধি দেশের শান্তিকামী জনগণ যে কোন মূল্যে রুখে দেবে। নেতৃদ্বয় মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনা ও নিরীহ শ্রমিকদের হতাহত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ:
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ মধুখালিতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার পর সন্দেহবশত দুই আপন সহোদরকে নির্মম ভাবে হত্যা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, দেশের কোথাও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ বা ভাংচুর ইত্যাদির সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা। শান্তির ধর্ম ইসলামে এ সব কর্মকাণ্ডের কোন স্থানও নেই, এই বাস্তবতার পরেও কেন বারংবার এ ঘটনাগুলো ঘটছে? কারা এ সবের নেপথ্যে কাজ করছে? এ রহস্য দ্রুত উদঘাটিত না হলে দেশের অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। চট্টগ্রামে কিছু দিন পূর্বে উগ্র হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মূলত পরিকল্পিত ভাবে একের পর এক এ রকম অঘটন ঘটিয়ে এক দিকে উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার দুঃসাহস দেখানো হচ্ছে,আরেক দিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ভূলন্ঠিত করা হচ্ছে।

তারা আরো বলেন,নিজেরা নিজেরা এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে মুসলামনদের উপর দায় চাপানোর মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সরকার ও প্রশাসনেরই দায়িত্ব। এ দায়িত্বে অবহেলা করার ফলে পরিস্থিতি অন্য দিকে গেলে তার দায়ভারও সরকারকে বহন করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন,নিরীহ মুসলমানদরকে পিটিয়ে হত্যা ও আহত করার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে অশান্ত করে এ দেশে কখনোই ইনশাআল্লাহ হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। যৌথ বিবৃতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়া উদ্দীন,সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী,মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার,মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব,মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া এ সব কথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেছেন, ফরিদপুরের পঞ্চপল্লীতে উগ্র হিন্দুদের আচরণ সকল অসভ্য ও বর্বরতাকেও হার মানায়। প্রতীমায় আগুন দেয়া নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় কাজ। কিন্তু এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার জন্যেই উগ্র হিন্দুরা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নির্মম এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।

নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের পর সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক বলে উল্লেখ করে মাওলানা ইমতিয়াজ আলম আরও বলেন, পঞ্চপল্লীর উগ্র ও সন্ত্রাসী হিন্দু কর্তৃক প্রায় ৬ ঘন্টারও বেশি সময় পুলিশ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে রাখার পরও সরকার কেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি এ প্রশ্ন পুরো দেশবাসির। সরকারের চরম ব্যর্থতা পঞ্চপল্লীতে স্পষ্ট। খেটে খাওয়া দিনমজুর নিরপরাধ ২ সহোদর হত্যা পুরো দেশবাসির বিবেক নাড়া দিলেও সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে এ হত্যাকান্ডের তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনারও আহ্বান জানান। গতকাল পুরানা পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোট : ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনায় নিরীহ শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ , দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্য জোট। ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন ও মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব বলেন, শুধু সন্দেহের বশে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর বর্বরতম হামলা চালানোর এ ঘটনা সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল। নেতৃবৃন্দ বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক সৌহার্দপূর্ণ অবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ । এ দেশ নানা জাতি ধর্ম বর্ণ মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আবাসভূমি। গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নৃশংসভাবে দুজন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার ঘটনা দেশবাসী মেনে নেবে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, এ নৃশংস হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। সমাজে এ নৃশংসতম ঘটনার নেপথ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ-অরাজকতা সৃষ্টির কোন পাঁয়তারা আছে কি-না তা তদন্ত করার দাবিসহ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বৈচিত্র থাকলেও আবহমানকাল থেকেই নিজেদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান আছে। কিন্ত ফরিদপুর জেলাধীন মধুখালীর এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক নৃশংসভাবে দুইজন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার জঘন্যতম ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তারা বলেন, এই ঘটনা স্পষ্টতর সাম্প্রদায়িক উস্কানির শামিল। নেতৃদ্বয় আরো বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় ব্যথিত ও হতবাক হয়েছি। যারা এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।