বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই সময়
১০ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বেইজিংয়ে ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে আমরা দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মূল খাতগুলো বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করে বলেন, আমরা আমাদের অবকাঠামো, জ্বালানি এবং লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। চীনে তার চারদিনের দ্বিপাক্ষিক সফরের দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বাংলাদেশের সম্ভাব্য খাত আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর পরিমাণে বিনিয়োগ করার জন্য চীনা উদ্যোক্তাদের এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি এবং সিসিপিআইটি চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং, শাংরি-লা সার্কেল, বেইজিং-এ এই সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি চীনা বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে। তিনি বলেন, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং চীনের সাথে ক্রয়-ব্যাক ব্যবস্থাসহ কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে যেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং আতিথেয়তা খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। একই সঙ্গে আমি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্বেষণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের আরও উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, আমরা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। আমরা ডেরিভেটিভ পণ্য প্রবর্তনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, যা আমাদের আর্থিক বাজারকে আরও বৈচিত্র্য ও প্রসারিত করবে। বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগকে উন্মুক্ত বাহুতে আলিঙ্গন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সক্রিয়ভাবে আইসিটি সেক্টরের প্রবৃদ্ধি জোরদার করছে, স্টার্টআপদের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে, টেক পার্কে বিনিয়োগ করছে এবং উদ্ভাবনা ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করে এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্ব মঞ্চে তাদের অবস্থান তৈরি করছে এবং আমরা আপনাদের এই আকর্ষণীয় যাত্রার শরিক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সবুজ প্রযুক্তিতে অসংখ্য সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও চীনের বেশ কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিনিময় হয়েছে। চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টংঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম। বাংলাদেশ ও চীনের কয়েকশ’ ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তা এই সম্মেলনে যোগ দেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের যুক্তি ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথের সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দক্ষিণ এশীয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এবং পূর্ব এশীয় প্রবৃদ্ধি সার্কিটের সংযোগস্থলে রয়েছি। আমাদের সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর এবং স্থল পথগুলোকে আন্তর্জাতিক মান পূরণের জন্য ক্রমাগত উন্নীত, দক্ষ এবং নির্বিঘ্ন লজিস্টিক নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এর সংলগ্ন বাজারসমূহে সমগ্র অঞ্চলের জন্য অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি দেখতে পারেন যে বাংলাদেশ আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে লাভজনক করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা প্রদান করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নিচে অনেকগুলো সেবা প্রদান করে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এস্ইজেডএস) প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিটি অঞ্চল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট পাঁচটি দেশের জন্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, এছাড়া সরকার ব্যবসায়িক কাজকর্মকে আরো সহজ করে তুলতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আরও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশ দেয়ার জন্যে একাধিক সংস্কার কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, তার সরকার ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে মসৃণ ও দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, সরলীকৃত পদক্ষেপ ও পদ্ধতি তৈরি, স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং উন্নত অবকাঠামো তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে স্থান করে দেওয়া। বাংলাদেশ তাই বিশ্বমানের তথ্য-প্রযুক্তি-ভিত্তিক, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক সিস্টেম নির্মাণের মধ্যদিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি প্রথম লজিস্টিক নীতি প্রণয়ন করেছে। শেখ হাসিনা তার মতামতে বলেন, নীতিমালায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সড়কপথ, রেলপথ এবং সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তারা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে সংযোগসহ বাংলাদেশকে একটি প্রাণবন্ত লজিস্টিক কেন্দ্রে পরিণত করতে ডিজিটাল এবং ভৌত অবকাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য প্রদর্শনের জন্য আমরা পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত তৃতীয় টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঢাকা মেট্রো-রেল ব্যবস্থার মতো মেগা-প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়েছি এবং সম্পন্ন করেছি। এছাড়া দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সরবরাহের অর্জনও আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগীতামূলক মজুরিতে ব্যাপক দক্ষ শ্রমিক রয়েছে।পাশাপাশি বাংলাদেশে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার গোষ্ঠী রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমনকী দূরবর্তী এলাকায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছি। বর্তমান সরকার পর্যায়ক্রমে ৩৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে এবং কিছু প্রতিশ্রুতিশীল খাতে বিদেশী বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা আমাদের ভিশন।একই সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল এর তরুণ ও গতিশীল কর্মীবাহিনী। তিনি বলেন, প্রায় ২৭ বছরের গড় বয়সী বাংলাদেশের জনসংখ্যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শক্তি, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং দৃঢ় কর্ম নীতি দ্বারা চিহ্নিত। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং উচ্চ শিক্ষার উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের কর্মশক্তির সক্ষমতা বাড়াতে ক্রমাগত কাজ করছি। আমাদের যুবকরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এইভাবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অর্থ হল দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকের বিশাল অংশকে পাওয়া যা উভয়েই সাশ্রয়ী ও সক্ষমতাপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের সবচেয়ে বড় অংশীদার। দেশটির সাথে বছর বছর আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে। তবে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা করতে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, চামড়াজাত, পাটজাত ও কৃষিজাত পণ্যসহ চীনে আরও পণ্য রপ্তানি করতে আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পে চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই, যা আমাদের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ চীনা কোম্পানি গুলোকে বাংলাদেশি কোম্পানি গুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গঠনে উৎসাহিত করছে। এই সহযোগিতা উভয় পক্ষের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাজারে প্রবেশকে সহজতর করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের দক্ষ কর্মশক্তি এবং একাডেমিক দক্ষতা ব্যবহার করে চীনা কোম্পানি গুলোকে বাংলাদেশে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। তিনি বলেন, আমরা যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকাই তাহলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অংশীদারিত্বে সীমাহীন প্রতিশ্রুতি লক্ষ্য করবো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশ একসঙ্গে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত তৈরি করতে পারে যা আমাদের দেশ ও জনগণ উভয়কে উপকৃত করবে। তিনি বলেন, আসুন আমরা একটি শক্তিশালী, আরও সমৃদ্ধ এবং আরও সংযুক্ত বিশ্ব গড়তে একসাথে কাজ করি। বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আগ্রহের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে শক্তিশালী ও স্থায়ী বন্ধুত্বের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমর্থনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি বলেন, চীন আমাদের অবকাঠামো প্রকল্প, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং আমাদের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাংলাদেশ অল্প কয়েকটি দেশের একটি যা মহামারী চলাকালীন সময়েও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পেরেছিল। এখন ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনা বলেন, এই উত্তরণ বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষমতাকেই তুলে ধরে। শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, গড়ে যা ৬.৭ শতাংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালে ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মহামারীর ঠিক আগে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে পৌঁছেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২,৭৮৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত দুই দশকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর রপ্তানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং এটি ২০২২ সালে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের নেট এফডিআই পেয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ রেমিট্যান্স-অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি এখন বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের স্বনামধন্য থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো অনুমান করেছে, বাংলাদেশ ২০৩০-এর দশকের প্রথমার্ধে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, আমার সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।
১৬ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর : বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ১৬টি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও চীনের বেশ কয়েকটি বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে দুই দেশ। চারটি সমঝোতা স্মারকের অধীনে মোট ৪৯ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ, সৌরবিদ্যুৎ, ফিনটেক এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে চীনা কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ ও চীনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে- নগদ এবং মোবাইল ফোন নির্মাতা চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল আর্থিক প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বমূলক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হুয়াওয়ে। এলক্ষ্যে চীনের ওই বৃহৎ কোম্পানিটির ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা রয়েছে। সমঝোতা স্মারকে দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ডেক্স বাংলাদেশ টেক লিমিটেড এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের (বাংলাদেশ) মধ্যে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তৃতীয়ত এই সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে চীনা কোম্পানি চায়না কেমিক্যাল সিএনসিসির সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের দেশবন্ধু ও চেমটেক্স গ্রুপ। মোংলায় প্রায় ৩৩ একর জমিতে বৃহত্তম পিএসএফ, পিইটি বোতল এবং টেক্সটাইল গ্রেডের কারখানা স্থাপনে প্রায় ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীনা কোম্পানিটি। এছাড়া চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন (সিআরবিসি) এবং নিংবো সিক্সিং কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের অধীনে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক্ষেত্রে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি উৎপাদনেও বিনিয়োগ করবে চীন। এক্ষেত্রে ‘বিলিয়ন ১০ কমিউনিকেশনস লিমিটেড’ এবং সিএইচটিসি (হেনইয়াং) ইন্টেলিজেন্ট ইভি (ইলেক্ট্রনিক ভেহিক্যালস) কোম্পানি লিমিটেড বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। সমঝোতায় সিলেটে একটি সোলার পার্ক স্থাপনের বিষয়ে স্মারকে স্বাক্ষর করেছে ‘বিলিয়ন ১০ কমিউনিকেশনস লিমিটেড’ এবং নিংবো সান ইস্ট সোলার কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করবে চীন। ‘বিলিয়ন ১০ কমিউনিকেশনস লিমিটেড’ এবং হোশাইন সিলিকন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পে বিনিয়োগের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। ‘বিলিয়ন ১০’ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্জ্য লুব্রিকেন্ট তেল পুনরুদ্ধার এবং পরিশোধন শিল্পে বিনিয়োগের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে জুহিয়া নিউ ম্যাটেরিয়াল টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড। ঢাকাকে মেগা সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে যে প্রকল্প রয়েছে সেখানেও বিনিয়োগ করবে চীন। দেশটির হংজিং ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং ইবি সলিউশন লিমিটেড এই প্রজেক্টে বিনিয়োগের জন্য সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া ইবি সলিউশন লিমিটেডের সঙ্গে চীনের শেরিং নিউ এনার্জি টেকনোলজি লিমিটেড বাংলাদেশে স্মার্ট কোল্ড চেইন লজিস্টিক সলিউশন সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। কারিগরি ও আর্থিক বিনিয়োগ সহযোগিতার সমঝোতার স্মারকের আওতায় নদী ও সড়কপথে সিএনজি পরিবহনের জন্য বাংলাদেশে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। এ বিষয়ে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি এবং শিজাঝুং এনরিক গ্যাস ইকুইপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া কাগজ খাতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উন্নয়নে বিনিয়োগের কথা রয়েছে। চীনের জিবো জিনহুয়াটেং পেপার মেশিনারি কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের নিটল নিলয় গ্রুপের মধ্যে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া নিটল নিলয় গ্রুপের সাথে যৌথভাবে টিবিআর টায়ার প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে চীনা কোম্পানি ঝোংঝো ডংফেং মিড-সাউথ এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি। চীনা কোম্পানি শাংডুং সুনাইট মেশিনারি এবং নিটল নিলয় গ্রুপের সাথে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি খাতে বিনিয়োগ করবে চীন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীন উভয়ই একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। চীনা কোম্পানি ডালিয়াম হুয়াহান রাবার অ্যান্ড প্লাস্টিক যন্ত্রপাতি খাতে নিটল নিলয় গ্রুপের সাথে বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। সর্বশেষ যে বিষয়টিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে দু’দেশ তা হচ্ছে- লিথিয়াম ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যানবাহন খাত। এতে বিনিয়োগ করবে চীনা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জেডপি টেকনোলজি (আনহুই) কোম্পানি লিমিটেড।
তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনা বিপ্লবীদের প্রতি শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা : তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনা বিপ্লবের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বেইজিং সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার তিয়েনআনমেন স্কয়ারে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বিপ্লবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন শেখ হাসিনা। এসময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং চীনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম দেয়।
এদিকে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে আজ বুধবার সকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কোথা রয়েছে। এই দিন বিকেলে একই স্থানে আলোচনা হবে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার বিকেলে বেইজিং পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর ৯১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। এই সফরে ৫৯ সদস্যের আলাদা একটি ব্যবসায়ী দলও চীন সফর করছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফরে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সফর শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ১১ জুলাই দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে দুই দেশের সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বহিষ্কার
হোক না সবার সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি, কর্মক্ষেত্রে আসুক গতি
জামিনে এসে হত্যা মামলার সাক্ষীসহ ৫ জনকে কুপিয়েছে প্রধান আসামি
সীমান্তে ভারত উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে: ইসলামী আন্দোলন
কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬০
প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক হবে
কাঁটাতার পেরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কুড়িগ্রামে ভারতীয় গৃহবধূ
জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল জিয়া পরিবার : মীর হেলাল
স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে চায়: আমিনুল হক
গুলি করা পুলিশের শাস্তি নয়, চিকিৎসকের গ্রেফতার ফ্যাসিবাদের উদাহরণ - ডা. রফিকুল
ফেনীতে সিক্সার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ছাগলনাইয়া উপজেলা দল চ্যাম্পিয়ন
দৌলতপুর সরকারি প্রমোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
গোপালগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করণে জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রম আয়োজন
সৈয়দপুরে শহিদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন
বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত
স্বভাবী চোরের শাস্তি ইসলামেই নির্ধারিত - পীর সাহেব চরমোনাই
‘সীমান্তে গন্ডগোল শুরু হয়েছে, জীবন বিপন্ন হলেও দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখবো’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী: সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়
আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজ তাওহিদুলের দেশত্যাগ
লামায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষীকি পালিত