যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদন

মানব পাচার নির্মূলের ন্যূনতম মান পুরোপুরি অর্জন করেনি বাংলাদেশ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম

মানব পাচার নির্মূলের ন্যূনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে তা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মানব পাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার বিগত বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আগের মতো দ্বিতীয় ধাপেই (টিয়ার-২) রয়ে গেছে। এই ধাপে বাংলাদেশের প্রতিবেশীদের মধ্যে রয়েছে ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা।
প্রতিবেদনে দেশগুলোর মানব পাচার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে কয়েকটি ধাপে। যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনের (টিভিপিএ) বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। মানব পাচার বন্ধে যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদ- অর্জন করতে পেরেছে, সেগুলোকে প্রথম ধাপে (টিয়ার-১) রাখা হয়েছে। যেসব দেশ ন্যূনতম মানদ- অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে দ্বিতীয় ধাপে (টিয়ার-২)। দ্বিতীয় ধাপে আবার নজরদারির একটি তালিকা (টিয়ার-২ ওয়াচ লিস্ট) রাখা হয়েছে। যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদ- অর্জন করতে পারেনি, আবার পাচার বন্ধে উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে না, সেগুলোকে তৃতীয় ধাপে (টিয়ার-৩) রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আছে বিশেষ ক্ষেত্রের (স্পেশাল কেস) একটি তালিকা।
মার্কিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত, বিচার ও দোষী সাব্যস্তকরণ বাড়ানো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ নির্দেশিকা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে। পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের আগের চেয়ে বেশি শনাক্ত করেছে। নিয়োগকারী এজেন্টদের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহি বাড়াতে সরকার অভিবাসী শ্রমিক নীতি সংশোধন করেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো পাচারের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিতে তহবিল গঠন করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ন্যূনতম মান অর্জন করতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার আইন প্রয়োগের প্রচেষ্টা বাড়ালেও অভ্যন্তরীণ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। এর মধ্যে রয়েছে যৌন শোষণের উদ্দেশ্যে পাচার, জোরপূর্বক শিশুশ্রম কিংবা দাপ্তরিক জটিলতা। সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শোষণ-সংশ্লিষ্ট পাচার মামলাগুলোর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তদন্ত ও বিচার করেনি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, সরকার নতুন কোনো পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেনি।
মার্কিন প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভুক্তভোগী সুরক্ষার প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বা কথা বলার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায়ই ভুক্তভোগীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব দেখা যায়। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ সেবার অভাব থাকার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে পুরুষ ভুক্তভোগীদের জন্য গুটিকয় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগের ফি নির্ধারণ অব্যাহত রাখায় অনেক অভিবাসী শ্রমিক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এই বিষয় তাঁদের পাচারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আদালত বেশির ভাগ পাচারকারীর কারাদ-ের পরিবর্তে জরিমানা করেন। এটি প্রতিরোধের বিষয়টিকে দুর্বল করেছে। দুর্বল করেছে সরকারের সামগ্রিক পাচারবিরোধী প্রচেষ্টাকে। আর এটি সম্ভবত ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ তৈরি করেছে। মানব পাচার পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে মার্কিন প্রতিবেদনে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মানব পাচার অপরাধের তদন্ত ও বিচারের প্রচেষ্টা বাড়ানো। দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মেয়াদে কারাদ-ের বিষয়টি রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাচারের শিকার ব্যক্তি শনাক্তের প্রচেষ্টা বাড়ানো।পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনালের জনবলের সক্ষমতা শক্তিশালী করা। পাচারের শিকার সবার জন্য সুরক্ষাসেবার প্রাপ্যতা ও গুণমান বাড়ানো। নিয়মিতভাবে আইনের প্রয়োগ। অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ কোম্পানিসহ দালালদের নজরে রাখা। রোহিঙ্গা পাচারের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের তদন্ত ও বিচার বাড়ানো। শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে নজরদারি বাড়ানো। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণ বাড়ানো। দেশ ছাড়ার আগে অভিবাসী কর্মীদের প্রশিক্ষণের মান উন্নত করা।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ তথ্য উপদেষ্টার
করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি
শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলামের ১৬৩ ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ
যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৭ প্রস্তাব অনুমোদন
মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্যে তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের
আরও
X

আরও পড়ুন

ঢাকাস্থ ফেনী ফোরাম এর উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল

ঢাকাস্থ ফেনী ফোরাম এর উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল

মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য অনন্য সেরা মাস মাহে রমজান

মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য অনন্য সেরা মাস মাহে রমজান

মধ্য রাতে নিরাপত্তা কর্মীদের মাঝে সাহরি বিতরণ করলো ইবি ছাত্রদল

মধ্য রাতে নিরাপত্তা কর্মীদের মাঝে সাহরি বিতরণ করলো ইবি ছাত্রদল

স্পেনের প্রথম ফুটবলার হিসেবে রোজা রেখে খেলবেন ইয়ামাল

স্পেনের প্রথম ফুটবলার হিসেবে রোজা রেখে খেলবেন ইয়ামাল

হুতিদের আক্রমণ ইরানের হামলা হিসেবে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

হুতিদের আক্রমণ ইরানের হামলা হিসেবে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার কিশোরকে ছিনিয়ে জনতার হামলা, আহত ছয় পুলিশ

খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার কিশোরকে ছিনিয়ে জনতার হামলা, আহত ছয় পুলিশ

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় হামাস সরকারের শীর্ষ নেতা নিহত

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় হামাস সরকারের শীর্ষ নেতা নিহত

গণঅধিকার পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিটি গঠন

গণঅধিকার পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিটি গঠন

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ তথ্য উপদেষ্টার

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ তথ্য উপদেষ্টার

করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি

করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি

শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলামের ১৬৩ ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ

শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলামের ১৬৩ ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ

যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৭ প্রস্তাব অনুমোদন

যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৭ প্রস্তাব অনুমোদন

আদালত চলতো হাসিনার নির্দেশে, মামলার রায় আসতো গণভবন থেকে: নুর

আদালত চলতো হাসিনার নির্দেশে, মামলার রায় আসতো গণভবন থেকে: নুর

সার্টিফিকেট ইস্যু না করায় রিট জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’

সার্টিফিকেট ইস্যু না করায় রিট জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’

দোহারের কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা: আসামি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুদণ্ড

দোহারের কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা: আসামি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুদণ্ড

কক্সবাজার শহরে উচ্ছেদের মুখে আতঙ্কগ্রস্থ হাজারো নারী-পুরুষ ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষায় মানববন্ধন

কক্সবাজার শহরে উচ্ছেদের মুখে আতঙ্কগ্রস্থ হাজারো নারী-পুরুষ ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষায় মানববন্ধন

কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্যে তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্যে তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের

বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪১৩

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪১৩