জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে কাজ করছে সরকার : শেখ হাসিনা
১৬ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে দেশের মানুষ প্রাথমিক যে স্বাস্থ্যসেবা পাবে, সেই সুযোগটা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের জনসংখ্যা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসে। তবে বর্তমানে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে কাজ করছে সরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা জরুরি। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘আইসিপিডি-৩০ গ্লোবাল ডায়ালগ অন ডেমোগ্রাফিক ডাইভারসিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির পিতার নেওয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করে সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে, নতুন জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়। বিশেষ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন কাজ শুরু করি। সেই সময় জাতীয় পুষ্টিনীতি কর্মসূচি নেওয়া হয়। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, নারী শিক্ষা বিস্তার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে ছিল আমাদের আন্তরিক প্রয়াস। এরপর আবার ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা চার মেয়াদে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনে ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি-২০১২ প্রণয়ন করি। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যু হ্রাস, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক কর্মসূচি শুরু করা হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বন্ধ হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার চালু করা হয়। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর আমরা আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনের ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণয়ন করি। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুহার হ্রাস, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু ও কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প আবারও চালু করি। বর্তমানে সারা দেশে সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এগুলোর মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ ৩০টি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার ক্লিনিকে স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্স সেবা দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধীন ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র/পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক হতে মা, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২০০টি কেন্দ্র থেকে সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক প্রসব সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রসূতিসেবা প্রদানের জন্য এসব কেন্দ্রে ৪ জন করে ধাত্রী নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালে জাতিসংঘ সদরদফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমি ৩০ হাজার ধাত্রী নিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২০ হাজার ধাত্রী নিয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি। তিনি আরো বলেন, মাতৃ স্বাস্থ্য সেবায় জরুরি প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হয়েছে। ‘মা টেলিহেলথ সার্ভিস’-এর মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, শপিং মল, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র’ স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে এসব উদ্যোগের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২১ জন; যা ২০০৬ সালে ছিল হাজারে ৮৪ জন। একইভাবে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ২০০৬ সালের ৩৭০ জন থেকে ১৩৬ জনে হ্রাস পেয়েছে।
গতকাল বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার এই দু’দিন ঢাকায় বৈশ্বিক এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ, বুলগেরিয়া ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ সংলাপের আয়োজন করছে ‘ইউএনএফপিএ’। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা এবং বিশ্বের স্থানান্তরিত জনসংখ্যার সুযোগগুলো অন্বেষণ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার লক্ষ্যে এই সংলাপ। চলতি বছর ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিপিডি)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ইউএনএফপিএ’র নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া কানেম, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ড. রোকেয়া সুলতানা, জাপানের পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার হোসাকা ইয়াসুশি এবং বুলগেরিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে
জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা
সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী