আনারের নাকে ক্লোরোফর্ম দেন ফয়সাল উলঙ্গ করে চেয়ারে বাঁধেন মোস্তাফিজ
২৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
বহুল আলোচিত ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার আসামী মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাজিকে পার্বত্য খাগড়াছড়ি থেকে গতকাল বুধবার গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়।
অপরদিকে আনার হত্যার অপর আসামী গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য ঝিনাইদহের একাধিক পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২ মে কলকাতায় যান মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। তাদের দু’জনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। আনার খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহর বাড়িও একই এলাকায়। আনার হত্যার মিশন শেষে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল দেশে ফেরেন ১৯ মে। সম্প্রতি মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সাজিসহ ১০ আসামীর ব্যাংক হিসাব চেয়ে আদালতে আবেদন করে ডিবি।
ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এডিসি জুনায়েদ আলম জানান, এমপি আনার হত্যার আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে ধরতে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) হারুন অর রশীদ।
খাগড়াছড়ি থেকে দুই আসামিকে গ্রেফতারের পর তাদের হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। রাজধানীর পূর্বাচলে হেলিকপ্টারে নেমে ডিবি প্রধান বলেন, গত মঙ্গলবার খবর পাওয়া যায়, নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন করে খাগড়াছড়ির পাতাল কালীমন্দির এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে লুকিয়ে রয়েছেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। খবর পেয়ে ডিবির একটি টিম আগেই পাহাড়ে গিয়ে অভিযান শুরু করে। পরে গতকাল আমরা গিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাই। তারা পলাশ রায় ও শিমুল রায় নাম ধারণ করেছিলেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে তারা ২৩ দিন ওই কালী মন্দিরে ছিলেন।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, অজ্ঞান করার জন্য সংসদ সদস্য আনারের নাকে ক্লোরোফর্ম দেন ফয়সাল। আর মোস্তাফিজ আনারকে উলঙ্গ করে চেয়ারে বেঁধে রাখেন। গত ১৯ মে রাতে মাষ্টার মাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। এরপর শাহীন তাদের মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেন। এরপর তারা দুর্গম পাহাড়ের ওই কালী মন্দিরে চলে যান। আসামিদের স্বীকারোক্তিমতে, এমপি আনার কিলিং মিশনে ছিলেন সাতজন।
আনার হত্যার ঘটনায় ডিবির ওপর কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এ পর্যন্ত কোনো চাপ নেই। যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, শুধু তাদেরই আমরা আইনের আওতায় আনছি। এখন পর্যন্ত এমপি আনার হত্যাকা-ের ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। পরে গ্রেফতার হন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাজি। এছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সিয়াম হোসেন ও জিহাদ হাওলাদার।
ঝিনাইদহের দুই পুকুরে ডুবরির অভিযান:: আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ১১ জন জেলে ও ৩ জন সুইপার নামিয়ে দুইটি পুকুর তন্ন তন্ন করেও তিনটি মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি জেলেরা। ফলে ডিবি পুলিশের এই অভিযান অনেকটাই নিষ্ফল হয়েছে। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ শহরের খোকা চেয়ারম্যানের পেট্রোল পাম্পের পেছনের পুকুরে অভিযান চালানো হয়। ১১ জন জেলে আনা হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুড়গাছা গ্রাম থেকে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঝিনাইদহ পৌরসভার তিনজন সুইপার। এই ১৪ জন মিলে পুকুরে নেমে মোবাইল খোঁজা শুরু করেন। এ সময় পুকুরের পাশে, ভবনের ছাদে ও বিভিন্ন গাছে হাজারো উৎসুক মানুষ এই অভিযান দেখার জন্য ভিড় জমায়। অভিযানের সময় মামলার আসামি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু পুকুরের দক্ষিণ পাশে পিপিলিকা মার্কের উপরে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় বসে ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ জেলাখানা থেকে এসে মোবাইলটি কোথায় ফেলেছেন তা দেখিয়ে দেন।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ হেলিকপ্টারযোগে ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে অবতারণ করেন। সেখান থেকে তিনি সোজা অভিযান চলা পুকুরে চলে যান। তিনি প্রায় ১৫ মিনিট অভিযান স্বচক্ষে দেখেন। এরপর তিনি গনমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পায়রা চত্বরে পৌঁছান।
এদিকে পুকুরে অভিযানের সময় বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জেলে ও সুইপাররা। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ও পানির নিচে ভাঙ্গা কাঁচের জিনিস থাকায় তারা ২৫ মিনিট মতো মোবাইল খুঁজে উপরে ওঠে পড়েন।
এ সময় শৈলেন বিশ^াস ও সরোয়ার হোসেন নামে দুই জেলে জানান, পুকুরের পানি অত্যন্ত বিষাক্ত। নামার পরপরই তাদের শরীর চুলকানো শুরু হয়। এ কারণে পানির মধ্যে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ফলে মোবাইল উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এরপর তারা ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের পাশের পুকুরে অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় জাল টেনে মোবাইল খোঁজা হয়। কিš‘ মোবাইলের কোনো হদিস মেলেনি। মোবাইল উদ্ধারের খবরে সেখানেও শতশত উৎসুক মানুষ পুকর পড়ে সমবেত হন। এক পর্যায়ে অভিযান সমাপ্ত করে চলে আসেন ডিবি ও পুলিশের অভিযানিক দল।
ঝিনাইদহের দুই পুকুরে ডিবির অভিযান নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ঝিনাইদহের গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, আদালতের নির্দেশে আমরা আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহের দুইটি পুকুরে অভিযান চালা”িছ। আমরা চেষ্টা করছি মোবাইল তিনটি উদ্ধারের। এই মোবাইলে ডিজিটাল এ্যভিডেন্স রয়েছে। মোবাইলগুলো উদ্ধার হলে মামলাটি আরো সমৃদ্ধ হতো।
তিনি বলেন, শিমুল ভুইয়ার জবানবন্দিতে ঝিনাইদহে কাজী কামাল বাবুর নাম উঠে এসেছে। তিনি মোবাইলে কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন, ম্যাসেজে ছবি আদান প্রদান করেছেন তার প্রমাণ রয়েছে। তাছাড়া বাবু নিজেই আদালতে মোবাইল তিনটি পুকুরে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন। ফলে সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় পারিপাশির্^ক সাক্ষ্য হিসেবে যা বলা হয়েছে সেটার জন্যই ঝিনাইদহে গ্যাস বাবুকে নিয়ে আসা।
ডিবি প্রধান হারুন আরো বলেন, মোটা দাগে বলা যায় এই হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত সবাই বাংলাদেশি। আমরা ইতোমধ্যে এই কিলিং মিশনের ৭ জনের মধ্যে আমরা ৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। ফয়সাল ও মুস্তাফিজ নামে দুইজন পলাতক রয়েছে। তারা নদী, সাগর, খাল আবার কখনো পাহাড়ে অব¯’ান করছে বলে প্রযুক্তি খাটিয়ে জানতে পেরেছি।
অভিযানের সময় ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট ফারুক আযম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া ইমরান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মো. শাহিন উদ্দীনসহ ডিবি, এনএসআই ও ডিএসবির কর্মকর্তারা ঘটনা¯’লে উপ¯ি’ত রয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আনা হয় গ্যাস বাবুকে। গত সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহে অভিযানের আদেশ দেন। পাশাপাশি বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনার আদেশ দেওয়া হয়। আদেশ মোতাবেক গত মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাবাদে গ্যাস বাবু জানিয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে আলামত নষ্টের জন্য দুইটি পুকুরে ফেলে দেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার দুটি পুকুরে অভিযান চালায় ঢাকা ডিবি ও ঝিনাইদহ পুলিশের যৌথ অভিযানিক টিম।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম