সমন্বয়হীনতায় ট্যাক্স লিকেজ বন্ধ করা যাচ্ছে না
২০ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম
কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ডিজিটালাইজেশন হলেও এর সুফল আদায় করা যাচ্ছে না। কাস্টমস, ভ্যাট, ট্যাক্স ও পেমেন্টে ডিজিটালাইজেশন হলেও খাতগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা নেই। যার কারণে ট্যাক্স লিকেজ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ‘বাংলাদেশ কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন: দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হায়ার রিসোর্স মবিলাইজেশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে প্রতিবেদনটির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো রহমাতুল মুনিম, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বক্তব্য রাখেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্সে প্রচুর ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে কিন্তু তা বিক্ষিপ্তভাবে হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর জালের সম্প্রসারণ হচ্ছে না। কর সংগ্রহে তথ্য প্রযুক্তি বড় একটা হাতিয়ার হতে পারে।
প্রতিবছরের দেয়া বাজেট টার্গেটে (লক্ষ্যমাত্রা) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অসহায় হয়ে পড়ে। এ টার্গেটের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে এনবিআরের দিন কাটে বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআরকে যখন প্রতিবার বাজেট টার্গেট দেয়া হয়, তখন আসলে এনবিআর অসহায় হয়ে পড়ে। টার্গেট দেয়া হয় কিন্তু সক্ষমতা বিবেচনা করা হয় না। এনবিআরের দিন কাটে টার্গেট পূরণের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে।
তিনি বলেন, টার্গেটের বোঝা মাথায় থাকার কারণে বুদ্ধিবৃত্তিক আইডিয়া নিয়ে কাজ করার সুযোগ পায় না এনবিআর। এই টার্গেট ঠিক করা হয় আগের বছরের টার্গেটের শতাংশের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে। কতটুকু পূরণ করা গেল সেটি না দেখে, দিনের পর দিন রাজস্বের টার্গেট বাড়ানো হয়।
গত ১৫ বছরে বাজেটের আকার প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। ১৯৭২-৭৩ এ রাজস্বের ১০ শতাংশ আসতো আয়কর থেকে। ২০২২-২৩ সালে আয়কর থেকে এসেছে ৩৪ শতাংশ। ভ্যাট ও আয়করের পরিমাণ বৃদ্ধি বাংলাদেশের উন্নতিরই নির্দেশনা দেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রহমাতুল মুনিম বলেন, অটোমেশন মেশিন একা কিছুই করতে পারবে না। অটোমেশনের পেছনে যে মানুষগুলো বসে আছে, তারা ঠিক হয়নি। প্রতিটি মানুষকে ধরে ধরে শুদ্ধ করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব না। তবে, আয়কর ও ভ্যাট যদি বাড়াতে হয়, তাহলে অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। দারোগা-পুলিশ দিয়ে ধরে ধরে কর আদায় করা সম্ভব না। এখানে অটোমেশন একমাত্র উপায়। এরপর থেকে অডিটও অটোমেশন সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। নথিপত্র ছাড়া আর কোনো অডিট হবে না। অডিট হবে নথিপত্রের বিচারে, মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে নয়।
দেশে মোট ৭ কোটি ৭ লাখ মানুষ কর্মজীবী। যাদের মধ্যে কর দিতে সক্ষম ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। এ বছর ৪১ লাখ মানুষ রিটার্ন জমা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এর আগে ২০১৯-২০ সাল রিটার্ন জমা দিয়েছে ২০ লাখ। এই ৪ বছরে রিটার্ন জমা দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানা যায়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, উন্নত দেশ হতে চাইলে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বেড়েছে। এদের ওপর ভিত্তি করেই বাজার ও শিল্প টিকে আছে। এরা হচ্ছে ভোক্তা সমাজ। বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশের ভোক্তাদের দিয়ে লাভবান হচ্ছে। অথচ দেশীয় উদ্যোক্তারা এই বিশাল ভোক্তাকে কাজে লাগাতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি কর মওকুফের সংস্কৃতিতে থেকে বের হয়ে আসার জন্য দেশীয় ব্যবসায়ী শ্রেণিকে আহ্বান জানান মুনিম।
শিগগিরই করপোরেট ট্যাক্স অনলাইন রিটার্নের আওতাভুক্ত করতে যাচ্ছে এনবিআর। ২০২০ সালের আগস্টে প্রথম স্বয়ংক্রিয় ভ্যাট দেয়ার ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) সিস্টেম চালু করা হয়। তবে এটি যতটা কার্যকরী, ততটা প্রভাব ফেলেনি বলে মনে করে সরকারের সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতা-বিক্রেতারা সাধারণত ইনভয়েসের মাধ্যমে লেনদেন করে না। তাই ইনভয়েসকে জনপ্রিয় করতে ইন্সট্যান্ট ক্যাশব্যাক সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে এনবিআর।
শুল্ক আদায় অটোমেশন করতে এরইমধ্যে ৬টি স্ক্যানার কিনেছে এনবিআর। আরও ৭টি স্ক্যানার কেনার কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। পাশাপাশি টিআরপি আউটিসোর্সিং বিধিমালা ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে করনেট সম্প্রসারণ করার কথাও জানান তিনি।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে না পারলে দেশ বিপজ্জনক ও বাধ্যতামূলকমূলক পরনির্ভরশীলতার দিকে ধাবিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশন করতে এনবিআর নানান উদ্যোগ নিয়েছে, পুরোপুরিভাবে ডিজিটালাইজেশন সম্ভব হলে কন জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ডাটাবেজ সফটওয়্যারের ধারাবাহিকতা রাখা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ইএফডি যন্ত্র বসানোর পরামর্শ দেন মোস্তাফিজুর।
আলোচনায় এনবিআরোর সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, অটোমেশন বাস্তবায়ন করতে যে পরিকল্পনা করা দরকার সেটা নেই। কেন আমরা সফল হলাম না, সেটা যাচাই করে দেখেছি? আর একটি বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক কমিটমেন্টের অভাব। তিনি বলেন, সিভিল সার্জনে লোকবল নিয়ে প্রযুক্তিগত কাজ করানো যাবে না। সেজন্য দরকার নিজস্ব দক্ষ জনবল। এনবিআর ডিজিটালাইজেশন করতে হলে ব্যবসায়ী মহলে সাপোর্ট ও রাজনৈতিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী