ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
বিধিমালা করে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক চালু করছে বাংলাদেশ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২১ মে ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ১২:০৯ এএম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার পদক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি পদক নীতিমালা-২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাধারণত প্রতি দুই বছরে দেশি বা বিদেশি একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একটি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের মূল্যমান এক লাখ মার্কিন ডলার ও আঠার ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। এটির ৫০ বছর পূর্তি আমরা গত বছর উদযাপন করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শান্তি পুরস্কার তিনি প্রবর্তন করতে চান। সেই প্রেক্ষিতে আজকে একটি নীতিমালা আমরা উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রিসভা সেটি আজকে অনুমোদন করেছে। এই নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ও বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত বা বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কয়েকটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পুরস্কার দেওয়া যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা, যুদ্ধ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ ও অবদান রাখা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখা, টেকসই সামাজিক পরিবেশগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন—পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে ৫০ গ্রাম ওজনের ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের একটি পদক এবং এক লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ মূল্যের পুরস্কার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে একটি সনদপত্র দেওয়া হবে। পুরস্কারটি প্রতি দুই বছরে একবার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে প্রস্তাব নেওয়া যাবে। কারা কারা প্রস্তাব করতে পারবে নীতিমালায় সেটারও একটা বর্ণনা দেওয়া আছে। একটি দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান বা সেই দেশের সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। নোবেল বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিও কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন।বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি যত দূতাবাস রয়েছে সেই দূতাবাসের প্রধানরা বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসের প্রধানরাও প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। জাতিসংঘের কোনো সংস্থা প্রধানও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের জন্য দাবি জানাতে পারবেন না। নীতিমালা অনুযায়ী একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জুরিবোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নিরপেক্ষ ও খ্যাতিসম্পন্ন লোকদের দ্বারাই জুরিবোর্ড গঠিত হবে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। ২৩ মে বা কাছাকাছি সময়ে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। অর্থ বিভাগে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেবে। আগামী বছর প্রথমবারের মতোই পুরস্কার দেওয়া হবে।

মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নীতিমালা নিয়ে কাজটি যাতে শুরু করা হয়। এটিকে যাতে পরবর্তীতে আইনে রূপান্তর করা হয়। আইনের মধ্যে একটি তহবিল তৈরি করতে বলা হয়েছে যে তহবিলে, সরকার বা বাইরের লোক যে কেউ সেখানে অনুদান দিতে পারবেন। পরে আমরা তহবিল থেকেই সেই ব্যয়ভারটা নির্বাহ করতে পারব। সেই পর্যন্ত সরকারই এই ব্যয়ভারটা বহন করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রতি দুই বছরে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক্ষেত্রে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। একটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের মূল্যমান এক লাখ মার্কিন ডলার ও আঠার ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক। সাধারণত প্রতি দুই বছরে দেশি বা বিদেশি একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন,অটোরিকশা নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নভাবে পত্রিকায় এসেছে। অটোরিকশাচালকরা নিজেদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এসেছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, অটোরিকশাচালকদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে আইন-বিধিমালা করে নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই বিধিমালায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে হবে যে এই এলাকার বাইরে তারা চালাতে পারবে না—এরমধ্যে তাদের চালাতে হবে। মহাসড়কে কিংবা বিজি হাব কিংবা সড়কে তারা অটোরিকশা চালাতে পারবেন না, যেতে পারবেন না। কোন কোন সড়কে চলতে পারবে, কী গতিতে তারা যেতে পারবে, সেটা তিনি বলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই মহাসড়ক কিংবা বড় সড়কে তারা যেতে পারবেন না, সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিমালা যথাযথভাবে সংশোধন কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।

অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন না। বিষয়টি তার নজরে আনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? তাদের জীবিকার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে তাদের সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আমি জানিনি। আমার সঙ্গে তোমাদের কথা বলা উচিত ছিল। তিনি এভাবেই বলেছেন। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক হয়নি। তিনি বলেছেন, একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করা যেতে পারে। এমনকি তাদের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অটোরিকশাচালকদের জীবিকার ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ শিগগিরই নেওয়া হবে কিনা; জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার নির্দেশনা সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেখানে রিকশা বা অটোরিকশার মেশিন তৈরি হয়, সেখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে রিকশা বা অটোরিকশা ম্যানুয়ালি চলে। এজন্য মেশিনচালিত রিকশার নকশা অ্যাডজাস্ট করছে না। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন যে, আমাদের ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য। একই সঙ্গে মেশিনের সঙ্গে উপযুক্ত একটি কাঠামো সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে একটি মডেল বা কাঠামো তৈরি করে দ্রুত নিয়ে আসেন। যেটা অ্যাক্সিডেন্ট প্রবণতাকে কমাতে ভূমিকা রাখবে সেই নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা