তেঁতুলিয়া সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ
০৯ মে ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৩ এএম
সীমান্তে বিএসএফয়ের গুলিতে বাংলাদেশীদের হত্যা থামছেই না। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বাংলাদেশে আসার দিন তেঁতুলিয়া উপজেলা সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে দুই বাংলাদেশি যুবককে হত্যা করেছে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার খয়খাটপাড়া এলাকার সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ভারতীয় থানা পুলিশ লাশ দুটি নিয়ে গেছে। নিহতরা হলো-তেঁতুলিয়া উপজেলার মাগুড়া গ্রামের জুনু মিয়ার ছেলে জলিল (২৪) ও তিরনইহাট ব্রমতোল গ্রামের কেতাব আলীর ছেলে ইয়াসীন আলী (২৩)। এ হত্যাকান্ডের পর তেঁতুলিয়া উপজেলায় স্থানীয় লোজকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে আসার আগের দিন তেঁতুলিয়া উপজেলা সীমান্তে দুই বাংলাদেশি যুবককে হত্যা উপহার দিল বিএসএফ। বাংলাদেশীদের হত্যা বিএসএফয়ের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজিবি বা সরকারের পক্ষ থেকে জোর প্রতিবাদ না করায় বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে মানুষ খুন করছে।
অন্যদিকে দুই দিনের সফরে ভারতের পররাষ্ট্র-সচিব ঢাকায় আসার আগে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে বিএসএফয়ের গুলিতে দুই বাংলাদেশি হত্যার প্রসঙ্গটি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান মন্ত্রী। হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে নানা বিষয় আছে। স্বাভাবিকভাবে নানা বিষয় আলোচনা হবে। তিনি আসার পর আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমরা অবশ্যই সীমান্ত হত্যার বিপক্ষে। যে ঘটনা ঘটেছে সেটি দুঃখজনক। দুই দেশে এটি যাতে না হয় সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং সীমান্তে যারা প্রহরী, দুই পক্ষে যারা আছেন তারা যেন কোনো ক্ষেত্রে এমন বলপ্রয়োগ না করে। প্রাণহানি ঘটে সেটির জন্য আমরা রেগুলার কনসালটেশনের মধ্যে আছি। ভারতের পররাষ্ট্র-সচিব আসলে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি সুজয় কুমার বলেন, বিজিবির মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিহত ওই দুই যুবক গরু চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা সময়ে বিজিবি ও বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে সদিচ্ছার কথাও বলেন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ের আলোচনায়ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত; কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই চোখে পড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশীদের নির্মমভাবে হত্যা ও নির্যাতন করছে। অন্যদিকে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি বিএসএফয়ের সাথে পতাকা বৈঠক বা চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে।
মানবাধিকার কর্মী ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃত্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে যতটা জোরালো প্রতিবাদ জানানোর রেওয়াজ ছিল, এখন সেটা ততটা জোরালো নয়। অনেকে হয়রানির ভয়ে বিএসএফের নির্যাতনের কথা স্বীকার করছেন না। আন্তজাতিক আইনেরও তোয়াক্কা করছে না বিএসএফ। ফলে বাংলাদেশীদের হত্যা বা নির্যাতনে বিএসএফ এখন বেপরোয়া। সীমান্তে চোরাকারবারিদের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সখ্যতা দীর্ঘ দিনের। চোরাকারবারিদের সঙ্গে দুই দেশের কিছু অসাধু সীমান্তরক্ষীদের ঘনিষ্ঠ যোগসাজশ রয়েছে। ফলে নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চোরকারবারিরা। লক্ষ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিহত বাংলাদেশিরা মূলত রাখাল ও গরু চোরাকারবারি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুই রাখালকে লক্ষ্য করে গুলি করে বিএসএফ। কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর খামারভাতি এলাকার ৯১৩ নম্বর মেইন পিলার সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী বাংলাদেশি দুই রাখাল হলেন- উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের খামারভাতি গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক (২৮) ও একই এলাকার বাবর আলীর ছেলে ইন্টু মিয়া। স্থানীয়রা জানান, ওই দিন দুপুরে বাংলাদেশ সীমান্তের জমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এনামুল হক ও ইন্দু মিয়া। এ সময় হঠাৎ করেই বিএসএফের এক সদস্য তাদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ওই বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। দুই যুবক তাৎক্ষণিক সরে গেলে তাদের শরীরে কোনো গুলি লাগেনি। ভুক্তভোগী রাখালদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশি রাখালদের ধাওয়া করেন। এমনকি অনেক সময় আটকে মারধর করেন।
সূত্র জানায়, ২০১৫-২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে আসকের হিসাবে ২৪৫ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৪৬ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ২৪ জন, ২০১৮ সালে ১৪ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন এবং ২০২৩ সালে ৩০ জন। আর সর্বশেষ চলতি বছরে প্রথম সীমান্ত হত্যার শিকার হলেন বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীরই একজন সদস্য। চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিএসএফয়ের গুলিতে ১২ জন বাংলাদেশী খুন হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে
কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়