হাসপাতালে বাড়ছে রোগী, ঝুঁকিতে শিশু-বৃদ্ধরা, বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ

তীব্র গরমে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম

তীব্র তাপপ্রবাহে দেশ। জনজীবনে নেমেছে ত্রাহি অবস্থা। এতোদিন টানা তাপপ্রবাহ এর আগে কখনো দেখেনি দেশ। চলতি বছর দেশে গত ৭৫ বছরের তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভেঙেছে। চলতি এপ্রিলে টানা ২৪ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। তারা অতি দাবদাহের কারণে মাঠেঘাটে কাজ করতে পারছেন না। বাইরে বেরুলে মনে হচ্ছে তাপে মুখ ও শরীর পুড়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সর্দি-জ্বর এবং পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেকে। তীব্র গরমের মধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের সময় অসুস্থতা থেকে বাঁচতে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। এই সময়ে অস্বস্তিতে ভোগার পাশাপাশি ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, বমির মতো অসুস্থতা লেগেই আছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি বাড়ছে আরও কিছু অসুখের। অতিরিক্ত গরমের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির লক্ষণগুলো সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, অস্বস্তি বোধ করা, ডিহাইড্রেশন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, নিদ্রাহীন, শরীর ব্যথা, পেশি ব্যথা, খাবারের প্রতি অনীহা, ত্বকের ক্ষত, কিডনি, ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, হার্টের সমস্যা, হিট স্ট্রোক ও হিট ক্র্যাম্প। যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন- শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, রিকশাচালক, কৃষক, নির্মাণশ্রমিক এবং অতিরিক্ত স্থূল ব্যক্তি। বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের মতো একাধিক জটিলতা রয়েছে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, গরমে কিডনী ও ডায়াবেটিসজনিত রোগ বাড়ছে। বিশেষ করে এই সময়ে খনিজ পদার্থের (বেশির ভাগ ক্যালসিয়াম) জমাট বেঁধে শক্ত হওয়ার কারণে কিডনীতে পাথর রোগ দেখা দেয়। উচ্চ তাপমাত্রায় ঘনীভূত প্রস্রাব এবং মূত্রনালীর প্রদাহের মধ্য দিয়ে রোগটি বিকশিত হয়। এই সময়ে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
এদিকে তাপপ্রবাহ বাড়ায় ইতোমধ্যে ৩ বার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। যা আজ থেকে শুরু হওয়া চলতি সপ্তাহেও থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া গরমের তীব্রতা বাড়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবি স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। কিছু নির্দেশিকা দিয়ে জনগণকে তা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণের জন্য ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করতে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গরমের মধ্যে কিছুদিন থেকে রোগী বেড়েছে জানিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সর্দি, জ্বর, কাশি শ্বাসকষ্ট আর খিঁচুনি নিয়ে এসব শিশুরা হাসপাতালে আসছে। অতিরিক্ত গরমে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিস ও কিডনী রোগীদের প্রবণতাও বাড়ছে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমে শিশুরা প্রচুর ঘামছে, তাতে তৈরি হচ্ছে পানিশূন্যতা। এ সময় শিশুদের বাইরে বের না করলেই ভালো। শিশুদের খাবারের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। গরম খাবার দিতে হবে, বাইরের খাবার-পানি খাওয়া যবে না। এছাড়া গ্রীষ্মের এই অসহনীয় গরম থেকে স্বস্তি পেতে প্রাপ্তবয়স্করা একটু পর পর চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দেয়া, তৃষ্ণা পেলে পানি পান করা, বাইরে বের হলে সঙ্গে ছাতা রাখা, চশমা ব্যবহার করা এবং কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেয়া। অপরদিকে শিশুরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। তাই, গরমের সময় তাদেরকে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে- শিশুদের শরীরে যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়, তাই গরমের সময় তরল খাবার গ্রহণের কোনও বিকল্প নেই। তবে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের পানি পান করানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তাদেরকে এসময় ‘আর্টিফিশিয়াল মিল্ক না দিয়ে ব্রেস্ট ফিডিং’ করানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের। একই সঙ্গে গরমের সময়ে শিশুদেরকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি বুকের দুধ পান করানোর কথা বলেছেন।
ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সাত বছর বয়সী সন্তান আহনাফের গত কয়েক দিন ধরে জ্বর। তাপ না কমায় আহনাফকে গত বুধবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে যান তার বাবা। মিজান বলেন, জ্বরের সঙ্গে তার ছেলের প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, ক্লান্তিও আছে। কিছু খেতে পারছে না। এমন জ্বর আগে হয়নি।
গরমের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি’র কলেরা হাসপাতালে। যাত্রাবাড়ীর মিরহাজীরবাগের দেড় বছর বয়সী সাজ্জাদ হোসেনকে এ হাসপাতালেই নিয়ে গেছেন তার মা-বাবা।
সাজ্জাদের মা নাসিমা সুলতানা বলেন, বুধবার বিকাল থেকে পাতলা পায়খানা। রাতে একটু কমছিল, সকালে আবার পায়খানা বাইড়া গেছে। এজন্য নিয়া আসছি। আমি বাচ্চার খুব ভালো করে যত্ন নিই। গরমের কারণে ডায়রিয়া হইছে মনে হয়।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের তিন বছর বয়সী শিশু রিফাতও বুধবার থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত। তাকেও কলেরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রিফাতের বাবা মো. কাইয়ুম বলেন, বাড়িতেই স্যালাইন খাওয়াচ্ছিলাম। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় এখানে নিয়ে আসছি। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো, ছুটি দিয়েছে। আইসিডিডিআর,বি’র হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাপপ্রবাহের মতোই যা প্রতিদিন বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, আইসিডিডিআরবিতে রোগী বাড়ছে প্রতিদিন। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খাবার আগে, টয়লেটে যাওয়ার পরে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যত্ন নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকায় যেহেতু পানির নির্ভরযোগ্য উৎস নেই, সে কারণে খাবার পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে প্রথম দিনই হাসপাতালে আসার প্রয়োজন পড়ে না। সেজন্য বাসায় সব সময় খাবার স্যালাইন রাখতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
আইসিডিডিআরবি বলছে, তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণশ্রমিকদের মত শ্রমজীবী, স্থুলকায় ব্যক্তি এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইসিডিডিআরবি। এর মধ্যে রয়েছে- বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা ও রোদ এড়িয়ে চলা। বাইরে বের হলে যতটা সম্ভব ছাতা, টুপি বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা, বিশেষ করে সুতির তৈরি হালকা রঙের পোশাক পরা, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা, সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা এবং বাসি, খোলামেলা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা। একই সঙ্গে দিনের বেলা একটানা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা, একাধিকবার গোসল করা বা সম্ভব হলে পানি ছিটিয়ে দেয়া। এছাড়া ক্রমাগত প্রস্রাবের রংয়ের দিকে নজর রাখা, তা যদি হলুদ বা গাঢ় হয়, তাহলে পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া। খেয়াল রাখতে হবে ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা বাষ্প না হয়। একই সঙ্গে অসুস্থবোধ করলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামশ নিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা.সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, বছরের উষ্ণতম মাস এপ্রিলে শিশুরা সাধারণত ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের চর্মরোগ, ভাইরাস জ্বর,সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসময় হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভীড় থাকে। এখন হাসপাতালে এক হাজার থেকে ১২শ’ রোগী আসে। আউটডোরে রোগীর চাপ অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী। প্রচুর চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীও আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, শিশুরা এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ, গরমের সময় ভাইরাসগুলো বেশি জন্মায়। এসময় খাবারে অল্পতেই পচন ধরে। সেই খাবার যখন কেউ খেয়ে ফেলে, তাহলে তার ডায়রিয়া হয়ে যায়। এছাড়া, চর্মরোগ ছোয়াঁচে হওয়ায় ছড়ায় বেশি। গরমের জন্য বাচ্চাদের বাইরে বড়দেরও এটি হচ্ছে। তিনি জানান, গরমে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, প্যারাসাইটজনিত রোগ বাড়ে। কারণ তাপমাত্রার সাথে এগুলোর সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক আছে। ভাইরাল ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার বাইরেও বাংলাদেশে এইসময় চিকেন পক্স বা জলবসন্ত, রুবেলা, মাম্পস, স্ক্যাবিস বা খোঁসপাচড়া ইত্যাদি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। স্ক্যাবিস খুব বেশি হয় এসময়। কিন্তু এর মূল কারণ, আমাদের দেশে ফাঙ্গাল ক্রিমের বেশিরভাগই তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অধিকাংশ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ। এছাড়া কিডনী রোগী বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে ঘনীভূত প্রস্রাব এবং মূত্রনালীর প্রদাহের কারণে রোগটি বাড়ে। তাই এই সময়ে বেশি বেশি পানি পান করা ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
সংক্রমণজনিত ছোঁয়াচে রোগ ছাড়াও শরীর থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘাম বেরিয়ে যাওয়ায় তীব্র গরমে শিশুরা হিটস্ট্রোকেও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া, গরমে অনেক শিশুর ঘামাচিও দেখা দেয়। শিশু ও নবজাতকরা যাতে এই ধরনের রোগ-বালাইতে আক্রান্ত না হয়, তাই বাবা-মায়েদেরকে কিছু বিষয়ে এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর আহমেদ।
গরমে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, গরম আবহাওয়ায় শরীরের জলবিয়োজন একটি গুরুতর সমস্যা। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত এ সময়ে অধিক পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করা এবং ঘনঘন জলপানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো নিয়ে তরুণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মালিহা খান মজলিশ বলেন, প্রচণ্ড গরমে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, শরীর থেকে পানি, তরল পদার্থ ও লবণও বেরিয়ে যায়, তখন শরীরে রক্তের চাপ কমে যায়। একই সঙ্গে নাড়ির গতি বেড়ে যায়। শরীর অবসন্ন লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। এ কারণে বমি-বমি ভাব লাগে ও বমিও হতে পারে। অনেকে চোখে আবছা দেখে। মাথা ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ অসংলগ্ন কথা-বার্তাও বলে। এগুলো হচ্ছে হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ। তিনি বলেন, হিট স্ট্রোক হলে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। জ্ঞান হারালে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রতিরোধে পরামর্শ হিসেবে ডা. মালিহা খান মজলিশ বলেন, এই গরমের মধ্যে যারা বাইরে বের হবেন, তারা যদি সঙ্গে একটু খাবার পানি রাখেন এবং যাদের রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা আছে, তারা যদি ওরস্যালাইন নিয়ে বের হন তাহলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে গরমে পানি ও ওরস্যালাইনের পাশাপাশি তরলজাতীয় খাবারের পরামর্শ দিয়েছিন তিনি।
প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকের পাশাপাশি মানুষের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সরাসরি বাইরের খাবার, খোলা খাবার খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো বাইরের খাবার যেন কেউ না খায়। খাবার ভেজালমুক্ত হতে হবে। বাইরের খাবার তো ওপেন থাকে। মাছি পড়ে। ধুলাবালি পড়ে। ওগুলোই মানুষ খেতে চায়। একই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণার্ত হলে অনেকে বাইরের শরবত খেতে চান। গুড়ের শরবত, আখের রস ইত্যাদি। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এটা ডায়রিয়া ও ডায়রিয়াজনিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। জন্ডিস, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। এমনকি ঘরের খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, গরমে নিজের ঘরে খাবার অনেকক্ষণ রাখলে কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। খাবার যেন টাটকা হয়, হালকা হয়। এছাড়া গরুর গোশত, খাসির গোশতের মতো চর্বিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। শাকসবজি, ফল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ঘরের তৈরি খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এটা খুব জরুরি। চা-কফি কম খেতে হবে।
ঠান্ডা পানি খাওয়ায় একেবারেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, গরমের ভেতর তৃষ্ণা নিবারণে ঠান্ডা পানি খাওয়া একেবারেই উচিত না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাদের গলায় শ্বাসনালির উপরের অংশে কিছু সুবিধাবাদী জীবাণু বাস করে। সুবিধাজনক অবস্থা পেলেই এরা আক্রমণ করে। যখন চারপাশে গরম তখন হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি গলায় গেলে গলার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। এই জীবাণুগুলো তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সখিপুরে চেতনানাশক স্প্রে করে লুট

সখিপুরে চেতনানাশক স্প্রে করে লুট

টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

রেনআই রিফ নিয়ে উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে চীনের তাগিদ

রেনআই রিফ নিয়ে উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে চীনের তাগিদ

বজ্রপাতের বিকট শব্দে মাদরাসার ১৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ

বজ্রপাতের বিকট শব্দে মাদরাসার ১৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ

জার্মানির স্কুলগুলোতে সহিংসতা বাড়ছে

জার্মানির স্কুলগুলোতে সহিংসতা বাড়ছে

ডোপ টেস্ট দিয়ে ভর্তি হতে হবে চবিতে

ডোপ টেস্ট দিয়ে ভর্তি হতে হবে চবিতে

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি শর্ত সম্পর্কে যা জানা গেল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি শর্ত সম্পর্কে যা জানা গেল

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ আইওএম মহাপরিচালকের

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ আইওএম মহাপরিচালকের

আগামী ৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়কের একটি লেন

আগামী ৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়কের একটি লেন

অসময় ভাঙনের কবলে দৌলতদিয়া ৬নং ফেরি ঘাট, কোন ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ

অসময় ভাঙনের কবলে দৌলতদিয়া ৬নং ফেরি ঘাট, কোন ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ

বুধবার ঝিনাইদহের দুটি উপজেলায় নির্বাচন ভোটের মাঠে আ’লীগেরই ১০ প্রার্থী

বুধবার ঝিনাইদহের দুটি উপজেলায় নির্বাচন ভোটের মাঠে আ’লীগেরই ১০ প্রার্থী

সি-ম্যাখোঁ-ফন ডার লেইন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

সি-ম্যাখোঁ-ফন ডার লেইন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

আবারও বিশ্বের দীর্ঘতম রুটি বানালেন ফরাসি বেকাররা !

আবারও বিশ্বের দীর্ঘতম রুটি বানালেন ফরাসি বেকাররা !

চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ডেকে নিয়ে মারধর, হাসপাতালে ভর্তি

চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ডেকে নিয়ে মারধর, হাসপাতালে ভর্তি

চুরির অভিযোগে রাশিয়ায় গ্রেপ্তার মার্কিন সেনা সার্জেন্ট

চুরির অভিযোগে রাশিয়ায় গ্রেপ্তার মার্কিন সেনা সার্জেন্ট

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজ ঢাকায় আসছেন

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজ ঢাকায় আসছেন

যুদ্ধবিরতির খবরে উল্লাসে ফেটে পড়ল গাজা

যুদ্ধবিরতির খবরে উল্লাসে ফেটে পড়ল গাজা

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, ইসরায়েলের 'প্রত্যাখ্যান'

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, ইসরায়েলের 'প্রত্যাখ্যান'

মৃত্যুর আগে কী করছিলেন প্লেটো, বলছে ছাইচাপা প্যাপিরাস

মৃত্যুর আগে কী করছিলেন প্লেটো, বলছে ছাইচাপা প্যাপিরাস

রাফায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত ১২, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত

রাফায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত ১২, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত