দুর্যোগ বাড়লেও বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের কম
২৩ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ১% কম। এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের তুলনায় বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বাড়লেও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় প্রকৃত বরাদ্দ ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে। জলবায়ু সহনীয়তা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতে বাজেটে জিডিপির প্রায় ৫% ব্যায় করা প্রয়োজন হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়লেও জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬%, গত বছরের তুলনায় কমেছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত ‘সবুজ অর্থনীতি ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু, পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেটে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বেড়ে দুই হাজার ১৩০ কোটি টাকা বা ৫২ কোটি টাকা বাড়লেও বিদ্যমান মুদ্রাস্ফীতির বিবেচনায় প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে। দুর্যোগ বাড়লেও কৃষি, স্বাস্থ্য এবং পানি সম্পদ খাতে জলবায়ু সম্পর্কিত বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক বা তার সামান্য বেশি। তীব্র দাবদাহ, শৈত্য প্রবাহ, মওসুমের বাইরে বৃষ্টিপাত সহ বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং শিলাবৃষ্টির মতো দুর্যোগ বাড়লেও খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা এবং গবেষণা ও জ্ঞান ব্যবাবস্থাপনায় জলবায়ু সম্পর্কিত অর্থায়ন ক্রমেই কমছে। অভিযোজন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং গবেষণায় জলবায়ু সম্পর্কিত অর্থায়ন ক্রমেই কমছে। প্যারিস চুক্তিতে সাক্ষরকারী দেশ হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ এনডিসিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪১১৪.২ মেগাওয়াট। প্রতি অর্থ বছরে গড়ে কম্পক্ষে প্রায় ৩ হাজার ৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে নবায়নযোগ্য শক্তি বাবদ মাত্র ১০০ কোটি টাকা বা মাত্র ৩.২% তহবিল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতি অর্থ বছরে বাংলাদেশে সার্বিক জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি ২৩.৪ বিলিয়ন ডলার। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হারানো কর্মদিবসের আর্থিক মূল্য বিবেচনায় সার্বিক জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির তুলনায় আন্তর্জাতিক উৎস হতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। এ প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিশ্রুতি প্রতি বছর ১১.৪ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় €২৫ বিলিয়ন (প্রায় ২৯.৩ বিলিয়ন ডলার) প্রদানের যে উদ্যোগ নিয়েছে জলবায়ু ঋণ না নিয়ে এ তহবিল থেকে অনুদান পেতে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে দ্বিপাক্ষিকভাবে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। প্যারিস চুক্তির আওতায় সরকার জলবায়ু সহনীয়তার জন্য কার্বন নি:সরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর কার্বন কর আরোপ করা উচিত, তাহলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি অভিযোজনেও বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে, পাশাপাশি কার্বন নি:সরণ কমে বায়ু দূষণের পরিমাণ কমে যাবে। কার্বন কর, দূষণ করারোপের মাধ্যম বছরে সর্বোচ্চ ৩.৪ বিলিয়ন ডলার সবুজ অর্থায়ন সম্ভব বলেও জানান জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন খান।
ক্রমবর্ধমান পানি, মাটি দূষণ সহ শ্রমিকের দেহের ভেতরে মাইক্রোপ্লাষ্টিকের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তৈরি পোষাকের ভোক্তার উপর পরিবেশ সংরক্ষণ ফি/করারোপের সুপারিশ জানিয়েছে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ। বাংলাদেশে বর্তমানে জলবায়ু খাতে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান এম জাকির হোসেন খান, প্রয়োজনে অগ্রাধিকার তালিকা করে তালিকার নিচের দিকের খাতগুলোর অর্থ রিডিরেক্ট করে অভিযোজন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, ফার্মার্স ব্যাংককে ইঈঈঞঋ প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ঋন দিয়েছিলো যা আজও শোধ হয়নি, ইঈঈঞঋ এর অবকাঠামো ও সুনাম জোরদারকরণে ওই অর্থ ফিরিয়ে আনানোর দাবি জানান তিনি।
তাপপ্রবাহ কমাতে সমন্বিত কুলিং এবং গ্রিন জোন প্রতিষ্ঠা, কার্বন- নির্গমন ভিত্তিক কর ও দূষণ কর প্রবর্তন, জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব করা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আরো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা উন্নত করা ও ভর্তুকিভিত্তিক দুর্যোগ বীমা চালু, অঞ্চলভেদে যথাযথ শুধুমাত্র সবুজ অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি দেওয়া, শিল্প ও পরিবহন খাতে নবায়নযোগ্য শক্তির মসৃণ রূপান্তর, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য গভীর বনে টিলা এবং অধিক মিষ্টি পানির কূপ খনন বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেয়ার আহবান জানানো হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। এছাড়াও টেকসই সমৃদ্ধি কৌশল ও পরিকল্পনা নিশ্চিতে জল, বন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার প্রদান করে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকৃতি ভিত্তিক টেকসই সমৃদ্ধি কৌশল প্রনয়ন; নীতি ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার; টেকসই সমৃদ্ধি অর্থায়ন কৌশল প্রণয়ন; এবং সবুজ বাজেট বাস্তবায়নে জিডিপি’র কম্পক্ষে ৫% ব্যায় করা; দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের পাশাপাশি উদ্ভাবনী অর্থায়ন (যেমন, কার্বন ও দূষন করারোপ, অনুদান, যাকাত, ব্যাক্তিগত অনুদান, সবুজ বন্ড ইত্যাদি), সবুজ করনীতি প্রণয়ন, নি¤œ আয়ের মানুষ এবং সবুজ সেবা ও পণ্যকে সব ধরণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করারোপ হতে অব্যাহতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, কর ফাঁকি রোধে সব ধরণের নেতিবাচক প্রণোদনা এবং পরিবেশ-বান্ধব অবকাঠামো পরিবহন ব্যবস্থায় আইনী বাধ্যতার সুপারিশ করে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম