সংবিধানের কোথাও কোটার কথা নেই -ড. আসিফ নজরুল
০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ এএম
চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের সন্তানদের আন্দোলন। এই আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ জনগণের রুটি-রুজির সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে সবার সমান সুযোগের কথা বলা আছে সংবিধানে। কোথাও কোটার কথা নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনের নিয়ে গতকাল গণমাধমে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশে চাকরি নেই। এখন আপনি সারা বছর কষ্ট করে পড়াশোনা করে এসে যদি দেখেন আপনার জন্য দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেছে তখন আপনি তো আন্দোলন করবেনই। এখন কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের তো এই দেশের জন্য বিরাট অবদান আছে সেজন্য কোটা। তাদের সবিনয় বলতে চাই মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই অবদান আছে, অনেক বড় অবদান আছে। তাদের প্রতি আমরা সারা জীবন কৃতজ্ঞ। তাদের জন্য সরকার বিভিন্ন পদবি করেছে, বীরশ্রেষ্ঠ, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক। তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা আছে, তাদের জন্য বিশেষ সম্মান, বিভিন্ন সুবিধার কথা আছে। এই সুবিধা দেয়ার কথাই আমাদের সংবিধানের আর্টিকেল ১৫-তে বলা হয়েছে। এটাকে বলে সামাজিক নিরাপত্তা। সামাজিক নিরাপত্তা মানে হচ্ছে যারা আর্থিকভাবে দুরবস্থায় আছে তাদের জন্য রাষ্ট্র অর্থের সংস্থান করবে। যেটা মুক্তিযুদ্ধ ভাতা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সংবিধানের কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটার ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। চাকরি সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বিধান আমাদের সংবিধানে আর্টিকেল ২৯ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, চাকরি সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে সবার সুযোগের অধিকার সমান। শুধুমাত্র নারী শিশু এবং সমাজে যারা অনগ্রসর শ্রেণি আছে তাদের জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারবে। এটা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংবিধান নিয়ে যখন আলোচনা হয়, গণপরিষদ বিতর্কে কোনো জায়গাতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর শ্রেণি বলা হয় নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন বা যে সকল মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা বলা আছে। আর্টিকেল ১৫-তে উনাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন ভাতা দেয়া। কিন্তু চাকরি দেয়ার জন্য কোথাও বলা নেই। এমনকি গণপরিষদ বিতর্কে একবারও কোনো মানুষ এটি উত্থাপন করেনি। তো মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর দেখানো তো সংবিধানবিরোধী। ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর বলা তো তাদেরকে অপমান করা।
ড, আসিফ নজরুল বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বঙ্গবন্ধু একটি কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন এটা সত্যি। এটা ১৯৭৩ সালে উনি করেছিলেন ১৯৭২ সালের একটি আইন দ্বারা। তবে ওই আইনটিতেই বলা আছে, এটি অস্থায়ী আইন। এটা অস্থায়ী ওই সময়ের জন্য করেছেন যারা জাস্ট যুদ্ধ করে এসেছেন। মুক্তিযোদ্ধার ছেলেরা কী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিরা কী মুক্তিযুদ্ধ করেছে? তাহলে সংসদ সদস্যের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখেন। মন্ত্রীদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখেন। সামরিক বাহিনীর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখেন। একুশে পদকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখেন। সবই রাখেন। শুধু সরকারি চাকরিতে কেন?
তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ৬২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অরজিনিয়াল যে তালিকা ছিল সেটাকে এই সরকারের আমলে বাড়িয়ে তিনগুণ করা হয়েছে। এটা একটি দুর্নীতিবান্ধব ব্যবস্থা। সংবিধানবিরোধী ব্যবস্থা। এটা একটি চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা। সেটার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করবে না? তাদের সারা জীবনের যে চাকরির অধিকার, জীবনে যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অধিকার সেটাকে আপনি নিয়ে নেবেন আর তারা সেটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে না?
আসিফ নজরুল বলেন, আমি এ আন্দোলনের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল এবং আমি মনে করি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা যতভাবে পারি সম্মান করবো ওনাদের ভাতা আরও বাড়িয়ে দেয়া হোক। যেটা বঙ্গবন্ধু ওই সময় অস্থায়ী হিসেবে করেছেন। ওটা ওই সময় মিটমাট হয়ে গিয়েছে। অস্থায়ী জিনিসকে ৫০-৫২ বছর পর পুনর্বহন করতে পারেন না।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আদালতের বিষয়ে সরকারের কিছু করণীয় নাই এটা আমি মনে করি না। অ্যাটর্নি জেনারেলের যে অফিস আছে যাদের আদালতে সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে আপত্তি জানানোর কথা ওনারা তো আদালতের অংশ না ওনারা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের অংশ। সরকারের অংশ। উনারা যদি রিসার্চ করে হাইকোর্টের এই ডিসিশনের বিরুদ্ধে আপিলেট ডিভিশনে দাঁড়ান আমি মনে করি ন্যায়বিচারের স্বার্থে অবশ্যই আপিলের ডিভিশন ওনাদের কথা শুনবেন এবং হাইকোর্টের আদেশটি বাতিল করবেন।
তিনি বলেন, আমি ৩০-৩৫ বছর ধরে সাংবিধানিক আইন পড়াই। আমি সাংবিধানিক আইনের ওপর বিনয়ের সঙ্গে বলি, কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধার চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না। কোনোভাবেই কমনসেন্সে যায় না এটা। পৃথিবীর কোনো দেশে এই সিস্টেম নাই। অনেকে হয়তো বলে পৃথিবীর কোনো দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে ইন্দোনেশিয়াতে, ভিয়েতনামে, মেক্সিকোতে, আমেরিকাতে, জিম্বাবুয়েতে হয়েছে, আপনি একটা উদাহরণ দেখান যেখানে চিরস্থায়ীভাবে মুক্তিযোদ্ধার কোটা করে চাকরি দেয়া হচ্ছে। এই বিষয়গুলো ভালোভাবে রিসার্চ করে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস যদি আপিলেট ডিভিশনে দাঁড়ান তাহলে এটা আপিলেট ডিভিশনে টেকার কোনো কারণ দেখি না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে